স্বর্ণলতা!
কি অপরাধ ছিল আমার?
আমি তো নাম না জানা এক ঝুপড়িবৃক্ষ
মাত্রই ছিলাম কোন এক পরিত্যক্ত  জঙ্গলে।
পরিচয়হীন গোত্রের একেবারেই গোবেচেরা বৃক্ষ।
তুমিই তো আমাকে আবিষ্কার করলে প্রথম,
আশ্রয় নিলে আমার একেবারে মগডালে।
ভীষণ খুশি হয়েছিলাম তোমার আগমনে।
তোমার চোখ ধাঁধাঁনোরূপ আর  মোহনীয়
লাবণ্যতা আমাকে মোহিত করেছে খুব।
তোমার কোমলাঙ্গের আলতো সোহাগ দারুণ
উপভোগ করেছি একটা সময়।
আমি ছিলাম তখন তোমাতেই উন্মুখ।
আমার কুঁড়েঘরের মত এক চিলতে ডালপালা
উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম তোমার সমীপে।
আমার উষ্ণ আতিথেয়েতা বুক পেতে
নিয়েছিলে তুমি, কৃতজ্ঞতায় বলেছিলে
"তুমিই আমার শেষ আশ্রয়, তুমিই আমার সব"।
তোমার জলজ চোখের আহাজারি আজও
স্পষ্ট আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে।
আমার স্বপ্নালু চোখ তোমার চোখে বিভোর তখন।
তোমার স্পর্শের প্রত্যাশায় শিরশির করতো  
শিরা-উপশিরা।


আমার ঐ একটাই লোভ আর ঐ লোভটাই
আমার কাল।
আমার উদারতাকে পুঁজি করে তুমি ছেঁয়ে
নিলে আমার  সমস্ত অবয়ব।
আমার শিরা ধমনী হৃৎপিণ্ড এখন তোমার দখলে।
আমি অস্তিত্ব হারালাম, তোমাতে অভ্যস্ত
হলাম কালের আবর্তে।


আমি আশ্চর্য হই, মৃত্যুর দুয়ার থেকেও  
তোমাকে দেখি অপার বিস্ময়ে!
হায়!
তুমি তো শেকড়, কাণ্ড, পত্র বিহীন একটা
ভাসমান পরগাছা মাত্র, যাকে ভালোবেসে
বুকের জমিনে আশ্রয় দিলাম মাত্র ক'দিন আগে,
অথচ আজ তুমিই হলে আমার মৃত্যুর দূত?


রাক্ষসী,
তুমি বানিজ্যের নামে  শাসন,  
শাসন থেকে শোষণ করতে অনুপ্রবেশ
করেছিলে আমার সাম্রাজ্যে ইংরেজ রূপে।
গলা জড়িয়ে ধরে আদরের ছলে টুটি চিপে
মারতে এসেছ আমায়।
যখন বুঝলাম, তখন অবধারিত  মৃত্যুই ছিল
আমার তোমার দেয়া প্রেমার্ঘ প্রতিদান।
শত চিৎকারেও মুক্তি মিলেনি আমার।
তাই যাবার আগে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু
দিয়ে লিখে গেলাম তোমার ছলনার নেপথ্যে
আমার অব্যক্ত আত্মকথার একটা খসড়া
সুইসাইড নোট।
------------+++++++-------------