এক পড়ন্ত বিকেলের শেষান্তে
দু’জন কলেজ পড়ার সাথী বন্ধু এসে বলল
চলরে ভাই ঘুরে আসি..
আমি বললাম এখন সময়টা ভাল নয়!!


সন্ধ্যা ঘণিয়ে আসছে পশ্চিম গগণ হতে ধ্বনিত
হবে মাগরিবের আযানের সু-মুধুর আওয়াজ
ডাকছে এসো সকল মুসলিম এসো নামাজ পড়তে মসজিদে-তে!!
নামাজ পড়া শেষে তারপর যাইবো বন্ধু!!
এসে বস ঘরেতে;
একথা বলাতেই এক বন্ধু..

অন্য প্রান্ত হতে বললেন
অপর বন্ধুজনকে আমি বলে ছিলাম না
ওর কাছে গেলে বলবে
ঐখানে এখন যাওয়া যাবে না!!


সময় এখন ভাল না
বাংলা ভাষাতে দু’চার’টি বকা-ঝকা দিয়ে
যায় দু’বন্ধু সেই সময়কার
বিশাল মদিনা বস্তির আবাসনে বসবাস করতেন কতশতজন।


অন্য পাড়া-মহল্লা, সেকশন,
ব্লক ও ওয়ার্ড হতে শুরু করে যেতো
কত শত বস্তিবাসীকে উন্নয়ন নামক
এনজিও ও বিদেশী-দাতা সংস্থা
        এবং
ভ্রমণ বিলাসীরা একটু সময় পেলেই ঘুরতে যেতেন ঐ বস্তি এলাকাতে;


ঐ বস্তির প্রবেশ সন্মুখে ছিল
দৃষ্টি নন্দন বিশাল একটি বটগাছ
অনেকেরই মুখে শোনা যেত ঘুরে আসি
বলতেই; যেতেন সেই বটতলার বস্তিতে।


[(বর্তমানে গড়ে উঠেছে দৃষ্টি নন্দন ও আকর্ষণীয়
ইট-পাথরের কারুকার্য নকশায় মনোমুগ্ধকর
আবাসিক (ডিওএইচএস),
মিরপুর-১২, ঢাকা-১২১৬ এর অভিজাত এলাকা)]।


তখন দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়;
জন-স্বার্থে একটু নিষেধাজ্ঞায়
ডিবি, গোয়েন্দা পুলিশের মঁহড়া চলছিল
মাগরিবের আযান শেষ হতে না হতেই
দু’বন্ধু যায় সেই বস্তি-নামক বট-গাছেরই ছায়া তলে-তে!!


যাওয়া মাত্রই ধরে নিরাপত্তা নামক
ডিবি পুলিশ দু’বন্ধুকে,
ধরে বেদম প্রহার এরপর দেয় থানায় চালান
পরক্ষণেই শুনতে পেয়ে দু’বন্ধুর মাতা আসে
কান্না কান্না নয়নে ভারী মুখখানীতে আমারই নিকটে;


বাবা!! জাকির তুমি যাও নাই ওদের সাথে?
খালা আম্মা আমি বলে ছিলাম
এখন সন্ধ্যার সময় মাগরিবের আযান হবে
নামাজ কায়েম করে তারপর ভাল কোন জায়গা হতে ঘুরে আসবো;
যাওয়া যাবে না ঐ বস্তিতে বর্তমান দিন কাল ভাল নহে!


একটু অপেক্ষা কর!!
নামাজ শেষে ঘুরে আসবো
যাওয়া যাবে ডি-সি-প-ব্লকে-তে ভাল পরিবেশ হতে
এই কথা বলা মাত্রই আমাকে দশ'টা মন্দ কথা শোনানোসহ;


বললেন অপর বন্ধু'কে!! বলে ছিলাম না
সহজ বাংলা ভাষার গালি শালার কাছে গেলে
শুধুই উপদেশ; শোনাবে বাণী
এইটা ভাল না, ঐখানে যাওয়া যাবে না,


এখন কেমন লাগে আমার কথা
কি ঠিক হল, বুঝলি!!
একজন আরেক জনকে বলল চল
এই কথা বলে কোথায় যে গেছে খালা-আম্মা!!


ওদের দু’জনের ব্যবহারে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি
নামাজ শেষ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম
কারণ ওরা শুধু আমার বন্ধু নয়!!
আমার জীবনে পড়া-লেখা শেখার ক্ষেত্রে


এবং ঢাকার শহরের মত জায়গায়
মাথা গুঁজার ঠাঁইয়েরও অনেক বড় উপকারীজন।
দু’বন্ধুর মাতা কান্না করে বললো এখন তারা দু’জন
পল্লবী থানাতে! যাও তুমি তাদের ছাড়ায়ে আনতে;


রওনা হলাম উদ্দেশ্য বন্ধু দু’জনকে থানা হতে আনতে
জানতে চাইলাম থানা কর্মকর্তাকে কি অপরাধ ওদের?
পুলিশ জানায় সময়টা ভাল না এই নিষেধাজ্ঞা
অমান্য করার অপরাধের দায়ে;


তা বেশ দয়া করে মার্জনা করবেন হুজুর
এবারের মত আমার বন্ধু দু’জনকে ছেড়ে দেন;
থানা কর্মকর্তা বললেন বললেই কি ছাড়া যায়
হাদিয়া বা বকশিস দেন ছেড়ে দেই মশাই।।


জরিমানা পাঁচ হাজার টাকায় মুক্তি হল দু'বন্ধুর।।
তখন কার দিনে পাঁচ হাজার টাকা উপার্জন
খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য।
তখন ১৯৯৮ ইং সাল।।


তাই তো বলি ছাত্র সমাজ বন্ধু-মহল
ভাল সঙ্গ দাও, ভাল বন্ধু বেঁচে নাও,
অসৎ সঙ্গ ত্যাগ কর, ভাল পরিবেশে যাও,
কোন বন্ধুর ভাল পরামর্শ দিলে অবজ্ঞা করো না।


গঠন মূলক কাজ কর, নিজে উন্নতি কর,
অপর সহকর্মী ভাইকে সহযোগিতা কর!
সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বন্যাশ।
সেই দিন বিকেলের নিষেধাজ্ঞা যদি শুনতো দু’বন্ধু;


যেতো না সেই বস্তিতে, ধরতো না ডিবিতে,
যেতে হতো না থানাতে, গরীব মাতা-পিতাকে
গুণতে হতো না নগদ পাঁচ হাজার টাকা পুলশিকে দিতে
বিকেলটা হতো না বিষন্নতায় ভরা;
মায়ের আহাজারী, বাবার টাকার কষ্ট,


সন্তান বলে কথা ঘরে মন বসে না
হায়রে জীবন কি যে বিকেল।।
যে বিকেল দিবে বিনোদন
সেই বিকেল হল তাদেরই সামাণ্য ভুলে বিপন্ন।


আজও মনে পড়ে সেই দু’বন্ধুর
বিকেল নামক চল যাই ঘুরে আসি
এক বিভিশিখাময় অন্য রকমের অভিজ্ঞতার কথা।
আর বন্ধু কর্তৃক বকা খাওয়ার অন্য রকমের বেদনা


ঘুরে আসি বিকেল নামক
অপরাধের স্বীকারের আর্তনাদের সেই আত্নশুদ্ধির;
যে বিকেল হওয়ার ছিল আনন্দময়ের
সেই বিকেল হল যে অন্য রকমের
এক মায়ার জালের মাতা-পিতার
বিকেলের কান্না কণ্ঠ বিলাপের আহাজারী।


      ===***===
      ===***===


বাণী : ভাল কথা সব সময়ই ভাল!! মন্দেরও ভাল উপদেশ শোনা কাম্য।