বিদায় নারী বিদায়
-------------
রমেন মজুমদার,04/08/22

আয় সজনী হলুদ বাটি কন্যা হলো যৌবতী,
যাবে ছেড়ে বাবার বাড়ি,চিরান্তনের এই রীতি।
প্রাণে খুশি, মনে জৌলুস;লাজুক চোখে রাঙা ভাব!
মরণ খেলায় মাতবি মেয়ে; এটাই যে রয় প্রাপ্য স্বভাব।

বাড়ি ভর্তি নাই-নাওরি;সঙ্গে করুণ বাজছে সানাই!
সাজবে আসর, বাজবে বাঁশি; জানে বুঝি আজ সবাই?
ভিতর বাড়ি মায়ের কান্না!বাইরে দেখি হৈ হুল্লুর!
আজকে বুঝি কন্যার বিদায়! যাবে সেতো অনেকদূর ।
------
হবে বিয়ে কন্যা তোমার; জীবন যে আজ একটাই-
মায়ের কোল খালি করে যাবে; ভাবছ বসে সেকথাটাই !
আনতে ঘাটে স্নানের জল; শুদ্ধ স্নান উপাচারে;
চিরতরে স্নান করে যাও;  মরণ বিদায় একবারে ।

আজকে তোমার জীবন প্রদীপ, জ্বলবে আলো রাঙা করে;
আপন ঘর ছেড়ে আবার;পরকে আপন নতুন করে।
বুকের মধ্যে কষ্ট মায়ের,জন্মদাতা কষ্ট পিতার!
শোধ হবেনা ঋণের কলসি; তুমি যতই কাঁদো আর।

একঘর ছেড়ে যাও চিরতরে; শেষের মরণ নব্য বাড়ি !
কন্যা জন্ম স্বার্থক কান্নায় এইত নিয়ম রয় তারি।
অজানা এক রাজপুত্তুর আজকে জীবন সঙ্গী হবে ;
মোহের জালে মায়ের কথা;চিরতরে ভুলেই  যাবে।

চিরায়িত নিয়ম এটাই; বসবে বিয়ের শেষ পিঁড়িতে,
হাতে শাঁখা ভালে সিঁদুর! দিবে আরও তুমি সিঁথিতে।
বাজবে বাঁশি করুণ সানাই,খানাপিনার হবে আসর;
একদিন বাদেই মরণ রশি! স্বামীর সঙ্গে নব্য বাসর।

সাতপাঁকের পর রইল সাতপাঁক; শেষ বিদায়ের শেষ ক্ষণে!
রঙ্গিন স্বপ্নে বিভোর তুমি; পড়বে না রে পিছন মনে।
শুভক্ষণের পর্ব শেষে ; জীবন নতুন শুরু ভাবলে!
এই বিদায়টাই একবার ভাবো, মরণখেলায় জড়ালে !

উদাস চোখে চাউনি তোমার দুমুঠো চাল ফেলে দাও;
মায়ের ঋণ শোধ করে দাও তিন কথাকে তাই বলে নাও
বাবার বাড়ি,মায়ের বাড়ি ছেড়ে;শ্বশুর বাড়ি তুমি যাও;
দুদিন পরে ছেলের বাড়ি;তোমার বাড়ি কোথায় পাও ?

কালকে ছেড়ে আজকে তুমি;নব্য বঁধু হলে যেই -
কোন বাড়িঘর আপন করে;কেমন করে পেলে সেই ?
তাইতো বলি নারীকুলে বিবাহটাই মরণ খেলা!
কাঁদতে কাঁদতে নারীকূলে তোমার ডুববে শেষের বেলা।।

বিয়ে নামক স্বার্থক জীবন; জন্মের পরে তাইতো হয়;
সৃষ্টি বৃদ্ধি রক্ষা কল্পে তাইতো বিধির লিপিতে রয়।
হাসিখুশি এ'জীবনটাই জন্মমৃত্যুর শেষ খেলাঘর!
ভাবছ বসে আপন সবাই ? কিন্তু সবাই তোমার পর।

জীবন ফাঁকা,বিয়েও ফাঁকা;অনিত্য এই সংসার!
জন্মভবে হলেই পরে, মরণ লেখাও তাই চিরন্তর!
এইতো ঘর! সবাই পর! কে কবে কার হয় যে আপন ?
হাসি কান্নার এই খেলাঘর; স্বার্থ লুটি ইচ্ছা যেমন !!

নারীর জীবন কষ্টভারী;নারীই সেরা সৃষ্টির পরে ;
সৃষ্টিবৃদ্ধি রক্ষা হেতু বিয়ে নামক সিল মোহরে ;
ক্ষীণ সময়ে আসা-যাওয়া নাকের ডগায় মরণ ঝুলে;
জন্মপরে মরণ হলে কেউ কী তোমার কথা বলে ?

মা কাঁদেরে আঁচল পেতে ! কন্যা কাঁদে সম্মুখে যেই...
ঋণের দায় শোধ করে দেয়; তিনমুষ্টি চাল
ফেলে সেই ;
কোন কালের কোন নিয়ম এটা ? শোধ হয় কী মাতৃ ঋণ ?
করুণ কান্নার অশ্রু ফেলা ; বাজছে ধ্বনি ব্যথার বীণ।

হায়রে জীবন হায়রে ব্যথা! হায়রে নারীর রোদন জল!
নামছে যেন অশ্রু ফেলার চিরন্তনী বন্যার ঢল !!
কাঁদো নারী যত পারো; কান্না তোমার ভাগ্যে লেখা !
আর হবেনা তোমার সাথে এ'জীবনে শেষের দেখা ।।
          *****    *****  ****