গভীর রাতে সশঙ্ক চিত্তে ছুটে এসে কড়া নাড়ে
একদল কবিতা,মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলো তারা
করতালির সাথে,স্বাগত করলাম তাদের,থরথর
করে কাঁপছিলো সবাই,কি হয়েছে?এতো গভীর
রাতে ক্যানো?প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই কবিতাদের
দলনেতা বললো ছুটি চাই আমরা,বিষ্ময়ে হতোবাক
আমি,কিসের ছুটি?এ ধরায় সবাই ছুটি পায়
সব দেশে,ছুটি ভোগ করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে
মনের আনন্দে ছুটে চলে নিরন্তর,দেশ হতে
দেশান্তরে,আমরা ও ছুটি চাই


আমাদের নিয়ে কবিরা যে যার মতো মনের মাধুরি
মিশিয়ে প্রকৃতি প্রেম সবুজ শস্য কণা ঘাসের বিছানা
নিয়ে কেউ ফুল বাগানে,কেউ আকাশ পানে,কেউ
সাগরের তলদেশে,কেউ বৃক্ষের শাখায়,কেউ
নক্ষত্রের কাছে,কেউ পাখিদের নীড়ে,কেউ বা নব
আবিষ্কারে ছুটে যায়,ঘোরে বিস্তর,বিশ্বের এ প্রান্ত
হতে ও প্রান্তে,আঁকে সুলতান পিকাসোর আঁকা
কাল্পনিক সব ছবি,ঘুরতে ঘুরতে ঢুকে পড়ে বিশ্ব
মানচিত্রে,খেলতে থাকে সাপ লুডু,চালে দাবার
গুটি ইচ্ছে মতো,শেষে চিবিয়ে খায়,ছিড়ে খায়
মানচিত্র একেবারে,আমাদের নিয়ে কবিরা হরেক
রকম ফুল ফোটায় মনের সুখে,ইতিহাসে ইচ্ছেমতো
নাম লেখায়,সদম্ভে কাপিয়ে বেড়ায় বিশ্ব,আমাদের
নিয়ে কবিদের এই যে অবিরাম অন্তহীন পথচলা
আজ এর শেষ চাই আমরা


কবিদের হাতে লিখিত হতে হতে আমরা আজ
তাদের হাতে মরিচ গুঁড়ো করার মতো পিষ্ট,দলিত
মথিত ও বিধ্বস্ত,আমাদের গতিপথ আজ
তিরোহিত,পলি জমে অবরুদ্ধ জীবনের জলধারা
স্রোত,বদলাতে হবে এ পথ,দূর করতে হবে
আমাদের জীবনের অন্ধকার,গুড়িয়ে দিতে হবে
কবিদের সব অহংকার,আমরা ক্লান্ত,বড্ড বেশি
ক্লান্ত আজ আমরা


কবিতাদের দলনেতা কবি শামসুর রাহমানের এক
ক্ষুরধার অক্ষি গোলকের মতো কবিতা শার্টের
হাতা গুটিয়ে ক্ষিপ্তকন্ঠে বললো( রাত বেশী ও একা
হওয়ায় আতঙ্কিত ছিলাম বেয়াড়া কবিতারা হাজার
কিঃমিঃ বেগে চড় থাপ্পড় মারে কি না- হাসি)
আমাদের নিয়ে তোমাদের মনের বাগানে নদীর
কুলকুল ধ্বনির মতো ফুল ফোটানো আর চলবে না
কারো মেঘ কারো বৃষ্টি কারো গোলাপ কারো প্রেয়সী
আর হতে ইচ্ছে নেই কোনো,চাই না হতে কবিদের
হাতে মুঠোবন্দী


বিপ্লবের জাতীয় কমিটি গঠন করেছে কবিতারা বলে
প্রশ্ন ছুড়ে দিলো দলনেতা মোটাশোটা এক কবিতা
ক্যানো এ অবিচার অত্যাচার আমাদের বিরুদ্ধে
বললো সকল কবিদের জানাও, সবাই ছুটি পায়
ভোগ করে, আর এ করোনাকালে গোটা বিশ্ব যেখানে
থমকে গেছে,আর আমাদের কে কবিরা সেখানে
কলমের যাতাকলে পিষ্ট করে ই চলেছে,বিশ্ব মানচিত্রে
এমন দেশ নেই যেখানে কেউ ছুটি পায় না, ভোগ করে
না,বিশ্ব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর জায়গা নেই,তারা ও
আজ দিশেহারা নাবিকের মতো খেই হারিয়ে ফেলছে
নেই কোনো প্রতিকার,সেখানে আমরা ক্যানো ছুটি
পাবো না,আমরা ও ছুটি চাই,আমরা ক্লান্ত আজ


দলনেতা বিপ্লব কর্মসূচীর তালিকা দীর্ঘ করে বললো
কবিতার ক্লাসে আমরা আর অবোধ ছাত্রদের মতো
হাজিরা খাতায় নাম লেখাতে পারবোনা,তোমাদের হাতে
স্মৃতি স্মারক পুরস্কার তুলে দেবার জন্য,আর তোমাদের
প্রিয়ার গর্বিত জলজলে চোখ দেখার জন্য


আমরা ক্লান্ত,অনেক বেশি ক্লান্ত,ছুটি চাই আমরাও
আমাদের দাবি মানতে হবে,মানতে হবে স্লোগান
দিচ্ছিলো অনুকবিতারা বারবার,বেশি বাড়াবাড়ি
করছিলো তারা,থামালো কবিতাদের দলনেতা তাদের
আর দশ দফা দাবি সম্বলিত স্মারক লিপি হস্তান্তর
করে দশদিনের আল্টিমেটাম কাজ না হল প্রেসক্লাবে
সাংবাদিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক হুমকি দিলো সে


আমি অভিভূত হলাম তাদের এ আহ্বানে এ প্রস্তাবে
অভিনন্দন জানালাম সকল কবির পক্ষে,স্বাগতম পর্ব
শেষ করলাম,সমাপনী অধিবেশনে যোগ করলাম হে
প্রিয় কবিতারা হে দলনেতা,তোমাদের দাবী যৌক্তিক
কথা দিলাম,কথা দিলাম,তোমাদের ছুটির জন্য জাতীয়
কবি সমিতিকে,সকল কবিকে অনুরোধ জানাবো,সপ্তাহে
একদিন অন্তত ছুটিঘোষণার জন্য,যাতে তোমরা আর  
কবিদের শস্যবাটা পাটায় শস্য কণা পেশার মতো আর
পিষ্ট না হও,শুনে খুশী হলো না একটা অনুকবিতা,ঘাড়
ঘুরিয়ে তেড়ামী শুরু করলে দলনেতা শামসুর রাহমানের
এক বড়ো কবিতা তাকে ধমক দিয়ে থামালেন


বললাম প্রিয় কবিতাগন তোমাদের দাবী পূরণ হবে
বাড়ি ফিরে যাও তোমরা,রাত গভীর কিভাবে যাবো
বলে জামবু টাইপের দলনেতা ভাড়া চাইলো শেষে
দিলাম ভাড়া দিলাম তাদের দিলাম অবশেষে
প্রিয় কবিরা কবিতাদের ছুটি দিতে হবে কিন্তু!
রাজী আছেন তো?( হা হা হা) !



বাংলো
জেলা ও দায়রা জজ
সুনামগঞ্জ
রচনাকালঃ ০৫-১৫ মিঃ
তারিখ-২০-০৬-২০২০ ইং


বিঃদ্রঃ - প্রিয় কবি বন্ধুগন কবিতা লিখতে
লিখতে কেমন নিরামিষ নিরামিষ লাগছিলো।
তাই নিছক রসিকতা করলাম। ভাবলাম বিষয়
টি নিয়ে হয়তো কোনো সম্মানিত কবি কলম
ধরবেন না।সে জন্য সুযোগ টা হাত ছাড়া
করতে চাইনি।খাবারের সালাদ হিসেবে
দেখার জন্য অনুরোধ করছি। আর রম্য হিসেবে
দেখলেই চলবে। দয়া করে কেউ খারাপ মন্তব্য
না করলে খুশী হবো।সম্মানিত কবি সমিতি সহ
সকল কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায়।