নগ্ন সভ্যতার রঙ
-----
কলমে:- রমেন মজুমদার,
31/07/2022


দেখেছি উদ্ভ্রান্ত যুগের আদিমতা!
নগ্ন নগণ্য বনের পশুর সামিল;উগ্র সভ্যতা!
দেখে দেখে সয়ে গেছে চোখের কুঠুরি;
তবুও জানি এ আদিমতায় মিশে আছে সৃষ্টির রহস্য ।
আমি করিনি রহস্যের সমালোচনা;
অবাক হয়ে দেখেছি প্রকৃতির সৃষ্টিকে
নত হয়ে করেছি স্যালুট!
কিন্তু,আমার বিবেককে করিনি কলুষিত!
তবুও স্রষ্টাকে জানাই প্রাণান্তকর ভালোবাসা।
তুমি সৃষ্টিকে সাজিয়েছ আপন হাতে,
তোমার ধৈর্যের সীমানাকে করেছি বরণ;
শুনেছি অথৈ রুদ্র সমুদ্রের ডাক !
কান পেতে শুনে যাই চিরকাল সে গর্জন !
তোমার সীমাহীন বুকচিরে দিয়েছ দুরন্ত
বনান্তর;
সুদূর আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশ!
তোমার অকৃপণ আলোর রেখায় চুরি করেছি প্রেম!
নিজেকে সঁপে দিয়েছি বিধাতার হাতে ।
নিভৃত এই ধরণীরকোলে মাথারেখে শুনেছি তোমার ভাঙাগড়ায় গান!
পৃথিবীর অর্ধেক মথিত হয় বন্য পশুদের অত্যাচারে!
জল-স্থল আগ্নেয়গিরির নির্মম লাভায়...
পুড়ে পুড়ে খাক হয় বসুধার শরীর!
আমার অন্তরে প্রতিবাদের সুর জেগে ওঠে বারবার!
তবুও তোমার কাছে আমি পরাভূত।
প্রকৃতির এই রঙ্গ মেলায় কী জাদু আছে !
কী ভয়াল গ্রাস জলাধারে দেখি বারবার;
তোমার অবগুণ্ঠনের তলে একি দৃশ্য!
বিদীর্ণ করে অন্তর মোর বিদ্রুপের নীচে...
তবুও তোমার মাহিমাকে ভালবাসি বারবার।
আমি দেখিনি তোমার রহস্যের মহিমা
করিনি ভ্রমণ ব্যাঘ্র বনান্তরে;
কালো নিগ্রর এক চিলতে উদোম বুকে
স্তনে মুখ লাগলো শিশুর দৃশ্য দেখেছি;
কী অপরূপ তোমার সৃষ্টির কোলজুড়ে।
হায় অনাবৃত!ছায়াবৃতা;
উগ্র নিকষ কালো মানুষের দল!
মানবের রূপধারী ব্যাঘ্র থাবার তীক্ষ্ন নখের আচর!
সে যেন এক উগ্রতার উশৃঙ্খল অরণ্যের আদিমতা!
ন্যাংটো মূর্তির এক অসীম কালীর প্রতিমা!!
হায় বোবা পৃথিবী! বোবা অরণ্যের ভাষাহীন প্রেম!
সভ্যের অতলে ডুবে নগ্ন আদিমতা নির্লজ্জ
অমানুষের দল!
বুক চিরে অশ্রুসম রক্তের স্রোত!
পঙ্কিল,দুর্গম পথে সাধ্য আছে কার,
ঘুরে ঘুরে দেখে যাব নিরন্তর জঙ্গল!!
ভাষাহীন বাকরুদ্ধ, দস্যুদের পদশ্চারণ!
শুনেছি পাতার ফাঁকে ফাঁকে কাদার পিণ্ডগোলা মৃত্তিকার লহর!!
হে স্রষ্টা তোমার অসীম মহিমার মধ্যেও
থেকে থেকে উছলে পড়ে দুর্বার সমুদ্রের ঢেউ!
ছুটে আসে গন্ধ নীরে,
সঙ্গীতের পূজার ঘণ্টা,পলে পলে দেবতার নামে;
কী অপরূপ তোমার,নাড়ীচিরে জননীর গর্ভহতে যে শিশু এলো ভূমিতে!
তার ক্রন্দন ধ্বনি খেলিছে জননীর কোলে,
সে একদিন ঘুরে আসবে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে।
শুনেছি আকাশের লেলিহান ধ্বনি!
পশ্চিমি ঝঞ্ঝাকুলে দিগন্তচিরে নেমেছে বর্ষা
শ্বাসরুদ্ধ প্রতিকূলতার বাহিকা গহ্বরে
ছুটছে অবিরাম বর্ষণধারা...
সেই আদিমতার পশুর পাংশুতে বিবর্ণরূপ!
মেতে রইল ধ্বংস লীলায়...
ফুরালে দিনের আলোর শেষ রশ্মিটুক
চৌদিকে ঘোর অন্ধকার!!
তুমি কী যেতে চাও কবি একবার
পৃথিবীর অন্ধকারে বনান্তর ভ্রমণে?
আমি চাই,ঘুরে আসি পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তজুড়ে;
প্রাণে ভয়;
নগ্ন সভ্যতার নিকষ অন্ধকারে, তবুও
একবার ইচ্ছের পুণ্যভূমি হোক;
আমার ভয়ার্ত জন্মভূমি জুড়ে....
একবার ঘুরে আসি,সেই সভ্যতার অলীক দর্শনে;
তৃপ্ত হই জীবন,সার্থক হোক কবির প্রাণ।।
বিবেকের তাড়নায় যদি কোনদিন যাই কোনকালে;
কঙ্কালসার ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে একবার দেখে আসি মরণের আগে (!)
হে কবি !তোমার কলমের আচরে কবিতাই হোক আজ কাব্যভূমি!
মুছে যাক নুজ্য নগ্ন সভ্যতার রঙ।
একবার কবির চোখকে সার্থক করে দাও হে ঈশ্বর!
******
শিখামন্দির