চিত্রা নদী
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের নদী চিত্রা,স্বাদু স্বচ্ছ নীর তার
উভয় তীরে রচনা করেছে সোনার পল্লী,প্রিয় নড়াইল জেলা
শহরের পাশ ঘেঁষে কুলকুল রবে গীটারের সুরের ঝঙ্কারে
বয়ে গ্যাছে চলে গ্যাছে বহু দূরে কালিয়ার নবগঙ্গা নদীর
বুক চিরে,চিত্রা নদীর প্রবাহ মিশে গ্যাছে নবগঙ্গা নদীর
কুলকুল ধ্বনির সাথে,ঢেউয়ের সাথে একাত্ব হয়ে
এই নদীর দু’কূল ঘিরে প্রকৃতি সেজেছে মনের মতো
নববধূর মতো,হরেক রকম গাছপালা পাখি ফুল ফল
তরুলতা বাসা বেধেছে এখানে আপন মনে,চিত্রা যেনো
আঠারো বছর বয়সী এক টগবগে তরুণী,ছবির মতো
সুন্দর তার অবয়ব,যেনো মোনালিসার দৃষ্টিতে শিল্পী
সুলতানের সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে আঁকা চিত্রার ছবি স্বয়ং
ছবি এঁকেছেন প্রকৃতি শিল্পী,দিয়েছেন নাম তার চিত্রা
মাগুরা,ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা কে প্রকৃতির পরশ
বুলিয়ে আদরের শিহরণ জাগিয়ে নড়াইলে গিয়ে মৈথুনের
মুগ্ধতায় মিশে গ্যাছে চিত্রা হয়ে
কাকের চোখের মতো ঝলমলে টলটলে কালো জল নিয়ে
চিত্রার চোখ মেজে দিয়েছে প্রকৃতি,এঁকেছে তীর ঘেষে রাস্তা
দিয়ে হেঁটে যাওয়া বালিকার আকৃতি প্রতিকৃতি শিল্পীর
পিপাসার্ত চোখে সুতীক্ষ্ণ ভাবে
এ নদীর দু'কুল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে
শান্তি প্রিয় জনপদ মানুষের বসতি ঘরবাড়ি হাট বাজার
গাছপালা রাস্তা ঘাট,রাস্তা দিয়ে ছুটে চলতো স্কুলে যাওয়া
বালিকার দল,নিরন্তর ছুটে যেতো গরুর গাড়ি মহিষের
গাড়ি শোনা যেতো তীরে তার রাখালের বাঁশীর করুণ রাগিণী
স্রোতস্বিনী এ চিত্রার বুক চিরে থরথর করে বয়ে যেতো নৌকা
স্টিমার,লঞ্চ,কার্গো,ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান,স্রোতের ছন্দে
ছন্দে মাতোয়ারা হয়ে কচুরিপানা ভেসে যেতো ছুটে যেতো
ঐ দূর নবগঙ্গার কাছে
লঞ্চে করে যাত্রীরা ছুটে যেতো স্ব স্ব গন্তব্যে,ঢাকা খুলনা
গোপালগঞ্জ,বরিশাল সহ বিভিন্ন জেলায়,সেগুলো সব আজ
চাঁদের দেশের আর রূপকথার গল্প
বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্ম বেড়ে ওঠা এ
চিত্রার তীর ঘেষে প্রকৃতি ঘেরা মাছিমদিয়া গ্রামে,প্রকৃতির এ
শিল্পী শিশুদের জন্য নিজ হাতে ভাসিয়ে দিয়েছেন শিশু স্বর্গ
তরী এই নদীর বুকে,এ নদীর কুলকুল ধ্বনি বেজে উঠতো
শিল্পী হৃদয়ে গানের সুরের মতো,কেঁদে উঠতো শিল্পী হৃদয়
শিল্পী তাই শিশুদের জন্য ভাসিয়ে দিলেন চিত্রার বুকে শিশুস্বর্গ
তরী,শিল্পী চিত্রার তীরে বসে গভীর রাতের আড় বাশীতে সুর
তুলেছেন বাজিয়েছেন গানের নুপুর,কাপিয়েছেন হাজারো
গ্রাম্য বালিকার বুক,দেখেছেন থরথর করে তাদের কেঁপে
ওঠা,শুনেছেন ভাঙ্গা হৃদয়ের ক্রন্দন রোল
বহু মানুষের বাস এই চিত্রার তীরে,মিশে গ্যাছে হৃদয় তাদের
নদীর কুলকুল ধ্বনি আর ঢেউয়ের সাথে,জেগেছে স্পন্দন
হৃদয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে মিশে গ্যাছে এই চিত্রা
নদী,নেই কোনো ভাঙা-গড়ার খেলা এখানে,এ নদীর কুলকুল
ধ্বনি ও স্রোত ধারার সাথে একাট্টা হয়ে গ্যাছে,গৃহবধু কৃষানী
আর তীর বাসীর জীবন,তাদের হাসিকান্না,তারা খুঁজে পেয়েছে
শান্তি আর সুখের ঠিকানা,বর্ষার জলে টইটম্বুর নদীতে ভাসিয়ে
দিয়েছে নৌকা কৃষক মাঝি আর তার সব তীর বাসি,করেছে
আনন্দের সন্ধান,দিয়েছে নৌকা বাইচ,নারী ও পুরুষ মাল্লা
নৌকা অংশগ্রহণ করতো বাইচে-সারি গান, ঢাক-ঢোলের শব্দ
বাঁশির সুর ও কাঁসা-পিতলের ঘণ্টা বাজানোর ঝংকার এবং
হেইয়্যা হেইয়্যা হর্ষধ্বনিতে উদ্বেলিত হতো দর্শকদের হৃদয়
দিতো বাড়তি আনন্দ,উভয় তীরে হাজার হাজার লোক মেতে
উঠেছে আনন্দে
আজ তার ফুরিয়েছে যৌবন,হারিয়েছে জৌলুশ রূপ মেদ
সৌন্দর্য প্রকৃতি হয়েছে বিরূপ তার আজ,নদীর স্রোতধারা
এখন তিরোহিত প্রায়,ধুকছে তিল তিল করে,ভুগছে নাব্যতা-
সংকটে,জেগে উঠেছে গায়ে তার অসংখ্য ছোটবড় চর,নেই
আর নেই বেশী দিন দূরে,যেদিন দেখবো আমরা চিত্রাকে
মরে যেতে,আমাদের চোখের সামনে,যেদিন হবে তার সাথে
আমাদের আবার পরিচয় নতুন করে,নয় কোনো নদী বা
তটিনী বলে হবে তার পরিচয় শুধু মরা খাল বলে
থেমে গেছে নাব্যতা,জমেছে শ্যাওলা কচুরিপানা আজ তার
বুকে শোনা যায় বুকে তার আবদ্ধ অসুস্থ জলরাশীর নীরব
কান্না,অসহায় আহত হরিণের মতো আত্মসমর্পণ করেছে
তারা,আজ আর নেই কোনো কুলকুল ধ্বনি ঢেউ স্রোত নেই
জোয়ার ভাটা সেখানে,নেই কোনো হাঁসের জলকেলি,সব কিছু
হয়েছে শেষ তার আজ, নীরব নিস্তব্ধতার আবদ্ধ জলরাশীর
কাছে বন্দী জীর্ণ শীর্ণ তটিণী চিত্রা,নেই কোনো হিল্লোল আজ
তার বুকে,মরছে কেঁদে কেঁদে আর মরছে অসহায়ের মতো
ধুকে ধুকে
বিঃ দ্রঃ
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্ত চট্টোপাধ্যায় তার বিখ্যাত
’কমলাকান্তের দপ্তর’ গ্রন্থে চিত্রানদীকে অমর করে
রেখেছেন।
বাংলো
জেলা ও দায়রা
জজ
সুনামগঞ্জ
প্রকাশকাল-
সময়ঃ২২-১৩ মিঃ
তারিখঃ ২৫-০৬-২০২০ ইং