আমরা যখন পথে বের হই
তখন প্রতিবেশীরা লেফ-কম্বল গায়ে দিয়ে আরাম করে গভীর স্বপ্ন- ঘুমে মগ্ন থাকে।


প্রতিবেশী চিন্তাও করতে পারে না এ শীতের রাতে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে "কেউ" পথে বের হতে পারে!


আমার কোনো এক স্বজন আমার কাছে গতকাল রাতে জানতে চেয়েছিল, আমি এখন কোথায়?
জবাবে বলেছিলাম, কুয়াকাটা থেকে পটুয়াখালী হয়ে ঢাকাগামী লঞ্চে আছি।


আজ সেই প্রিয়জন জিজ্ঞাসা করলো এখন কই?
বলেছি, ফকিরাপুল থেকে কক্সবাজারগামী বাসে কুমিল্লা পার হয়েছি।


জানতে চাইলো, আগামীকাল কোথায় যাবেন?
উত্তর দিয়েছি, কক্সবাজারের মহেশখালী এবং টেকনাফ উপজেলায় দুইদিনের প্রোগ্রাম শেষ করে ঢাকার দিকে রওয়ানা করবো।


দুইদিন পরে তাঁর প্রশ্ন ছিল এ রকম " নিশ্চয়ই গাড়ীতে, ঢাকা যাচ্ছেন"?
আমি বললাম, না; বিছানায়।
"অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছি"।


ও চিন্তিত হয়ে বললো, এখানে কি করবেন?  বিশ্রামের জন্য বাড়ি যান!


বললাম,  চমৎকার কথা! অনেক দিন হলো বাড়ী যাওয়া হয়নি, এবার যাওয়া উচিত!


জানতে চাইলো, কয়দিন হলো বাড়ী যাননি?
বললাম, একশত নয় দিন...


তিনদিন পরে আবার সেই জিজ্ঞাসা, কোথায়?


বললাম, গাড়ীতে; মৌলভীবাজার থেকে ঢাকা যাচ্ছি।


সেই প্রশ্ন, প্রোগ্রাম ছিল?


বললাম, না; বাড়িতে ছিলাম, তিনদিন।


কি করলেন?
এক বোন সামাজিক জুলুমের শিকার হয়ে অসুস্থ ছিলেন; ইন্তিকাল করেছিলেন।
জানাজা পড়েছি, তাঁর অসুস্থতায় তাঁর খোঁজ-খবর রাখিনি; এজন্য প্রাণভরে দুয়া করেছি।


অতপর!
বড় ভাইয়ের বিয়ের দিন নির্ধারণ করে বাড়ী থেকে রাতে বের হয়েছি।


বললো, একটি প্রশ্ন ছিল!
বললাম প্রশ্ন ছিলো না; এমন কখনো ছিলো?


হা হা রিয়েক্ট দিয়ে বললো, এভাবে আর কতদিন?


বললাম! একটি মুক্ত ভোর, যে ভোরে অসুস্থ বোনের চিৎকার শুনবো না।
একটি সুন্দর সোনালী সকাল, যে সকালে পত্রিকায় খুন- গুম- ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হবে না।
একটি স্বপ্নের সমাজ, যে সমাজে বিয়ে এবং বিপ্লব নিয়ে যুবকেরা চিন্তিত এবং জাগ্রত থাকতে হবে না।
ততদিন, ততদিন এবং এভাবে অনন্তদিন...


পরবর্তী প্রশ্ন, মা- বোন কিছু বলে না?
বললাম, তাঁরা জানে, একটি সোনালী সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে তাঁদের ছেলে-ভাই যাযাবর হয়েছে।
হয়তো তাঁরা বুঝে নিয়েছে,  এ ভাই শুধু আমাদের না, সকলের ভাই। সবার সন্তান।


ভোরে; প্রতিবেশী তখনও ঘুমের ঘোরেই স্বপ্নে বিভোর থাকে আর আমরা স্বপ্ন বাস্তবায়নে সীমান্তের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়াই যাযাবর হয়ে বীর বেশে বাংলাদেশে।


ইসলাম হোটেল, ইসলামবাগ
দুই হাজার বিশ বারো দশ
রাত বারোটা দশ।