জ্বলছে আগুন জগৎজুড়ে— দাউদাউ, দাউদাউ,
চারিদিকে আহাজারি— হাউমাউ, হাউমাউ।
খ্রিষ্টান মরে, হিন্দু মরে, মরছে মুসলমান!
ভাবি না কেউ, মানুষ মোরা— এক সমান।


প্রতিযোগিতায় লড়ছি মোরা, কার কতো অস্ত্র!
শক্তি বাড়িয়ে কে করবে কাকে ভীত-সন্ত্রস্ত।
মানুষ মারতে বানাতে পারে— কে কতো কামান,
ভুলে গেছি হায়, মানুষ মোরা— এক সমান।


রাহুর দশায় বাহুর বড়াই, কার হাত কতো প্রশস্ত,
কাকে বানাবে দাবার ঘুটি, কে হবে কার দ্বারস্থ।
কার চেয়ে কে শ্রেষ্ঠ অতি, ভাবনা-পাথরে শাণ!
বুঝি না কেউ, মানুষ মোরা— এক সমান।


ধর্ম দোহাইয়ে চেতন হারাই, রক্ত গঙ্গায় স্বর্গ খুঁজি,
ক্ষমতার মোহে অবচেতন, পুস্তকেই সব রুটিরুজি।
বড়ত্বের দাপটে সাঁতরে বেড়াই, গাই বৈষম্যের গান!
সুর নাই কণ্ঠে, মানুষ মোরা— এক সমান।


পবিত্র বীণায় বীভৎস সুর, অন্যায় গড়ে সভ্যতা,
মারার ফাঁদে শান্তি খুঁজি, এ কেমন ধৃষ্টতা?
শ্বাপদ হয়ে দংশী মানুষ, নাই ভালোবাসার তান!
লেখায় নাই, মানুষ মোরা— এক সমান।


কাঁদি সবাই জাত-ভাই মরণে, ভ্রান্ত চোখের জল,
মতের অমিল হলেই ত্রিশূল-তলোয়ার, হত্যা-কতল।
‘সাফ করে দে সব অধার্মিক, মুরতাদ-নাফারমান!’
দেখি না চেয়ে, মানুষ মোরা— এক সমান।


চশমা চোখে তকমা লাগাই, তুই মুশরিক-মুনাফিক,
দূষিত বেইমান, জারজ বাচ্চা, হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ!
আমিই হলাম উত্তম অতি, তোরা সকল কীট-প্রাণ,
পুণ্যচিত্তে বলি না, মানুষ মোরা— এক সমান।


কোন নবি সত্য অতি, কোন অবতার নিষ্পাপ শিশু,
কৃষ্ণ-বৌদ্ধ-রাম, না কি মুহাম্মদ-মুসা-যিশু?
কে হলেন স্রষ্টা— আল্লাহ-ঈশ্বর না কী গড-ভগবান?
বিশ্বাস নাই হৃদয়ে, মানুষ মোরা— এক সমান।


আমার ইবাদত সার্বজনীন, আজান অথবা উলুধ্বনি,
আমার প্রার্থনালয়ে আছে শুধু স্রষ্টার অনুগ্রহ-খনি।
প্রমাণ করি ভাইকে মেরে, কার কতো খাঁটি ইমান!
ভাইকে বলি না, মানুষ মোরা— এক সমান।


মানুষে মানুষে টিকে থাকার দ্বন্দ্ব, দু'দিনের দুনিয়ায়!
বুদ্ধির লড়াইয়ে সিংহ গর্জন, শক্তিহীন দুর্বল কায়।
ধর্মাবরণে সাধুর সাজ, অন্তর ভরা ভান!
জ্ঞান-বিচারে নাই, মানুষ মোরা— এক সমান।


এক জমিন কাঁটাতারে বিভেদ, একই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,
ভাইয়ে শত্রু ভাই, লাল রক্তে ভাগ— কৃষ্ণ-শ্বেতাঙ্গ।
দৌড়ে খুঁজি হেথায়-সেথায়, চিলে নিয়েছে যে কান,
খুঁজি না কেহ, মানুষ মোরা— এক সমান।


কোরান-বেদ-বাইবেল পড়ে হচ্ছি অমানুষ, সবে;
কেতাবে-কেতাবে যুদ্ধ কেন, কেতাব কার জন্য তবে?
লড়ি কেন, মরি কেন, কীসের তরে হচ্ছি মহান?
উত্তর খুঁজে দেখো, মানুষ মোরা— এক সমান।


কতো অবতার, কতো পয়গম্বর আসলেন বিলাতে শান্তি,
রয়ে গেল যতসব ফেতনা-ফাসাদ, অন্ধ-কালা-ভ্রান্তি।
ঊর্ধ্বালয়ে সত্য স্রষ্টা, সে এক ঐন্দ্রজালিক মহিয়ান!
গড়েছেন মানুষ নিজহাতে— ধর্মে-বর্ণে সকলে এক সমান।