আমি যে ভাই নৌকা শ্রমিক
সবাই বলে পাটণী
কাজ করে খাই সকাল সন্ধ্যা
আর তো কিছু চাই নি।


সকাল বেলা খেয়াঘাটে
বৈঠা হাতে চলি
সবাই করে তুই তুকারী
তুই ছাড়া তুই আর কি!


রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে
চুপসে সাবাড় হই
তবুও যে দায়িত্বে আমি
সদা অটল রই।


এপার থেকে ওপারে যাই
মোটর সাইকেল তুলি
দুটি টাকার জন্য আমি
সবকিছু যাই ভুলি।


কেউ বলে যায় এই ব্যটা তুই
দেরি করিস ক্যান
কেউ বা আবার ধাক্কা মেরে
কান ধরে দেয় টান।


কেউ বা আবার গালি দিয়ে
কয় মাঝি তুই গেলি
কেউ বা আবার শান্তনা দেয়
সব কিছু যাই ভুলি।


দিনভরে মোর তুই তুকারী
গালিব ওপর চলে
কেউ বা আবার ঘাড়টা ধরি
পাটনীর ব্যাটা বলে।


কেউ ভাড়া দেয় স্বেচ্ছামতো
কেউ বা আবার কম
এদিকে মোর জান চলে যায়
যায় যে আমার দম।


ঘাড় ধাক্কা গলা ধাক্কা
দিন ভরে মোর চলে
এদিকে সব পাটনীর বাচ্চা
কথায় কথায় বলে।


দুপুর বেলা রুটি চিবাই
সাথে একপিস কলা
গলা যে মোর যায় শুকিয়ে
কাউকে না যায় বলা।


সন্ধ্যা বেলা দুই কেজি চাল
সঙ্গে কিছু আলু
বাড়ির পানে ছুটলে গিন্নি
চোখ্খে মারে বালু।


দিনের জ্বালা খেয়াঘাটে
রাত্রে বৌয়ের কাছে
শান্তি আমার পালিয়ে বেড়ায়
জান চলে যায় পাছে।


কেমন করে কই যে তারে
মনে বড়ো জ্বালা
বৌ বলে তোর চাল নিয়ে তুই
এখনই তুই পালা।


বাচ্চা গুলো তাকিয়ে থাকে
হরেক রকম খাবার
আনবে বাবা সন্ধ্যা বেলা
আনবে বুঝি আবার।


লেখা পড়া নাই যে তাদের
মায়ের পাশে বসে
স্টার জলসার ছবি দেখে
খিলখিলিয়ে হাসে।


পাটণীর ছেলে পাটণী হবে
পাটণী সবাই বলবে
লেখাপড়া বাদ দিয়ে তাই
সকল খেলা চলবে।


দুঃখে আমার দিন কেটে যায়
নদীর খেয়াঘাটে
চোখের জলে বুক ভেসে যায়
সন্ধ্যা বেলার বাটে।


জঠর জ্বালা দিনের বেলা
যাত্রীর মুখে গালি
সন্ধ্যা বেলা বৌ যে বলে
বাসার থেকে গেলি।


এমনি করে পাটনী জীবন
কাটাই আমি রোজ
কষ্টে ভরা জীবন আমার
কেউ রাখে না খোঁজ।


নাই ভবিষ্যৎ নাইরে কিছু
নাইরে আমার জন্য
স্বাধীন দেশের পাটণী আমি
জীবন আমার ধন্য।


বাংলো
জেলা ও দায়রা জজ
সুনামগঞ্জ


প্রকাশকাল
সময়ঃ০৫-৩৫মিঃ
তারিখঃ১৬-০৭-২০২০ইংরেজী