হে মহামান্য রাষ্ট্রপতি,
হে মহামহিম জনগণ,
আজ আমি আমাকে রাজদ্রোহী ঘোষণা করছি !
কেননা আমি প্রত্যাখ্যান করি
সেই সমাজব্যবস্থাকে- যে সমাজ বিশ্বাস করে প্রেমের চেয়েও শুদ্ধতম কোন
প্রার্থনা থাকতে পারে !
আমি অস্বীকার করি সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে,
যে রাষ্ট্রযন্ত্র অক্ষমের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে- একপাল অসভ্য মৌলবাদী আততায়ী
চাপাতি দিয়ে একের পর এক খণ্ডবিখণ্ডিত করছে
রোদ্দুরের হৃদপিণ্ড !
আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি সেই শাসনব্যবস্থাকে- যেখানে সংসদ অধিবেশন
শুরু হয় রবীন্দ্রসংগীত ভিন্ন অন্যকোন প্রার্থনা দিয়ে।
এবং যেখানে সংসদের প্রতিটি সদস্যকে গীতাঞ্জলিতে হাত রেখে শপথ পড়ানো হয় না।
এবং অনিবার্য ভাবে পরিত্যাগ করছি সেই অর্থব্যবস্থাকে- যেখানে বাজেট
কবিতাবান্ধব না হয়ে হয়ে যায় কাকবান্ধব !
আমি এই নষ্ট সিস্টেমের সব কিছুকে অস্বীকার করছি!
যে রাজনীতি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়া ভ্রষ্টকে পুরষ্কৃত করে,
এবং যে রাজনীতি রাজাকার আর
ধর্ম-কসাইয়ের লেজুড় ধরে চলে, সেই রাজনীতিকে মুর্দাবাদ !
অামি অভিশাপ দিচ্ছি সেই পুঁজিবাদী শিক্ষাব্যবস্থাকে- যা প্রকৃত মানুষ গড়ার পরিবর্তে
তৈরি করে মেরুদণ্ডহীন স্বার্থপরায়ণ একপাল আদমসুরত।
লানত সেইসব নষ্ট নেতা-নেত্রীদের-
যারা পবিত্র ধর্মকে পারলৌকিক মুক্তিমন্ত্রের পরিবর্তে ব্যবহার করে ক্ষমতার আদিমতম সিঁড়ি হিসেবে !


তাই আমি আমাকে রাজদ্রোহী ঘোষণা করছি!
হে মহামান্য রাষ্টপতি,
হে মহামহিম জনগণ,
আমাকে ফাঁসি দিন !
কেননা জীবিত থাকলে আমার কলম বঙ্গোপসাগর থেকে চেতনা পর্যন্ত জ্বালিয়ে
দেবে দ্রোহের দাউদাউ দাবানল!
আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ !
আমি স্বীকার করছি,
আমি এই বস্তাপচা সিস্টেম মানি নি !
এবং প্রতিবাদে আমি উচ্চকিত করেছি আমার কলম।
আমি অস্বীকার করছি না যে, ইতিহাস এই ঔদ্ধত্যকে রাজদ্রোহ বলে!
তাই আমি আমার ফাঁসি চাই !
আমার ফাঁসি ভিন্ন নিরাপদ নয় কেউ !
আমাকে ফাঁসিতে না ঝুলালে,
সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে আমরণ অনশনে বসবে একটি কালো পতাকা, প্লাকার্ডে "মানি না"
স্লোগান লিখে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে থাকবে অগনিত রক্তজবা,
অবিক্রীত পড়ে থাকবে দোকানের সব গোলাপ !
আমাকে ফাঁসি না দিলে-
উদ্যত বুলেটের সামনে বুক পেতে দেবে গোটা মানচিত্র, রেসকোর্স ময়দান আবার
ভরে উঠবে কবিতায় কবিতায় ; এবং একজন কবির তর্জনী আবৃত্তি করতে থাকবে প্রতিরোধের কাব্যসমগ্র !  


তাই আমাকে ফাঁসি দিয়ে নিচ্ছিদ্র করুন লক্ষীন্দরের লৌহ-বাসর !
আপনাদের কাছে আমার শেষ ইচ্ছে,
ফাঁসির মঞ্চে আমদানিকৃত "ম্যানিলা রোপে"র পরিবর্তে রাখা হউক সকালের
সদ্য-ঝরা বকুলের একটি লাজনম্র মালা ;
কেননা কবিরা ফুলেই অপেক্ষাকৃত স্পর্শকাতর !
সমবেত জনগণ আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে মুষ্ঠিবদ্ধ করুক করতল- "রাজদ্রোহীর ফাঁসি চাই! "
আমি চাই
আমার জানাজায় কোন মানুষ নয় ; কাতার দিয়ে দাঁড়াক একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া !
আর এমামতি করুক একটি ধবধবে সাদা গোলাপ !
আর আমার শোকে
কোন মানুষের চোখের জল আমি চাই না !
আমি চাই
শ্রাবণের পর্যুদস্ত অখণ্ড আকাশ কেঁদে কেঁদে
সবাইকে বলুক-


"শপথ সাঁইজির, শপথ রবীন্দ্রনাথের এবং অবশ্যই শপথ গণিকালয়ের-
একজন কবির মৃত্যু হয়েছে,
একজন কবির মৃত্যু হয়েছে,
একজন কবির মৃত্যু হয়েছে ! "



>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>ঝালকাঠী।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>> ০৯/০৮/১৫খ্রিঃ।।