লোকটা ছিলো মোটাসোটা ভীষণ রকম কালো
গা ছিলো তার লোমে ভরা মহিষই জমকালো ।
ভল্লুক নাকি মহিষ ছিলো বুঝতে হতো কষ্ট
কেউবা মহিষ কেউবা ভল্লুক ডাকতো সবাই পষ্ট।
ফোর সিটেড রুমে থাকতো জসীমউদ্দিন হলে
রান্না ক'রে খাওয়া দাওয়া চলতো হলে হলে ।
হালকা করে নাস্তা করতো ডেইলি সকাল বেলা
দশ পরোটা দুই কেজি গোশ কিইবা এতো মেলা!


ডিম ভাজি তার লাগবে ছ'টা সবজি কেজি দুই
গিলা কলিজা খেতেই হবে সাথে গোটা দুই।
সকাল বেলার নাস্তা  আমি খুবই কম খাই
দুপুর বেলার দিকে বেশী  ঝুঁকে থাকি তাই।
গরুর মাংস ডিম ভাজি তার নিত্যদিনের খেলা
ছেলেগুলো বোঝেনা তাই শুধুই করে হেলা।
মোটাগোটা মহিষ বেটা খেতে পারতো বেশ
কেজি দু'য়েক গরুর মাংস বিসমিল্লাহতেই শেষ।


ভুঁড়িটা তার খুবই ছোটো আঠারো ইঞ্চি সামনে
থাকতো ঝুলে নাচতো আহা কি যে তালে তালে!
আসন গেড়ে বসতো খেতে সবাই মিলে যখন
সামনের জনের পেটে ভুঁড়ি আঘাত করতো তখন ।
মহিষ বেটা একাই মারতো চারজনেরই টান
বাকী সবাই কাঁদতো বসে বাঁচাও খোদা জান।
এমনি ক'রে মেস চালাতে হিমশিম খেতো সবাই
ভল্লুকের এ খাওয়ার জন্য জবাই হতো সবাই।


মহিষ বেটা বাইরে গেলে বসলো হঠাৎ মিটিং
দিতে হবে শিক্ষা তাকে মারতে হবে ফিটিং।
বের করে দাও ভল্লুকটাকে এখনই মেস থেকে
রাখবোনা আর মহিষটাকে বলছি হৃদয় থেকে।
বাবুর্চি কে বললো সবাই বেতন ঠিকই পাবি
বন্ধ থাকবে মেসের রান্না আজই বাড়ি যাবি।
যেমনি কথা তেমনি কাজ বাবুর্চি আর নাই
বন্ধ হলো রান্না এবার খাবার কোথা  পাই?


পনেরো দিন পরে আসবি রান্না হবে আবার
ভল্লুক বেটা কাঁদবে একা পাবেনা সে খাবার।
ভল্লুক বেটা একলা একলা রান্না করলো শুরু
হাত কেটে আঙ্গুল কেটে কান্না করলো শুরু।
দেখতে দেখতে পনেরো দিন এমনি গেলো কেটে
বাবুর্চি ও এসে হাজির তাহার বাড়ির থেকে।
শুরু হলো মেসের রান্না খাওয়া হলো শুরু
এরই মাঝে আকাশে মেঘ ডাকলো গুরু গুরু।


ভাবখানা তার এমনতরো একবার যদি কয়
ঢুকবে একেবারেই মেসে মন যে তাহার চায়।
হঠাৎ করে ঘটক হাজির ভল্লুকের যে বিয়ে
সকলেরই রইলো দাওয়াত সঙ্গে যাবে নিয়ে।
গোপাল ভাড়ের ভুঁড়ির চেয়ে একটু ভুড়ি বেশি
নতুন বউয়ের খবরে মহিষ যারপর নাই খুশী।
বরসহ দশ-বারো জন গেলো কনের বাড়ি
ফটাস ফটাস কয়রে কথা বরের যে নাই জুড়ি।


মুখে তাহার নাইরে কপাট শরম কিছু নাই
সে যে একজন বর তাহার মাথায় এটা নাই।
মাছ আনো মাংস আনো বেশি করে আনো
আমি যে খুব কম খাই সেতো সবাই জানো।
তিন গামলার ছয় কেজি মাংস ক'রে শেষ
মহিষ বেটা জামাই সেজে ঝাড়লো অবশেষ।
বিয়ে বাড়ির মাংস কি আর কখনো শেষ হয়?
মাংস যদি না থাকে তো  কেমনে বিয়ে হয়?


রেগেমেগে গরম মহিষ মাংস তাহার চাই
মাংস তাকে দিতেই হবে বা্ঁচতে হলে ভাই।
ইতোমধ্যে কনের বাবা জোড় হাত তুলে কয়
মাফ করোনা বাপজি এবার ইজ্জত আমারযায়।
ইতোমধ্যে বর কনের বিয়ে হলো সারা
সংসার জীবন করলো শুরু মহিষ মনোয়ারা।
দুই কেজি গরুর মাংস আটশো গ্রাম ইলিশ
কেজি দুয়েক পুঁইশাক তোরা ভালো করে শুনিস।


খাবার শেষে বউটি তারে বলে ভল্লুক ভাই
দুপুর বেলা সবই খেলে রাতের খাবার নাই।
ভল্লুক বেটার মাথা গরম খাবার নাহি কেনো?
যেখান থেকে পারো তুমি খাবার কিনে আনো।
ভল্লুকের এ খাওয়া দেখে বউটা গেলো ক্ষেপে
কেমন করে বেটার সাথে?চলবে জীবন মেপে।
সালিশ বৈঠক ফেল মারিলো সবই হলো শেষ
এরই মাঝে সংসার তাদের ভেঙে গেলো বেশ।


এবার দু'জন দু'দিক গেলো আর হলোনা দেখা
মাছ মাংস পুঁইশাকে তার জীবন ঝাকানাকা।
মহিষ বেটা ভল্লুক বেটা মাছ মাংসের জন্য
জীবন দিয়ে সংসার দিয়ে হলো শেষে ধন্য।
পেটটা বেটার এতো বড়ো গোপালভাড় ও ফেল্
বউ গেলো সংসার গেলো দেখলো তারই খেল্।
শুনি মহিষ বেঁচে আছে মোমবাতির মতো
চতুর্থ বউ'র লাথি গুতো খায় সে অবিরত।