আমি চেয়ার বলছি,
শুনতে পাচ্ছেন ?
আমি একটা এক পা ভাঙ্গা প্লাস্টিকের চেয়ার
পরে আছি
রতন ডেকরেটরের পেছনের ভাগাড়ে।
আমি একা নই সাথে আরও আছে
ভাঙ্গা চেয়ার, মাইক, স্ট্যান্ড ,ছেঁড়া তেরপাল,
বাতিল তারের জঞ্জাল।
নেহাত গল্প করবার খাতিরে ওদের সাথে পরিচয় হয়েছে
সেটা বললে বললে ভুল হবে ।
তবে গল্পটা কম বেশী সবার এক ই রকম ।
কোথায় যেন এক অদ্ভুৎ মিল।
নিজের টাই বলি,
ছিলাম চকচকে পালিশ করা চেয়ার,
আশা ছিল কোন মধ্যবিত্তের বসার ঘরে ঠাই পাবো।
হ্যাঁ সাধ্যের মদ্ধেই স্বাদ আর কি।
বিধি বাম ওটুকু ও হল না।
রতন ডেকরেটরের রতন মিয়া সের দরে কিনে নিয়ে এলো।
যাহোক ভাবলাম যাক এবার অন্তত
বিয়েশাদিতেই যাব।
খারাপ কি ?
তবে ওটা ভুল ছিল জানেন,
শুনলাম সস্তা প্লাস্টিকের চেয়ার নাকি সভা সমিতিতেই ভাল চলে,
যাহোক তাই সই,
প্রথম যেখানে গেলাম
কোন এক স্কুলে কি এক নাকি মিটিং হবে ,
ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এলো, কি চমৎকার ।
এক মিষ্টি মেয়ে এসে বসলো আমার উপর যেন হালকা এক পালক।
কি যে ভাল লাগছিলো।
হঠাৎ কোথা থেকে বিশ্রী একটা লোক এসে মেয়েটাকে তুলে দিল
আর আমাকে নিয়ে চলল মঞ্চের দিকে
সাথে সাথে আরও কতোগুলো বিশ্রী হাত আমাকে ছুলো,
ঘৃণায় আমার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
কিন্তু তখনও বাকী ছিল
মঞ্চে আমাকে বসাতেই
এক লোক বলল “আরে নেতাকে বসতে দাও”।
আমি কখনও নেতা দেখিনি ,
তবে যে প্রানিটি আমার দিকে এগিয়ে এলো
তাকে দেখে আমার এই দুনিয়ার কোন জীব বলে মনে হল না জানেন
আমার সারা শরীর কেঁপে উঠেছিলো।
পাগুলো বেঁকে যাচ্ছিল।
যেন জগদ্দল কোন পাথর চাপানো হয়েছে আমার উপর।
যাহোক সেদিন কোনোভাবে প্রানে বেঁচে গিয়েছিলাম।
তবে রাতে স্টোরে এসে দেখি,
সেদিন আমার সাথেই যে মাইক গুলো গিয়েছিলো
তাদের একটা কি বিশ্রী ভাবে দুমড়ে মুচড়ে পরে আছে।
বিষাক্ত হয়ে গেছে পুরো শরীর।
তাঁর খসে এসেছে কোথাও কোথাও।
জ্বলে গেছে এখানে সেখানে ।
পরে জেনে ছিলাম সেটা নাকি নেতা মশায়ের সামনে ছিল।


শেষদিনের কথা বলি,
আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক দিন
এই মাত্র গতকাল
গিয়েছিলাম বিশাল এক মাঠে
কিসের যেন সভা টভা হবে,
বড়ো ব্যনারে অধিকার, হাতিয়ার কি কি যেন লেখা ছিল
যাই হোক
শুনলাম সেখানে নাকি আরও বড়ো নেতা আসবে,
শুনেই ভয়ে আমি কুঁকড়ে গেলাম।
মিছে মিছেই চেঁচাতে লাগলাম,
ভুলেই গিয়েছিলাম আমি একটা প্লাস্টিকের চেয়ার
আমার মুখ নেই।
সভা শুরু হল,
নেতা নাকি তখনও এসে পৌঁছাননি।
আরও যেসব ছোট ছোট নেতারা ছিল
তারা একে একে বসতে লাগল আমার আসে পাসের চেয়ারে
আমি তাদের আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম।
আরও শুনতে পাচ্ছিলাম মাইকের হাহাকার।
সামিয়ানার কাপর যেন চিৎকার করে বলছিল আমাকে মুক্তি দাও।
ভারী তেরপাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছিল
রক্তাক্ত আহাজারি ।
না সেটা কেউ শুনতে পায়নি , পায় না কখনও।
এবার বেশ শোরগোল শুনা গেল
বড়ো নেতা এসেছেন
যথারীতি আমাকে আরও কতগুলো নোংরা হাত টেনে নিয়ে চলল।
সেই নেতা আমার দিকে এগিয়ে আসছিল পিশাচের মতো
আমি ভয়ে থর থর করে কাঁপছিলাম,
আসন্ন পরিণতির কথা চিন্তা করে আমার প্রাণটা ফেটে যাচ্ছিল চিৎকার করার জন্যে।
তারপর,
আর কিছু মনে নেই।
যখন চোখ খুলি
আমি তখন রতন ডেকরেটরের পিছনের সেই ভাগাড়ে।
একা নই সাথে আরও আছে
ভাঙ্গা চেয়ার, মাইক, স্ট্যান্ড ,ছেঁড়া তেরপাল,
বাতিল তারের জঞ্জাল।
তারা সবাই আহত।
কেউবা নিহত।
তবে সবার একটা অদ্ভুত মিল
সবাই অথর্ব।