=== ডিপারচার লাউঞ্জ=====
কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে যখন গাড়ীটা দ্রুত চলছে,
মনটা জানি কেমন হয়ে গেল, কি যেন খামছে ধরেছে ।
আর একটুতেই পৌঁছে যাব, আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে,
পাশে বসে মা, পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন আমার সাথে।
এবারের সফর একটু বেশ লম্বা, অনেকদিন,
মায়ের মন মানেনি, ছাড়তে আমায় এটুকু সঙ্গহীন।
বাসা থেকে বিমানবন্দর যতক্ষণ কাছে থাকা যায়,
পাশে বসে ছেলের ঘ্রাণে মমতার দৃষ্টিতে চোখ জুড়ায়।
অন্তরে লুকানো গভীর ক্রন্দন যেতে নাহি দেব হায়,
বুকভরা কষ্টে যেতে দিতে নাহি চায় , তবু চলে যায়। 


পৃথিবীর এক আশ্চর্য জায়গা, এসব বিমানবন্দর,
দূঃখ-হাসির সহাবস্থান  একই সাথে বাহির আর অন্দর।
একদিকে ডিপারচার লাউঞ্জ, ভিতরে ছিমছাম সাজানো,
বাহিরে প্রিয়জন বিদায়ের কান্না, আঁখি জলে ভেজানো।
অন্যদিকে এরাইভেল লাউঞ্জ, ভালোবাসার উষ্ণ আলিঙ্গনে,
ফুলের তোড়ায় হাসির বন্যা, আগত স্বজন দের সম্ভাষণে।
আচ্ছা যদি থাকতো একটা এয়ারপোর্ট শুধু এরাই্ভেলের,
তাহলে খুব মজাই হতো, তাই না মা? হাসি থাকতো সকলের। 
মা উদাস হাসেন, জিজ্ঞেস করেন, বাবা, বলতো ভেবে,
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিপারচার লাউঞ্জ কোথা এ'ভবে?
এ কোন এয়ারপোর্টে?  আছে কোন দেশ-মহাদেশে?
ওঁ-ম, লন্ডনে, হিত্রোতে হয়তো হবে, বললো ছেলে হেসে।
মা আবার উদাস হেসে বলেন, পারলি'নারে দিতে উত্তরটা,
শোন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিপারচার লাউঞ্জ, আমারই ছোট্ট বাসাটা। 
ব্যথিত মা বলে, বললে এটা,  কি তবে ভুল বলা হবে? 
এখন নয়, বুঝবি রে তুই সে সময়ে, বাবা হবি যবে।
বলেই মা জানালা দিয়ে বাহিরে অপলক তাকিয়ে রয়,
কোথায় যেন হারিয়ে যান, নির্বাক! গালে অশ্রুধারা বয়।


মনে পড়ে আমাদের, দু'রুমের ছোট্ট সে বাসা,
আমরা ছয় ভাইবোন, একসাথে ছিলাম ঠাসা। 
চিৎকার, চেঁচামেচি, মারামারি চলতোই সারাক্ষণে,
দেখিনি কক্ষনও মাকে বিরক্ত হতে, আমাদের জ্বলাতনে।
মা আমাদের রাখতেন আগলে, আটকে সারাদিন ধরে,
বাইরে বা স্কুলে গেলে, অধীর অপেক্ষায় দাড়াতেন দুয়ারে। 


আজ এক এক করে ভাইবোন, সবাই গেছি বাসা ছেড়ে, 
যে যার মতো গেছি চলে, নিজ কাজ বা নুতন সংসারে। 
মা’য়ের বাসার, সদর দরজার লোহার কব্জায়,
এখন নাকি জং ধরে গেছে, স্বীয় অবহেলায়।
মা, ও'তে আর তেল দেননা, দরজা খোলার শব্দটা শুনতে,
তার খুউব ভাল্লাগে খোলার শব্দ, কল্পনায় দেখে ঘরে ছেলে ঢুকতে।
দরজার খোলার শব্দ হলেই, রাখেন মা করে কান খাঁড়া, 
এই বুঝি মা-আ বলে ডাকলো কেউ! মনে দেয় নাড়া। 


ক্ষনেকপরে আমার দিকে ফিরে ক্ষীনকন্ঠে বলেন, "বাবা, বাবা’রে যদি পারিস,
সব মা’য়ের বাসার ডিপারচার লাউঞ্জগুলো চিরতরে বন্ধ করে দিস।
পৃথিবীর কোন মা কক্ষনো যেন, ছেলেছাড়া একা না থাকে",
কত ব্যথা, তার কথায় হৃদয়ের কান্না, আঁখিজল পড়ে বুকে।


-জাহিদ চৌধুরী  
২৯ জুন ২০২১