আজ ২৮-০৭-২০২১ বুধবার রাত ১০-০০ টায় আমার মা মোসাঃ নুরজাহান বেগম আমাকে এ বিষ্ময়কর পৃথিবীতে একা ফেলে অজানার উদ্দেশ্য ও না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ১১০ বছর বয়সে(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজেউন)


চারপাশে আজ ঘুটঘুটে আঁধারে ঢেকে গেছে সব
শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার দেখছি দু’চোখে
অন্ধকারের চরম নিষ্ঠুরতায় মরছি ধুঁকে ধুঁকে প্রতি মুহূর্তে
কিছুই দেখছি না চোখে আর আমার চোখে এখন শুধুই অন্ধকার
ঝাপসা হয়ে গেছে চোখদু'টি আমার


বড্ড অভিমান করে চলে গেলে মা
মায়াময় এ পৃথিবী ছেড়ে আমাকে একা ফেলে চলে গেলে তুমি
চোখে মুখে এখন শুধুই অন্ধকার
আপন বলে কেউ আর রইলো না জীবনে আমার


কে আমাকে আদর করে মন্টু ব'লে ডাকবে?
কে আমাকে জজ সাহেব ব'লে ডাকবে?


জীবনের সব কষ্টের কথা তো তোমার সাথেই শেয়ার করতাম মা
তুমিই তো ছিলে আমার শান্তি আর সুখের একমাত্র নীড়
তোমার আদর আর সান্ত্বনার কথা কি করে ভুলবো আমি?
মায়ের বিকল্প কি পৃথিবীতে আর কেউ আছে?


আজ তিন বছর যাবত প্রকৃতিসমৃদ্ধ ও শান্তির শহর সুনামগঞ্জে
জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছি


অনেক আশা ছিলো মনে জীবনের শেষ ক'টা দিন তোমাকে
আমার
কাছে রেখে চিকিৎসা ও সেবা করবো কিন্তু পেলাম না সে সুযোগ
আর


আমার বাড়ী চিত্রা নদী,মাশরাফি ও এস.এম সুলতানের নড়াইল
জেলায়
ভারতের মেঘালয়ের গা ঘেষে গড়ে ওঠা পাহাড় সংলগ্ন সুনামগঞ্জ
জেলা
আমার নড়াইল জেলা হতে প্রায় ৮০০ কিঃমিঃ দূরে


আমার কাছে রেখে তোমাকে চিকিৎসা করানোর উদগ্র বাসনা
ছিলো আমার
৮০০ কিঃমিঃ জার্নি করার মতো যথেষ্ট শারীরিক সামর্থ্য ছিলো
না তোমার 


বাড়ির কাছে কুষ্টিয়া জেলা
অনেক দূর হওয়ার কারণে মা তোমার সেবা যত্ন করার জন্যই
শুধু
কুষ্টিয়া জেলায় বদলি হবার ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম
কিন্তু আমার সে সাধ আর পূরণ হয়নি
তাই তোমার সেবা করার ইচ্ছে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো মা


শুধুমাত্র তোমার সেবা করার জন্যই কুষ্টিয়া যেতে চেয়েছিলাম
কিন্তু পারলাম না মা,আমার সে আশা আর পূরণ হলো না
আশা শুধু হতাশায় পরিণত হলো,বিবর্ণ হয়ে গেলো সব
আর আমি ও তোমার সেবা করতে পারলাম না


জেলা ও দায়রা জজের অনেক বড়ো বাড়ী
গাছপালা,প্রকৃতি ও পাখির শান্তিসুখের নীড়
যেখানে দিনরাত শুধু আমার একারি আনাগোনা
আর কেউ নেই সেখানে


নড়াইল থেকে সুনামগঞ্জ অনেক দূরে, মা তুমি জার্নির ধকল
সামলাতে পারবে না
সে কারণে তোমাকে আমার কাছে নিতে পারিনি
আমাকে ক্ষমা ক'রো মা


অনেক দুঃখ,কষ্ট, বেদনা,শূন্যতা,হতাশা,বিষাদ, বিষন্নতা,
অবষাদ
আর ঘোর অন্ধকার আমাকে আজ অক্টোপাসের মতো ঘিরে
ফেলেছে
তিলতিল করে গিলে খাচ্ছে আমাকে,কিছুই ভালো লাগছে না
আর


জীবনে অনেক অন্ধকার দেখেছি,কবরের অন্ধকার অনুভব
করার চেষ্টা
করি বুঝতে পারি,রাতের অন্ধকার দেখেছি
আরও কতো অন্ধকার দেখেছি তার কি ইয়ত্তা আছে?
কিন্তু এতোবড়ো আঁকড়ে ধরা অন্ধকার জীবনে কখনো দেখিনি
আর


কিন্তু মা তুমি যে আজ অন্ধকারের গুহায় আমাকে নিমজ্জিত
করলে
ফেলে চলে গেলে আমাকে নির্জন বনে একা
বনের সব জীবজন্তু উল্লাসে ফেটে পড়বে ঘিরে ধরবে আমাকে
মেতে উঠবে আনন্দে মহা আনন্দে তারা
গিলে খাবার আমরণ লড়াই এ লিপ্ত হবে তারা
কে বাঁচাবে আমাকে বলো মা !


এরকম অন্ধকারের ভয়াবহতা ও তীব্রতা জীবনে আর কখনো
অবলোকন করিনি আমি
দেখিনি আমার দু'নয়ন মেলে ঘোর অন্ধকারের এতো নিস্তব্ধতা


মা তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কি করে? কাকে খুলে বলবো
আমার দুঃখের কথা?
তাহলে মা তুমি বলো আমার দুঃখের কথা কাকে শুধাবো আমি?
তোমার চলে যাওয়া আমাকে আমৃত্যু দুঃখ,কষ্ট ও যন্ত্রণায়
ভোগাবে
দগ্ধীভূত হবো সব সময় আমি
যতোদিন বেঁচে থাকবো সুন্দর এ পৃথিবীতে আমি ততোদিন
তোমার সাথেই থাকবো মা


আজ থেকে তোমার বাড়িতে কুকুরটি আর অন্ন গ্রহণ করবে না
ঘেউ ঘেউ করে আর ডাকবে না সে
শুধু উদাস মনে চেয়ে থাকবে সে কখন  ফিরে আসবে তুমি
এ আশায় পথ চেয়ে হতাশ হয়ে কাঁদতে থাকবে করুণ সুরে


গাছের ডালে বসে পাখিরা ও উঁকিঝুঁকি মেরে খুঁজতে থাকবে
তোমাকে
না দেখে স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে তারা
তাদের কন্ঠে আর ধ্বনিত হবে না সুমধুর কোনো গান
কবুতরের বাকবাকুম ডাক ও বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে


তোমার বিড়ালটা ও ম্যাও ম্যাও করে খুঁজে ফিরবে তোমাকে
খাবার সময় খুঁজে আর পাবেনা তোমাকে
সাহায্যের জন্য ও আর আসবে না কেউ তোমার কাছে
বলবে না তোমাকে আর কেউ জাজ সাহেবের মা কিছু
সাহায্য দেন


মা তুমি চলে গেলে যাবার মাত্র দশ মিনিট আগে
আমার সাথে শেষ কথা ব'লে গেলে তুমি
হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঝরঝরে কন্ঠে কথা বললে তুমি
অনেক দোয়া করলে তুমি আমার জন্য
আগের দিন বলেছিলে বাবা তোমার সাথে আমার আর
দেখা হবে না কোনোদিন, ঠিক তাই হয়ে গেলো
দেখা আর হবে না কোনোদিন মা তোমার সাথে আমার


এরি মাঝে আকষ্মিক প্রস্থান তোমার,চিরবিদায়ের বাশী
বেজে উঠলো তোমাকে ঘিরে
রাজুর কান্নার আওয়াজ ধ্বনিত হতে লাগলো বারবার
আমি ও ভেঙে পড়লাম কান্নায়,কাঁদতে কাঁদতে বুক ভেসে
গেলো আমার 
নিরন্তর কান্নার সাগরে ভেসে যেতে থাকলাম আমি
আসবে না ফিরে আর কোনো দিন তুমি আমাদের কাছে
পাবো না আর ফিরে  কোনোদিন তোমাকে সুন্দর এ
পৃথিবীর বনে


তুমি ও ডাকবে না মন্টু ব'লে
আমি ও ডাকবো না মা ব'লে
এরি মাঝে দু'জনেই যাবো শুধু
নীরবে নীরবেই কথা ব'লে


মা তুমি যেখানেই যাও যেখানেই থাকো, আমি তোমার
সঙ্গে আছি মা
তুমি ও আমার সঙ্গে থেকো, তোমাকে কোনো দিন ভুলবো
না মা


তুমি অনেক কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করেছিলে মা
আমাকে আদর সোহাগে মানুষ করেছিলে তুমি
আজ চ'লে যাবার মুহূর্তে তোমার পাশে থাকতে পারলাম
না আমি
আধুনিক জীবনে ও যুগে ছেলেদের এরচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা
আর কি হতে পারে!
যতোদিন বেঁচে থাকি এ ভবে বুকে পাথর চাপা কষ্ট নিয়েই
থাকবো


পৃথিবী সুন্দর, প্রকৃতি সুন্দর, গাছপালা,পশুপাখি নদী,সমুদ্র,
সাগর,সৈকত সবি সুন্দর মা
তারচেয়ে আরো সুন্দর এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকা
মানে সুস্থ হয়েই বেঁচে থাকা


বেঁচে থেকে দু'চোখ ভরে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য
অবলোকন করার চেয়ে আর কি সুন্দর থাকতে পারে এ
পৃথিবীতে মা!


কিন্তু চাইলে কি আর বেঁচে থাকা যায়?'' বিদায়ের সানাই
বাজে, নিয়ে
যাবার পালকী এসে দাড়ায় দুয়ারে,ডেকে ওঠে নাম না জানা
পাখি
হঠাৎ চমকে উঠি জীবন ফুরালো নাকি''
অমোঘ নিয়মের বেড়াজাল ভাঙ্গার কোনো ক্ষমতা কি আমাদের
কারো আছে?
বড়ো অসহায় আমরা মা
মহান আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হয় না ফেরার
দেশে


যেতে হবে তাই গিয়েছো চলে
রাখতে পারিনি ধরে
তোমার ছেলে তাই বারেবারে কাঁদে
কাঁদে যে নয়ন ভরে


আমাকে ও যেতে হবে মা, সবাই কে-ই যেতে হবে
তুমি ভালো থেকো, শান্তিতে থেকো
আমাকে ক্ষমা ক'রো মা, তোমার জন্য আমি কিছুই করতে
পারিনি


তোমার দেয়া মন্টু নামেই
পরিচিত সবার কাছে
অথচ তুমি চলে গেলে মা
মন্টুকে ফেলে পাছে


বিদায় মা


বিনীত
তোমার প্রিয় পুত্র
মন্টু


বিঃদ্রঃ প্রিয় সকল কবিবন্ধু আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।