প্রকৃতি কাঁদে তবে বৃষ্টির মতো ঝরঝর ধারায় সে কাঁদেনা
শিশিরের শব্দের মতো নদী হতে কুয়াশার উড়ে যাওয়া
শব্দের মতো সে কাঁদে
কাঁদে কারণ প্রকুতির ও যে হৃদয়ছোয়া কষ্ট আছে
গাছের ও কষ্ট আছে,
কিন্তু আমরা তার কষ্ট দেখি না, দেখতে পাই না
কারণ সে কষ্ট দেখার জন্য তৃতীয় একটা নয়ন লাগে
সেটা কি আমাদের আছে?
আছে তার কচি ডাল ভাঙ্গার কষ্ট,প্রচন্ড ঝড়ের তোড়ে ডাল
ভেঙ্গে গেলে গাছ,গাছের ডাল,ভাঙ্গা অংশের মূল,গাছের
পাতা সবাই কষ্ট পায় আর কাঁদে
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বলেছেন,'গাছের জীবন মানুষের জীবনের
ছায়া মাত্র'
কিন্তু আমরা ছায়া না দিয়ে বরং বৃক্ষ উজাড় করে গাছকে
কষ্ট দেই


কষ্ট আছে নদীর ও তার কষ্ট বুঝার মতো চোখের দৃষ্টি
আমাদের নেই
এইযে নদী তার ওপর চাক্ষুষ করার মতো কতোরূপ অথ্যাচার
আছে, কিন্তু কে রাখে তার খবর ?
তার ওপর দুই তীরের নানা ধরনের গাছের পাতার প্রাকৃতিক
পতন,ঝরে পড়া পাতা,মানুষের অসহনীয় নানা রূপ অত্যাচার
গৃহিনীর থালা বাটি মাজা, এটো বাসন ধোয়া,স্নান করা,গরুকে
স্নান করানো, আবর্জনা ফেলা,নৌকা, লঞ্চ,স্টীমার চলার কষ্ট
ময়লা আবর্জনা ফেলার কষ্ট, দূর হতে দূরান্তরে ভেসে যাওয়া
অসংখ্য বর্জসহ কতো রকমের অত্যাচার নিরবে সয়ে যেতে হয়
তাকে, থাকে না বলার কিছুই তার
কে বুঝবে সর্বংসহা নদীর এ কষ্ট?


আছে গৃহিণীর কষ্ট, আগুণে পুড়ে ঘেমে একাকার হয়ে
রান্নার পরও স্বামীর রান্না পছন্দ না হওয়ার কষ্ট, কৃষাণ-কৃষাণীর
কষ্ট,বর্ষায় ভিজে রোদে পুড়ে ঘাম ঝরিয়ে ও কাঙ্খিত ফসল
ঘরে তুলতে না পারার কষ্ট,ভাই-বোনের, স্বামী-স্ত্রীর,বন্ধু-বান্ধবীর
পরস্পরকে নানাছলে আঘাত দেবার কষ্ট, আছে সবুজ ঝাউবনের
কষ্ট, আছে নীল কষ্ট,সাদা কষ্ট,হলুদ কষ্ট
হরেক রকমের কষ্ট আছে পৃখিবীর মানুষের মনে
আর কজন মানুষ ই বা এসব কষ্ট জানে?


দূর্ঘটনায় কারো গাছের পাতার মতো সবুজ জীবনের অঙ্গহানি
হলে আছে তার কষ্ট, যে অঙ্গে ক্ষত সৃষ্টি হয় আছে তার কষ্ট,
আছে অপারেশানের কষ্ট, আছে তার রক্ত ঝরে যাবার কষ্ট,
আছে থরথর করে কেঁপে ওঠার কষ্ট
কথার মিষ্টি সুরে মিষ্টি কথায় মানুষ খুশী হয়
হৃদয়ে জাগে স্পন্দন, ললনার মনে দাগ কেটে যায়
পাখীরাও শুরু করে মধুর কলতান, কিন্তু কথার ও কষ্ট আছে
কষ্ট আছে কথার পাল্টা কথায়, কথা দিয়ে আঘাত করে
মনে ব্যথা দেবার কষ্ট আছে
আছে কথা দিয়ে কথা না রাখার কষ্ট


প্রেম স্বর্গীয়, মিষ্টি সুধা পান করে যার সাগরের লোনাজলে
সাগরের উত্তাল তরঙ্গের সাথে উদ্দাম নৃত্য করে প্রেমিক
প্রমিকা কিন্তু তারপরও আছে মনে ব্যথা দেবার কষ্ট
প্রেমিকার মনে প্রতারণার কষ্ট, প্রেমিকাকে  অকারণে
সাগরের মাঝখানে ছেড়ে দেবার কষ্ট আছে


কাজ করে মানুষ খুশী হতে চায়, চায় পারিশ্রমিক বা মূল্যায়ন
এর কোনোটা না পেলে মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়
ভেসে যায় অথৈ সাগরে, হতাশার তরী বেয়ে ধাবিত হয়
অজানার উদ্দেশ্যে, ভেড়ে না তরী আর তীরে
আর তখনি গ্রাস করে তাকে রাজ্যের যতো সব কষ্ট, কতো
কষ্টই না মানুষের বুকে পাথর চাপা দিয়ে আছে
মানুষকে বাঁচতে হয়, এসব নাফুরানো কষ্টের সাগরের নাবিক হয়ে


গাছ রোপণ করে মানুষ ফলের আশায়, চায় তার বাগান ভরে উঠুক
পৃথিবীর সব সবুজ গাছে গাছে, সুশোভিত হোক নানাফুলে
সৌরভ ছড়িয়ে পড়ুক এ সংসারে কিন্তু যদি ব্যত্যয় ঘটে
তার শ্রম ও মেধার ফল যদি সে না পায়, তখনই ভেঙ্গে ছারখার
হয়ে যায় তার হৃদয়, কষ্টে কেঁদে ওঠে তার তাজা প্রাণ
হয়ে যায় নিস্তেজ ডানা ভাঙ্গা শালিকের মতো
আছে ফল না পাওয়ার কষ্ট, এ কষ্ট আছে মানুষের


সন্তান বাবার জীবনের কাঙ্খিত সম্পদ,এরচে আর নেই কিছু মহান
তার জীবনে
সে চায় সন্তান তার গোলা ভরে দেবে ধানে,শস্যে,পুকুর ভরে যাবে
তার মাছে, শোভিত হবে তার সংসার ফুলের মৌ মৌ গন্ধে
যদি আকষ্মিক তার এ স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়, অলৌকিক কোনো ইশারায়
যদি বাবাকে তার সন্তানের লাশ বহন করতে হয় তার কাঁধে
তবে এ নির্মম ব্যথা-বেদনার ভার বইবে কিভাবে বাবা?
কে হবে শরীক বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ বহনের?
কষ্ট আছে বাবার, সন্তান অবাধ্য হলে ও কষ্ট আছে বাবার, যদি
সন্তান গাজাখোর, নেশাখোর হয় যদি হয় সে সন্ত্রাসী অথবা খুনী
তবে বাবার এ সাগরসম কষ্ট কে নিবে কার কাঁধে? বাবার কষ্ট আছে


এ সংসারে সুখের মূল চালিকাশক্তি শারীরিক সুস্থতা
সুস্থ হলে মানুষের ঘরে হৃদয়ে রজনীগন্ধার সৌরভ ছড়ায়
মানুষ হয় শক্ত, পোক্ত, হৃদয়োদ্দত পুরা পৃথিবী কে সে চায় তার
হাতের মুঠোয়
চায় জয় করতে সমগ্র বসুধাকে কিন্তু যদি হয় অসুস্থ
কাতরাতে থাকে হাসপাতালের বিছানায়
পৃথিবীর সব কিছু হবে তার  কাছে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড
অসুস্থতা জনিত এ কষ্ট আছে, আছে এ কষ্ট মানুষের
জীবনে বেঁচে থাকতে হলে খাবারের প্রয়োজন আছে
খাবারের বিস্তর আয়োজনে মন খুশীতে নেচে ওঠে
কিন্তু যারা খাবার পায় না খেতে পায় না
খাদ্যাভাবে যাদের বুকের হাড় বেরিয়ে যায়, তাদের কষ্ট কে দেখবে?
কে বুঝবে কষ্ট তাদের?


ফুটপাতে ছিন্নমুলদের থাকার কষ্ট আছে, ঝড়বিষ্টি রোদ যাদের
চিরসাথী, মাথার ওপর নেই কোনো ছাদ, কে বুঝবে তাদের কষ্ট?
অনেক আদরের গৃহপালিত পশুর মৃত্যুজনিত কষ্ট আছে
কোনো পশুর মৃত্যুতে প্রভুর কষ্ট অসহনীয় হয়ে ওঠে
অফিস আদালতে সময়মতো কাজ না পাওয়ার কষ্ট আছে
সময়মতো ফাইল ঘোরে না ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না
দেখা না করলে ফাইল মুভ করে না অফিসে ঘুরতে ঘুরতে স্যুর
তলা খয়ে যায়, এ কষ্ট আছে মানুষের

যে রমনীর নির্ঘুম রাত কাটে অর্গাজম না হওয়ার যন্ত্রণায়
যার চোখের নীচে অত্যাচারের কালি জমা দেখেপ্রতিবেশী
রমনী প্রশ্নবিদ্ধ করে দুচোখ দাড় করায় আসামীর কাঠ গড়ায়
কে দেখবে তার কষ্ট?
যে স্বামী কাজ শেষে বিছানার একদিকে মুখ ঘুরিয়ে
সচেতনভাবেই এড়িয়ে যায় তার সঙ্গীকে
আপন ভেবে একান্ত করে নেয় কোল বালিশকে, যেন সে চেনেই
না তাকে
কে দেবে এ রমনীর কষ্টের জবাব? এ রমনীরা সারা জীবন কষ্টেই থাকে।