দিন গড়িয়ে যায়
-----
রমেন মজুমদার
নিয়মের খাতায় উল্টে যায় হিসাবের পাতা
জীবন বাহিকায় বয়েচলা সময়
কত দ্রুত ফুরিয়ে যায়,
আজও ভাবনার অতলে ডুবদিলে সন্ধান পাই
রেখে আসা জীবনের স্মৃতির দৃশ্য
দেখতে পাই উদাসী প্রেমের দিনগুলি।


কত অনাহারী মানুষের আর্তনাদ!
বৈশাখী ঝড়ে উড়ে যাওয়া ছনেরচালা
তেঁতুলগাছের ডালে,
উঠোনে দেয়া আধপুরান ছেঁড়া শাড়ির সাথে বুকের অন্তর্বাস ঝুলছে সেই মাঠের
বট গাছটায়;-
কতনারীর যৌবনে বৈধ্যব্যের করুণআর্তনাদ!
উপোসী জীবনের হাহাকার মুষড়ে দিয়ে যায় কৃষকের লাঙ্গলের ফলায় ..!

শীতের মিষ্টি সকালের কাঁচারোদমাখা ওমে খেঁজুড়ের রসে পাটকাঠির নল দিয়ে
আয়েশ করে চুমু দেয়া;
বেদনারকুহুরে ছেঁড়াশাড়ির ফাঁকগলে
বুকের কুঁকড়ে যাওয়া স্তনে কনকনে ঠাণ্ডায় জমাট বাঁধা জীবন!
তবুও সকালের শীতজলে উঠোনে গোবর ছড়াদেয়া নিত্য অভ্যাসের এক অভিশপ্ত
জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা।


শিশিরভেজা কৃষকের পা যেন তার নিত্য হেঁটেচলা মাঠের এক অভ্যাসের প্রহরী,
মনখারাপের আগুন মনের মধ্যেই বার বার পুড়তে থাকে ক্ষুধার্ত জীবনের এক যৌবন সমাধির নিত্য দহনযন্ত্রণা!


দিন গড়িয়ে যায়,
জীবনের সমান্তরাল সময়ের ট্রেন!
চাওয়া-পাওয়ার নিত্যদিনের যন্ত্রণাগুলো
পিষ্ট হতে থাকে ট্রেনের চাকায়!
অন্তরের গুপ্ত চাহিদা মেটাতেপারেনি কোনো ছুটে আসা প্রেম;
একরাশ ক্ষুধার্ত পেটের চাহিদা পূরণহয় জোতমহাজনের নষ্ট ইঙ্গিতের ইশারায়!!


দুচোখ ভর্তি আশাআকাঙ্খা আর প্রেম থাকলেও সবার জীবনে পূরণ হয়না তার চাহিদা;
সবকিছুর মূলে ক্ষুধা মানুষকে সঁপে দেয় কষ্টের হাতে!
হাতছানি দেয়া সুখ পলেপলে দগ্ধহয় অভাবের দুয়ারে!
অবুঝ মন কিছুতেই সায়দেয়না জীবনকে নষ্ট হতে!
তবুও ভাগ্যের চাকা ঘুরে ঘুরে দিন বদলায় কারও বা,
আবার কারও জীবন নষ্টেরসাগরে ভাসিয়ে নেয় কালবেলার বৈকালিক সূর্যের  ম্রিয়মান উত্তাপ !


গ্রীষ্ম,বর্ষা,শীত,হেমন্ত,শরৎ ও বসন্ত ঋতুরা আপন গতিপথে ঠিক বয়েই চলে,
কিন্তু সদ্যবিধবার বুকের বসন বারবার উল্টে যায় দুষ্টের ইঙ্গিতে!
হা'ভাত !নগ্নক্ষুধার্ত জীবন নগ্নতায় ভাসিয়ে নেয় কিছু প্রাণকে;
তবুও দিন যায় তার আপন গতিধারায়...
ধনী-কাঙাল সুখীর,অসুখীর দিন থাকেনা কারোই-
জীবন ও যৌবনের গতি ধারায় বাহিত হয় সময়ের ভালোমন্দগুলো ।


নদীর জোয়ার বুঝতে চায়না পারের তট কতটা ক্ষয়ে গেল !
তেমনি ক্ষুধা আজ যৌবনের কাঙ্ক্ষিত সময়ের চাহিদাগুলো বুঝতে চায়না লজ্জা ও সম্মানের কথা...
তার গতি চলন্ত ট্রেনের মতোই কোন সমান্তরালে ছুটে চলা।
ভাঙাবীণার তারে সবসময় কর্কশ সুর হয়েই ধ্বনিত হয় কর্ণমূলে !
অশান্ত উপোসী ঠোঁট চায় ভাতের স্বাদ আর ...মনের চাহিত ক্ষুধার আহার!!


তবুও দিনযায় গড়িয়ে বস্তির ভাঙাবেড়ার ফাঁকগলে;
দিন যায় সদ্য বিধবার; দিন যায় আমাদের সকলের।।
--হরিদেবপুর।।