স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার


জাহিদ হোসেন রনজু
-----------------------®


একদিন এক শকুন শাবক
পিতার কাছে এসে,
ধরলো বায়না মাংস খাবে
পেটটা পুরে ঠেসে।


অন্য কারো মাংস নয়তো
নরমাংস খাবে,
শকুন বলে-'ধৈর্য ধরো
নরমাংসই পাবে।'


'না না বাবা আজই খাবো
আজই আমার চাই,
সন্ধ্যা নামার আগেই যেন
মাংস খেতে পাই।'


'আচ্ছা বাছা সবুর করো
আসছি আমি ঘুরে'-
এই না বলে ফুড়ুৎ করে
শকুন গেলো উড়ে।


খানিক বাদে শকুন ফিরে
গরুর মাংস মুখে,
তাই না দেখে শকুন শাবক
কেঁদে উঠে দুখে।


'চাই না আমি গরুর মাংস
নরমাংস চাই,'
বাবা বলে- 'সবুর করো
করো না খাই, খাই।'


এই না বলে গরুর মাংস
শকুন রেখে নীড়ে,
গেল উড়ে আবার কোথায়
ডানা মেলে ধীরে।


সময় গড়ায়, দুপুর হলে
ডানাতে ভর দিয়ে,
আসলো নীড়ে শকুন ওড়ে
শূকর মাংস নিয়ে।


তাই না দেখে শকুন শাবক
কেঁদে উঠে জোরে-
'চাই যে শুধু নরমাংস
খেতে পেটটি ভরে।'


শকুন বলে - 'ওরে বাছা
ফুঁসছিস কেন রাগে,
নরমাংস ঠিকই খাবি
সন্ধ্যা হওয়ার আগে।'


এই না বলে দু'পায়ে দুই
মাংস খণ্ড ধরে,
মুচকি হেসে ডানায় ভেসে
শকুন গেল ওড়ে।


চতুর শকুন চুপিসারে
সবার অগোচরে,
আসলো রেখে মাংস দুটি
মন্দির-মসজিদ ঘরে।


গরুর মাংস মন্দিরে আর
শূকর মসজিদখানায়,
রেখে যত্নে শকুন বাবা
ফিরে আসে বাসায়।


অল্প কিছু পরেই সেথায়
দাঙ্গা বেঁধে গেল,
লক্ষ লক্ষ মানুষ মরে
ধর্ম রক্ষা পেল।


এই সুযোগে শকুন যুগল
বাপ-বেটাতে মিলে,
গল্প করে খাচ্ছে বসে
নরমাংস গিলে।


খেতে খেতে বাচ্চা শকুন
বাপকে প্রশ্ন করে-
'কম সময়ে এত মানুষ
কেমন ভাবে মরে?'


'আমার তো নাই শক্তি এত
মানুষ মারতে পারি,
স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাই তো
লাগাই মারামারি।


মানুষ দিয়েই মারছি মানুষ
ধর্মটা হাতিয়ার,
ধর্ম ছাড়া স্বার্থসিদ্ধির
নাই যে সহজ পথ আর।'


শকুন শাবক বাপকে বলে
ঠোঁট দুটি তার মেলে-
'বলো না বাবা এমন বুদ্ধি
কোথায় তুমি পেলে?'


'স্বার্থের জন্য কিছু মানুষ
হয় বড় হারামী,
'তাদেরই কাছ থেকে বুদ্ধি
পেয়েছি যে আমি।'


স্বার্থসিদ্ধির জন্য এরা
মোক্ষম দুই হাতিয়ার,
ধর্ম এবং রাজনীতিকে
করে যে ব্যবহার।


ধর্ম হলো বিভেদ সৃষ্টির
সহজতর উপায়,
একটুখানি উসকানিতেই
রক্তগঙ্গা ভাসায়।


নরমাংস চাইলে তুমি
অল্প সময় দিয়ে,
কম সময়ে নরমাংস
পাবো কোথায় গিয়ে।


তাই তো আমি সহজ পথটাই
ধর্ম বেছে নিলাম,
ধর্ম দিয়ে মানুষ মেরে
নরমাংস খেলাম।


ধর্মান্ধের মাথায় রেখে
কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার,
ধর্ম হলো স্বার্থবাদীর
রাজনৈতিক হাতিয়ার।'


-----------------------------
২৭ এপ্রিল ২০২১, মিরপুর, ঢাকা
(কোন এক রূপক গল্প থেকে কবিতায় রূপ দেয়া হয়েছে)