শতো সহস্র বছর ধরে বাইনোকুলার দিয়ে, দেখলে তুমি আমাকে
ম্যাগনিফায়িং গ্লাসের মায়াবী কাঁচ দিয়ে,আটকে ফেললে তুমি আমাকে
খুঁটে খুঁটে চোখের পাপড়ি মেলে, ঈগলের দৃষ্টিতে,তাকিয়ে রইলে তুমি
শুধু আমার দিকে


জ্বলে উঠলে তুমি অগ্নিকুণ্ডের মতো,একটু ও ছাড় দাওনি তুমি আমাকে
দেখলে তুমি আমাকে, আমার সব,আমার চোখের ভাষা কেমন,কথা বলে
কেমন,মুখের হাসিতে মুক্তো ঝরে কিনা
সুমিষ্ট কন্ঠস্বর কিম্বা মধুঝরা কন্ঠ কিনা
তোমার পাশে দাড়ালে আমাকে শাহরুখ খানের মতো লাগবে কিনা
সবি পরখ করলে তুমি, বিশ্বের আধুনিকতম যন্ত্র দ্বারা, অনুবিক্ষন যন্ত্রের
মতো অবিকল চালিয়ে গেলে অপারেশন


বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী সকলের মতামত নিয়ে তুমি এগিয়ে
গেলে আমার দিকে, ধীর লয়ে, ধীর পায়ে
শাহজাহান,আওরঙ্গজেব কিবা মোগল কোনো অধিপতির মতো কোনো
ঐতিহ্য আছে কিনা আমার,সবই দেখলে তুমি


আমি কিন্তু!
মমতাজ, মোনালিসা, লাইলি, শিরির মতো তোমাকে দেখিনি,মাপতে
যাইনি তোমাকে বিশ্বের আধুনিক কোনো নিক্তি ও বাট খারায়
টন,কেজি,পাউন্ডের হোলিখেলা বা বিজ্ঞাপনে মেতে উঠিনি আমি
সারস পাখিটা ও ডাক দিয়ে বলে গেলো আমায়,কবি তুমি ঠিকই আছো,
এতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হয় নাকি!
আমি শুধু তোমাকেই দেখেছি, শুধু তোমার চোখ দুটি কে


তারপর জাতিসংঘের এসেম্বলিতে বসলে তোমরা ভোটাভুটি শুরু হলো,
শেষ পর্যন্ত ভেটো ছাড়াই
সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিলে,তুুমি আমার জামাকাপড় ঠিকমতো আলনায়
গুছিয়ে রাখবে
বাইরে থেকে ফিরে এলে সাগ্রহে দরজা খুলে দেবে,গভীর রাতে টলতে
টলতে এসে দরজা নক করলে,আমাকে তিরস্কার করবে,বকা দেবে,
অভিমান করে বালিশ চেপে উপুড় হয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে
বালিশ ভেজাবে
সব কিছুই তো তোমার হিসেবের খাতায় লিপিবদ্ধ করলে তুমি
কম্পিউটারে ডিস্কে ঢুকিয়ে দিলে তুমি সব


সবি মেনে নিলে তুমি, আমিও নিলাম মেনে অবলীলাক্রমে
তোমার কোনো এ্যাফেয়ার আছে কিনা তির্যকভাবে জবাব দিলে তুমি-না
আমি বিশ্বাস করে নিলাম তোমার মুখনিঃসৃত অমিয় বাণী


তারপর আকাশের চাঁদ হাসতে শুরু করলো,আকাশের তাঁরাগুলি আনন্দের
ঝঙ্কার তুলে,
ধাই ধাই করে নাচতে থাকলো তারা,ঠিক মেঘ বালিকাদের মতো
ফুল বাগানের সদ্য ফুটন্ত ফুলের সৌরভ চারিদিকে আমোদিত করে
মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করে তুললো তারা


ঠিক এমনই এক মুহূর্তে
রচিত হলো তোমার আমার জীবনের কাঙ্খিত ইতিহাস
একটি তারা হয়ে আকাশে আলো ছড়িয়ে আলোকিত করলাম তোমার
আমার ভূবন
দুজনেই দুজনের হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে,ঘরের দরজা খোলার
সারাজীবনের চাবি হাতে তুলে নিলাম নির্দ্বিধায়
তারপর নিমেষেই পৌঁছে গেলে,স্বহস্তে তালা খুলে তোমার আপন ঘরে
তারপর তারপর ধীরে ধীরে হতে লাগলো সব ইতিহাস
অনাকাঙ্খিত ইতিহাসের সব খেরোখাতা রচনা করলে তুমি


তোমার আমার আত্মাযুগল বন্দীকালে তোমাকে কিছুটা পরিচিত মনে
হলেও
বাসর রাতেই তোমাকে মনে হলো, আমার খুব বেশী অচেনা, চির অচেনা
এক নারী
এতো বেশি অন্ধকার দেখিনি জীবনে কখনো আমি,আমার চোখ ঝাপসা
হয়ে গেলো একেবারে, আমি হয়ে গেলাম নির্বাক, নিস্তব্ধ ও হতভম্ব


সেই থেকে যাত্রা শুরু তোমার
সুদূর সাইবেরিয়ার ডেনিসোভায় তোমার অতীতের সব তল্পিতল্পা
কীর্তিগাথা বাক্সবন্দী করে
একাট্টা হয়ে গেলে তুমি,যেনো তুমিই শুধু অন্য কারোর, আমার নয়
ফেলে আসা দিনগুলি তোমায় বারবার পিছু ডাকতে লাগলো


যুগলবন্দী জীবনের শুরুতেই কিসের অভাব তোমার,কিছু বুঝে ওঠার
আগেই তুমি
ডুকরে কেঁদে উঠলে, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিশ্ব, একি? এই মিষ্টিময়
নিশিতে কেনো এ অশ্রুবারি তোমার চোখে, পানকৌড়ির ডানা ঝাপটাণো
শব্দে কিছুক্ষণ সম্বিত হারালাম আমি
পৃথিবীর সব ভাষারা কেঁদে ফিরে গেলো, লজ্জায় লাল হয়ে গেলো তারা
এরপর থেকেই তুমি প্রায়ই গোপনে যাও কেঁদে
কিসের অভাবে, কার কারণে তোমার এ অনাবশ্যক কান্না,কি সেই শূন্যতা
কি সেই হাহাকার, কি সেই বিখাদমাখা সুর  
কাঁদতে কাঁদতে নিষ্প্রভ মলিন চিত্তে হারিয়ে যেতে থাকলে তুমি আমার
কাছ থেকে, কোটি কোটি বছর দূরে সরে গেলে তুমি, আমার কাছ থেকে


তোমার দু'চোখের এ কান্না বহুকাল বিদীর্ণ করেছে,আমাকে, শতো সহস্র
বছর ধরে পরখ করেছি আমি
তোমার চোখ পানে চোখ রেখে বহুবার পড়েছি তোমার আঁখির কান্না
দেখেছি তোমার আঁখি অঙ্কিত কান্নার সেই সমতল রেখা
দিতে চেয়েছো ফাঁকি আমাকে,পারোনি লুকিয়ে রাখতে সে লেখা
হাজার বছর ধরে চরম মিথ্যের সাথে বসবাস করেও ধরা পড়েছো
অনেকবার তুমি,কিন্তু কিছু হয়নি বলে আড়াল করেছো কান্না ভেজা আঁখি
দ্বয়
মিথ্যা বলে চোখ মুছে কেটে পড়তে তুমি,যেনো কিছু ই হয়নি তোমার
কতোকাল ফাঁকি দেয়া যায়,বলো?
ধরা তো তুমি পড়ে-ই গেলে! কতোকাল সত্যকে চেপে রাখা যায় বলো?


অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতার আবাসভূমিতে একই ছাদের নীচে থাকলেও
আমি যে এক নির্জন কালাপানির জনশূন্য দ্বীপবাসী
যেখানে হাজার বছরেও শোনা যায় না জাহাজের নাবিকের কোনো সাইরেন
শব্দ
যেখানে ঝরে পড়ে না ভুলেও কোনো অশ্বত্থের পাতা
পাখির কলকাকলি বলতে নেই কিছু সেখানে, বিরানভূমির বাসিন্দা আমি
বিল গেটসের স্ত্রীর মতো নয়, তবে গরীবের বেশে, এক অচেনা দ্বীপবাসী
আমি


আমার আকাশ হতে অঝোরে ঝরে না আর বৃষ্টি,ঝাউপাতার ওপরে আটকে
থাকে না বৃষ্টি কণা,খাঁ খাঁ রুক্ষ মরুভূমি আমার,গাছপালা, বৃক্ষের সারি,
সুশোভিত ফুল বাগান সকলেই কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়, একফোঁটা বৃষ্টির জন্য
জলের জন্য


এর মাঝেও কান্নার রোল থেমে থাকেনি কখনো তোমার,সারাজীবন গোপনপ্রিয়া
গোপন খুঁজেছো তুমি,আর পেয়েছো ও তাই
আমার জন্য সযতনে খুড়েছো কবর আর
কিনেছো কাফনের কাপড়
নিয়েছো প্রাক্তনের কাছে তোমার কাঙ্ক্ষিত স্বর্গের ঠাঁই, বারেবারে তুমি
ফিরিয়েছো সযতনে তোমার আঁখি তার দিকে
অথচ আমার কি দোষ ছিলো,বলো? বলতে পারবেনা কিছুই,তবুও
তুমি বলো নাই
আর আমি ঠিক কিছুই বুঝি নাই!