কবিতো নিঃসঙ্গ নয়,কে বলে কবি নিঃসঙ্গ? হয়তো তার প্রিয়
জীবনসঙ্গী, প্রিয়তমা, কখনো কখনো নিরব বাক্যবাণে পাখির
সঙ্গে কথা কয়,হয়তো কবিকে ছেড়ে সংসার ছেড়ে চলে যায়
দূরে,বহুদূরে, হলুদ দিগন্তের ওপারে
যেমন কবি জীবনানন্দ দাশের প্রিয়তমা অদৃশ্য হয়েছিল ক্ষোভে
দুঃখে আর ক্ষুধার দুঃসহ যন্ত্রনায় তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো আর
একাকী সে কথা বলেছিলো নদীর জল আর আকাশের সাথে
তাতে কবির কি আসে যায়?
কিন্তু কবি জীবনানন্দ দাশ ও নিঃসঙ্গ ছিল না, বাংলার নদী
মাঠ-ক্ষেত আর ধানসিড়ি নদী আর শালিখ, চিল ছিলো তার
নিত্য সঙ্গী


গৃহিনীর ভাতের হাড়ির চাল যেমন ভরদুপুরে নাড়ার আগুণে
টগবগ করে লাফিয়ে লাফিয়ে ফুটতে থাকে একে অপরের
প্রতিযোগী হয়ে
কবির মগজে ও ঘিলুতে সেরূপ খেলতে থাকে লক্ষকোটি
শব্দ সৈনিকেরা,টগবগ করে ফুটতে থাকে চালের মতো,
আন্দোলন করে আর তেরী হয় নরম মোলায়েম সব শব্দ আর
নজরুল, রবি ঠাকুর আর কবি জীবনানন্দের সব কবিতা
প্রকুতি, নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়, শীতের ভোরের
কাঠাল তলার ও দুর-দুরান্তের রাস্তায়  উড়ে যাওয়া কুয়াশার
শাড়ী বিলের টলমলে জল শাপলা ফুল আর পানকৌড়ির
সতর্ক চাহনী সতেজ সজীব সদ্য গজানো সবুজ পাতা,
বৃক্ষরাজি


দলবেধে সীমাহীন দূরত্বে ছুটে যাওয়া পাখির সুমধুর কলতান
সম্পর্কহীন লক্ষকোটি জনতার ভীড় রাত্রি আর দিন, বাস-ট্রাক,
পথের ধুলো, ঝকঝক সুরে ট্রেনের ছুটে চলা, পুকুরের জল,
পদ্মপাতা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ছন্দে দোলা নাফুরানো ঢেউ
জাল দিয়ে পোলো দিয়ে হাওড় বাওড়ে গান গেয়ে হাজারো
মানুষের মাছ ধরা
গাছতলে বসে মনের খেয়ালে রাখালের বাঁশী বাজানো
গরুর গোবর দিয়ে গৃহিনীর বোড়ে ও ঘষি বানানো গ্রাম হতে
গ্রামে, দেশ হতে দেশান্তরে নির্বিকার ছুটে চলা,
আকাশের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে মেঘ বালিকার সাথে
কথা বলা
এসব ই তো কবির একান্তই কবির সাথী এরা, শুধু কবিতা
লেখার জন্যই তারা,এরপরে কবিরাই বলুন কবি নিঃসঙ্গ হয়
কি করে?


শব্দ, ডিঙ্গি নৌকা, ডোঙ্গা, নদীর ঘোলা জল, কলতলা, বকুলতলা,
হলুদ পাখি,ছাগল চরানো গ্রাম বাংলার সরল বালিকা,কবির
মগজের মধ্যে নিয়তই খেলতে থাকে,এরাইতো কবির বন্ধু, সাথী,
আত্মীয়স্বজন, এরাই আপনজন
কবি এদের নিয়ে কখনো ক্রিকেটে মারে চার ছক্কা, উইকেট তুলে
নেয় মাশরাফি সাকিবের আর ভয়ে কাঁপে বিশ্বের সব নামকরা
তারকা আবার কখনো বা ফুটবলে করে তিন-চার গোল পরাস্ত
হয় মেসী
এদের সামলাতে সামলাতে কবির দিন কাটে রাত যায় কেটে
এদের নিয়ে কবির অবিরাম আড্ডা মারা, নদীর তীরে হিমেল
হাওয়ায় বেড়াতে যাওয়া, হঠাৎ চিলের উড়ে যাওয়া,এরাই তো
কবির সব, কবির শব্দ, ছন্দ, সুর, তাল, লয় এতো সব থাকার
পরেও কবি নিঃসঙ্গ কোথায়? কবিতো নিঃসঙ্গ নয়!