আমি সেই রঞ্জনা
-----
কলমে- রমেন মজুমদার,
১৫/০১/২০২৪


অন্ধকার পাথার বেয়ে এলে সোনালি রোদের বারান্দায়,
মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে উচ্চারিত হলো,
-একগ্লাস জল চাই।
তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এলো পশ্চিম আকাশে;
নিশুতি সন্ধ্যার এই মোহনীয় ক্ষণে একটু
বসতে চাই
তোমার কলহমুক্ত বারান্দায়।


আকাশ আঁধারের কোলজুড়ে তারার মেলা বসেছে;-
ব্যথিত আবেগ নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে কিছু প্রাণ!
বস্তির আবেগ কেউ বুঝতে চায় না,
খেতভরা ফসলের কোলে কৃষকের উজ্জ্বল মুখ;
জানিয়ে যায় বেচেঁ থাকার আশ্বাস।


নীলাভ রঙের অশ্রুজলে ঢেউ খেলছে
হাজার প্রাণের গহীনে!
কুয়াশায় ঢেকে গেছে নক্ষত্রের বিভাবরী;
চাঁদভরা আলোর হাসি নেমে যায় জলধারায়-
পথখোঁজা বেভুল উদাস পথিক আমি,
খুঁজেছি তোমায় জোনাকির ডানায়...।


কল্লোলিত হ্রদের বন্দি জলে নিজেকে হারাই বারবার;
জীবনকে খুঁজে পাওয়ার আসায় এসেছি তোমার দুয়ারে,
ফিরায়ে দিও না উত্থিত আবেগ !
এ'দেশে সুখ আছে,মাঠ আছে,ধান আছে,
প্রাণ আছে কত কত মানুষের,
তবুও বিবেক কেন এতো দুর্বল!


অভাবের তাড়নায় কোথাও মরে গেছে সুখ!
কোথাও ভাতভরা পেটে বিসর্জন হয়েছে বোধের!
হাজার পথের কত অলিগলি!
কত ল্যাম্পপোস্টের তলায় পৈচাশিক প্রবৃত্তি!
কত নারীর আর্ত চিৎকার!
তবুও ফসলে ফসলে ভরে যায় মাঠ।


তোমারে খুঁজেছি ফসলের বুকে,
ধান সিঁড়ির মুহ্যআঙিনায়;
কৃষকের ঘামঝরা গামছায় খুঁজেছি তোমারে,
একটু সুখের আসায়।


বিমূর্ষ আহত পাখির রক্তের ডানায়
বেঁচে থাকার এক চিলতে আশ্রয়...
সন্ধ্যার আঁধার ভিজে যায় শিশিরের ঝরে,
তবুও জীবন খোঁজে জীবনের আশায়...।


দ্বাদশীর বাঁকা চাঁদ কখন যে উঁকি দেয় মাথার উপরে;
হ্রদজল স্থির প্রাণ,আবেগ ঘনিত সুখ!
সব কিছু হারিয়ে যায় ক্ষুধার তাড়নায়!
সংসার বৈষম্যের সম্প্রীতি কেন আজ অসুখে আক্রান্ত!
কেন ক্ষয়ে যায় পৃথিবীর ভালোবাসা ?
কেন চাঁদ স্বল্প আলোয় ঢেকে দেয় মাঠ?
কেন আজ হাসিগুলো ম্লান হয়ে যায়?


রক্তিম চিতার দহন পুড়ে যায় মন!
বকুল মালা শোকের আস্ত আঙিনায়
হিম হওয়া বোধগুলো মরে যায় বিবেকের ঘরে!
উত্তর শিয়রে জ্বলে বিদায়ের চিতা!
বিউগলে সুর ওঠে কান্নার ধ্বনি!


কড়িরমতো চাঁদমুখ নজর ফিরে না আর
মানুষের প্রতি।
ছাইহয়ে উড়ে যায় যতকালো ধোঁয়া!
শতাব্দীর আবিরের জলে বেয়ে পড়েস্তনের বোঁটায়,
আদ্র করুণার সুরে হেঁটে হেঁটে এসেছি কতবার তোমার এই খোলা বারান্দায়;
ছুঁটে এসেছি পৃথিবীকে খুঁজতে।


পৃথিবী একবার যা পায়,হারায় বারবার!
আমি রঞ্জনা খুঁজতে এসেছি প্রেম,
একজন কৃষকের সুস্থির পান্তার জলে
খুঁজে বেড়াই পিপাষার একবিন্দু জল।
তবুও চাই সুখে থাক তারা,
যারা ছিন্নমূল হয়ে ধর্ষিতা হয় ল্যাম্পপোস্টের অন্ধকার ছায়ায়।


আমাকে চিনে নাও তোমরা,
যৌবন হারানো এক ধর্ষিতা বীরাঙ্গনা!
একাত্তরে শুয়ে থাকা বধ্যভূমির বুক চিরে
ফিরে এলাম তোমাদের কাছে
আমি বাঁচতে চাই---
তোমাদের সেই যৌবতী রঞ্জনা।
--- সমাপ্ত--