আমার বলবার মতো তেমন কোন
বিশ্বপাঠ নেই।
লাসভেগাসের লাস্যময়তা, প্যারির পরিযায়ী সৌন্দর্য
কিংবা
ভেনিসের ভাসমান মুগ্ধতা ; উল্লেখযোগ্য কোন মুহূর্তের স্মৃতিপাত্র
হস্তমজুদ নেই।
কেবল কিছু নগণ্য মুহূর্তে গেঁথে আছি আমি।
একবার কার্তিকের মাঠপোড়া পূর্ণিমা রাত্তিরে- ধানিজমির জল জমা
ডোবায় আটকে পড়া
বাইলা-সরপুঁটি-ভাঁটা মাছেদের জলঘোলা করা জটালা দেখে
জড়ো হয়েছিল গোটাপাঁচেক জোস্না-যুবতী।
তারা পরস্পরের সাথে মেতে উঠেছিল বৌদ্ধিক সমালোচনায়-
"মাছেরা এবার দরপতন সামলে নিয়েছে"।
এইসব ধুলোবালি শাঁখা-শামুকে গেঁথে আছি আমি !


যেসব দৃশ্যাবলীতে ভালো হয়ে যায় দৃশ্যের অসুখ ; দৃশ্যাতীতের
বিভ্রম ;
সেইসব সিকি-আধুলিতে গেঁথে গেছি একাকার!
সেবার "সারেং মাঝির" নায়ে অনেক অলস জলপথ যেতে যেতে
নৌকোর তলায় ভেঙে পড়া
ছোট ছোট কোমল ঢেউয়ের শব্দে প্রথম শিখেছিলাম
জলগোলাপের ছন্দবোধ মাত্রাজ্ঞানে নয় ; সুরাবেগে মাপতে হয়।
অথবা
উঠোনের ঘাসে রোদ্দুর মাখা সেই প্রজাপতিটি-
আস্ত একটা বিকেলকে খুচরো পয়সার মতো বুকপকেটে নিয়ে
যার পিছু পিছু
বিপজ্জনক ভাবে প্রায় পৌঁছে গেছিলাম গোধূলির নামফলক
পেরিয়ে গলি অব্দি।
পৌষের যে রাতে-
পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেজুর রসের খোঁজে নেমে
কুয়াশাকে ভেবে নিয়েছিলাম কামার্ত কুমারীর প্রথাবিরোধী
আগুনপাঠ।
কিংবা
অাকৈশোর চেষ্টা-তদবিরের পর-
মায়ের কাছ থেকে অনুমতি মেলায় সেই প্রথম যেবার
পর্বাসীর সাথে ধান পাহারার জন্য নির্মিত টুনি-বাঁশ-খড়ের "কুইর্রায়"
একটি রাত প্রায় নির্ঘুম কাটিয়ে
সিক্ত সকালে আমার মনে হয়েছিল- "মা আমার পৌষপাঠ শেখে নাই !"
এবং সে রাতে আমি জেনে গিয়েছিলাম-
পঙ্খিরাজের রূপকথা থেকে নেমে আমি  সবেগে পেরিয়ে যাচ্ছি
আমার কৈশোরের দিগ্বলয়।
এইসব সামান্য দৃশ্যে গেঁথে আছি জলবাংলার আধবুড়ো আমি !


একটি ভোরের দৃশ্যে,
একটি চালতে ফুলের দমবন্ধ মুগ্ধতায়,
কাঞ্চন মামার পুঁথিপাঠের পাঠমুগ্ধ সন্ধ্যায়,
আমার পিতামহী'র গপ্প বলা দরদি কণ্ঠে এবং দরাজ হাতের
স্মৃতিকাতরতায়,
একটি সূর্যাস্তের একটুকরো জলভেজা দৃশ্যানুভূতিতে,
এইসব কিছু সামান্য মুহূর্তে গেঁথে আছি!


কিছু নগণ্য মুহূর্তে ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বরপুত্রের মতো গেঁথে আছে জলের সন্তান !


>>>>>>>>>>>>>>>>>> ঝালকাঠী।।
>>>>>>>>>>>>> ৩০/০৬/২০১৫।।