সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতো
সন্ধ্যা আসে,কবি জীবনানন্দের এ অমর বাণীর মতো
দিনশেষে পাখি তার নীড়ে ফেরে চুপিসারে, পাখি তার
বাচ্চাদের নরম মায়াভরা পালকের নীচে আগলে রাখে
সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর চোখের দৃষ্টিতে
সমস্ত ঝড়-ঝাপটা বৃষ্টি-বাদল থেকে কোলের সন্তানকে
বাঁচাতে গিয়ে উপেক্ষা করে তার নিজের সুখ-শান্তি
আরাম-আয়েশ, আগলে রাখে রণক্ষেত্রের সফল
এক বীরের মতো,বড়ো দায়িত্ব পালন ক'রে ঠান্ডা
হয় মা পাখির হৃদয়


নিজের দেহ ভিজে চুপসে যায় একেবারে
ঝোড়ো হাওয়ায় হারিয়ে যায় ক্ষনিকের তরে
উড়িয়ে নিয়ে যায় তাকে প্রচন্ড বাতাসে
ভেঙে যায় তার সশব্দের ডানার পালক
আছড়ে পড়ে বাতাসে নীড় থেকে ধুলায়, তবুও
আবার আহত পাখি কষ্ট করে ফিরে আসে নীড়ে
আগলে রাখে বাচ্চাদের তার ভাঙা পাখনার নীচে
খুঁজে পায় ঠিকানা পাখি তার, পায় খুঁজে শান্তি আর
সুখের নীড়, ভরে যায় হৃদয় তার আনন্দে


কি চায় ডানা ভাঙা আহত পাখি তার বাচ্চাদের কাছে
কিছুই চায় না সে, কিছুই না, মা হিসেবে এযে
নিছক দায়িত্ব তার বাচ্চাদের প্রতি
বিনিময়ে চায় না সে কিছু, শুধু চায় বাচ্চাদের
শান্তি সুস্থতা, বেড়ে ওঠা, বড়ো হওয়া
আর এক সময় জাগতিক নিয়মে তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া
নতুন কোনো গন্তব্যে, শান্তির অন্বেষণে
এইতো স্বাভাবিক চাওয়া তার, এরচে বেশী কিছু নয়


সমাজ দেশ মাতৃভূমির জন্য ও ঠিক একই পিপাসা
রয়েছে কবি হৃদয়ে,আপন ভাবনা থেকেই ঝাপিয়ে
পড়ে তারা দেশ মাতৃকার জন্য
হৃদয়ের গভীরে অঙ্কুরিত অফুরন্ত শব্দের ভান্ডার থেকে
তৈরি হয় সমৃদ্ধ পিপাসার এ জ্বলন্ত ঐতিহ্য
এ পিপাসা মিটিয়ে নেয় তারা নিজ দায়িত্বে, ধোঁয়া উড়া
কবিতার শুভ্র শুদ্ধ যাদুমাখা পঙক্তিতে
চায় না কিছুই তারা, চায় শুধু শান্তি, হিম শীতল একটু শান্তি
আর একটা ছোট্ট সুখের নীড়
ভেসে যায় নিথর নিস্তব্ধ দেহে সাগরের নীল ঢেউয়ের সাথে
খুঁজে পায় সেই কাঙ্ক্ষিত স্বর্গ সুখ আর
শান্তির ঠিকানা


কবিতা তো শুধু কবিতা নয়, কবিতা তো শুধু লেখার
জন্য নয়, কবিতা তো একটা অনুভব, অনুভূতির গভীরতম
নরম ছোঁয়ার নাম, কবিতা তো হৃদয়ের ক্ষুধার্ত চিত্তের শান্তি
কবিতা তো একটা পবিত্র দায়িত্ব, দেশের ও তার মানুষের
প্রতি এক বিশেষ দায়িত্ব
যা পৃথিবীর ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে কামড় দিয়ে
ধ্বনিত হয়েছে কবি হৃদয়ে, কেঁদে উঠেছে কবি হৃদয়
বর্ষিত হয়েছে সব অমিয় বাণী, কলমের আচড় থেকে
ঝর্ণা থেকে,ঝরেছে অঝোরে, ঝর্ণা ধারার মতো
পাহাড়ের ওপর থেকে সমুদ্রের সীমান্ত পর্যন্ত


কবি চিত্তের ক্ষুধা তার শব্দের বাগানে ফুটন্ত ফুলের
সৌরভে মিটিয়ে নেয়, কবিতা তো কবিরই, সে তো
থাকবেই কবির জন্য
সে লিখবে মনের মাধুরি মিশিয়ে, হৃদয়ের হাসি-কান্না
আনন্দ-বেদনার সব কথা, প্রকৃতি-প্রেম সবুজ-ঘাস
বন-বনানী সব কিছু নিয়ে
রচনা করবে অমর বাণী আর যতো সব মহাকাব্য


তারপর ও থেকে যায়, থেকে যায় কিছু কথা
কবির জন্য, থেকে যায় অনেক কিছু সমাজ দেশ
মাতৃভূমি সার্বভৌমত্ব আর স্বাধীনতা নিয়ে
মেধা মননের অনন্ত ক্ষুরধার এ খেলায় মেতে উঠতে
হয় কবিকে, ধরতে হয় হাল, তুলতে হয় পাল
সমুদ্রের জাহাজের নাবিকের মতো


অসীম দায়িত্ব পালনের এ খেলায় কবি হয় নির্লোভী
নিরহংকারী, চায়না সে কিছু, দেশপ্রেমের স্রোতধারায়
প্রবাহিত হয় তার কলমের সুনিপুণ ধারা
পালন করতে হয় নেতার ভূমিকা তাকে, ধরতে হয়
কলম জাতির প্রয়োজনে, মাতৃভূমি ও দেশের তরে


কবি তো দেশ গড়ার কারিগর ও, তাই কবি শুধু তার
চিত্তের একার নয়, নয় শুধু কবিতার, সে শুধু কবিতার
জন্য কবিতা নয়, সে সকল মানুষের, নিঃস্বের গরীবের
দুঃখীর আর সকলের
আকাশের মতো উদার বিশাল হৃদয়ের অধিকারী সে
নিবেদিত হয় সে দেশ সমাজ জাতি আর বিবেকের জন্য


সে রকম কবি আর কবিতায় ভরে উঠুক আমার প্রিয়
সবুজ ঘাসের দেশ, প্রিয় বাংলা, প্রিয় দেশ আমার
জীবনানন্দের বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত আর জলাঙ্গীর
সব ঢেউয়ের মতো
কবিতা তো শুধুই কবিতা নয়!


বাংলো
জেলা ও দায়রা জজ
সুনামগঞ্জ
রচনাকালঃ ০০.৫৭ মিঃ
১৬-০৬-২০২০ ইং