এই যে জীবন কি সুন্দর,কি অপরূপ সৌন্দর্য্যের এ
পৃথিবী,কবিতার ধোঁয়ার কুন্ডলির মতো জীবন তার,
হয়তো পুরোটা ই ফুলের সৌরভ মাখা নয়,হয়তো
কুসুমাস্তীর্ণ নয়,হয়তো বা ফুলশয্যা ও নয় একেবারে,
তবু্ও এ জীবনে এই যে বেঁচে আছি শ্বাস নিচ্ছি,দুচোখ
মেলে বিধাতার সৃষ্ট রূপ রস সৌন্দর্য সবই অবলোকন
করছি,ভোগ করছি,এটাই বা কম কি!
কি বিপুল রহস্যেভরা এ জীবন ও তার সুমহান ঐতিহ্য
এ জীবন সমুদ্রে জাহাজের নাবিকের মতো তর্জনী উঁচু
করে সমগ্র সময় টা কাটিয়ে দিলাম,কি হলো কেনো হলো
এই করে ই জীবনসমুদ্রে পাল তুলে ছিনিয়ে এনেছি ডুবুরির
মতো সাগরের তলদেশের নীল মণি-মুক্তা


জীবনে নীলার সাথে কথা হলো,বিনিময় হলো ভেজা
আঁখি,ছলছল চোখ,ছোঁয়া হলো না দেখার ছলে তার
সুকোমল আঙুল বিকেলের নরম হিমেল হাওয়ায় নদীতীরে
ঝাঁক ঝাঁক বালিহাঁস আর বুনো কবুতরের ঠিকানাহীন
গন্তব্যে উড়ে যাবার মুহূর্তে,দেখা হলো গাছ পালা প্রকৃতি
আকাশ প্রেম,সবই তো দেখলাম আমি,ঘর সংসার বাড়িঘর
সবই হলো দেখা,তবুও মায়াময় রহস্যেঘেরা সুন্দর এ
পৃথিবীতে আমি আজ বড়ো একা


জীবন নিয়ে অবিরাম অন্তহীন পথচলা ছুটেচলা আজ আর
নেই,ফুল পাখি ফল নদী মাঠ ঘাট আকাশ দুর পাল্লার
গাড়ীর হুইসেল বাজিয়ে দূরন্ত ছুটে চলা শিশুর হামাগুড়ি
দেওয়া দূরের গ্রামের বাড়ি নদীর কুলকুল ধ্বনি কান্না
রাখালের একপাল গরু নিয়ে ছুটে চলা কাশবন,কতো কি
ই না দেখলাম এ পৃথিবীর বুকে,ভেসে এলো শান্তির সুর
দুঃখের করুণ রাগিণী আর্তী,আমার মনে দাগ কেটে গেলো
সবই এ ক্ষুদ্র জীবনে,কতো কি ই না দেখলাম আমি


নিভে গ্যাছে আশার দীপশিখা আজ,বিষাদ ছুঁয়েছে এ মন
চোখের দৃষ্টি নেই শরীরের শক্তি নেই শয্যাশায়ী আজ আমি
আমার জীবনের জীর্ণশীর্ণ কুঁড়েঘরে, দুঃখের বিছানার সাথে
লেগে গ্যাছে সেদিনের সেই অশ্বের গতিতে ছুটে চলা টগবগে
তরুণ জীবন,কেউ খবর রাখে না আমার, আজ ঐ দূর
নক্ষত্রের কাছে ও নেই কোনো প্রশ্ন আমার,নিরব নিস্তব্ধতাই
আজ আমার সঙ্গী,নৈশব্দের ডানা মেলে জানালার ফাক
দিয়ে তাকিয়ে থাকি ঐ দূর আকাশের দিকে,মাঝে মাঝে
দু চারটি শালিক উকি মারে সায়াহ্নের জানালায়,দাঁড়িয়ে
থাকে কিছুক্ষণ,তাকিয়ে থাকে নীরবে,তারপর কথা বলে
শোনায় দু চাট্টে গান,তারপর হতাশার বুকচিরে উড়ে যায়
ঐ দূর কুয়াশার প্রান্তরের দিকে,প্রতিবেশি বালিকা এসে
মাঝে মাঝে জানতে চায় কি হয়েছে আমার,শুনতে চায়
কবিতা,আমি তাকিয়ে থাকি ঐ দূর সাগরের ঢেউয়ের দিকে
নিষ্পলক দৃষ্টিতে


আজ আর নেই কেউ আমার,নেয় না খোঁজ কোনো তার
জীবন সায়াহ্নে এসে আজ হতাশা শূন্যতা হাহাকার আর
দীর্ঘশ্বাসের চাদরে মুখ ঢেকে বারবার তারুণ্যের শব্দের
বাগানে ঢুকে পড়ি,জীর্ণ শীর্ণ কুড়েঘরে ঢুকে পড়ি আমার
আজ আর আমার প্রিয় কবিতা গুলো ও নেয় না খোঁজ
কোনো তার,নিঃশব্দের বেড়াজালে বন্দী আমি আজ
জীবনের সায়াহ্নের কালশিটে চাদরে মুখ ঢেকে বারবার
তারুণ্যের শব্দে গাথা সময়ের চরম কোলাহল কে খুঁজে
ফিরি,এ বসুধা রঙ্গ মঞ্চের সবই আজ চৈত্রের কাক ফাটা
রোদ,সবই আজ বিষন্ন,সবই এলোমেলো,সব নির্জলা
মিথ্যে,সব কিছু আছে আবার নেই সবই ক্ষনিকের তরে
এ পৃথিবীর পরে


দুঃখের মায়াভরা জল ছাড়া চোখে আজ নেই কিছু আর
হাহাকার শূন্যতা বিষাদ আর দীর্ঘশ্বাস হলো জীবনের হিম
শীতল শয্যা,না ফুরানো বিকেলের বেদনার বিষাদময় সুর
এ নিয়ে যেতে হয় যেতে হয় শূন্যতার এক অনন্তপুর!