মৌটুসী ইসলামের বিমুগ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পালিয়ে গ্যাছিলো আমার সপ্তম শ্রেণীর টিফিন পিরিয়ড ; আমি জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে কেবল ভেবে গ্যাছি, ক্যানো যে মুসলমান হলাম না আমি!
সে-ই বা হিন্দু হলো না ক্যানো ?
অথচ আমাকে অবাক করে
এইসব অমিমাংশিত প্রশ্নের ভাবনার ভেতর দিয়ে আমাকে অবাক করে হটাৎ এক মধ্যরাতে অপহরণ হয়ে গ্যালো বাবু
আর আমার কপালে লিপস্টিক পরিহিত ঠোঁটের পরিবর্তে চুমু খেতে চাইলো এক পরাজিত পিস্তল ; যার উল্টো দিকে ওৎ পেতেছিলো অজস্র মুখোশের শোকেস !


জানি না জানি না জানি না
আমার আজো জানা হলো না সেই মুখোশ নির্মাতার পরিচয়
কে? কে? আপনি! তুমি ! কে
সন্দেহ...সংশয়....সন্দেহ......
দুইদিনতিনরাত পর ফিরে আসা
সকালের সূর্যের আলোয় জ্বলে আমি হয়ে উঠতে চাইলাম খুনি
সে হয়তো হয়ে উঠেছিলো অন্য কারোর সঙ্গী !
আমার আর মুসলমান হওয়া হলো না
অথবা তার আর হওয়া হলো না হিন্দু
আমাদের আর... আর দ্যাখা হলো না


অথচ সেই-ই প্রথম আমি জেনেছিলাম ধর্মের সীমাবদ্ধতার সূত্র
অথচ তার আজো জানাই হয়নি
যে শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এতো উদগ্রীবতা নিয়ে, এতো মনোযোগী মুখ নিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চে বসে থাকতো সে
আর সেই আনন্দের মুহুর্ত না দ্যাখেই
যে আমি ছেড়ে এসেছি স্কুল
সেই সপ্তম শ্রেণির ফার্স্ট বয় ছিলাম আমিই !
এবঙ এরপর থেকেই শুরু আমার পতন ; আমাকে ঠেকাতে পারে নি আর কারো প্রার্থনা
যদিও...যদিও ভালোবাসায় বিশ্বাস রেখে আমি আবার থমকে পড়েছিলাম দ্বাদশে !
কিন্তু হলো না, হলো না ;
পতন..পতন.....
এবার আমি ঘৃণা নিয়ে ফিরে এলাম ঘরে
এবার আমি খুনির বদলে হয়ে উঠতে চাইলাম কবি
আমার ভালোবাসা পাওয়া হওয়া হলো না এবারয়ো
আমাদের কোনোদিনেই পাশাপাশি বসা হওয়া হলো না ; হলো না কোনো কথাও


সপ্তম শ্রেণি!
সপ্তম শ্রেণি!
সেই সপ্তম শ্রেণি....
যাকে আমি ভুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি হাজারয়োবার
যার ক্লাশ টিচার ছিলো বাবু ; রোল কলের সময় তাকে আমি স্যার ডাকবো নাকি বাবু ডাকবো
ভাবতে ভাবতেই ছেড়ে গিয়েছিলাম গ্রাম, ছেড়ে গিয়েছিলাম শৈশব
আমাদের আর... আর দ্যাখা হলো না কোনোদিন


এইসব দ্যাখা-অদ্যাখা, বলতে পারা-না পারা, পাওয়া- না পাওয়ার আফশোসের ভেতর দিয়েই
আমাকে বোবা করে
এক উজ্জ্বল চিতা উপহার দিয়ে পালিয়ে গ্যালো বাবু;
যার শশ্মানবিছানা সাজিয়েছিলো তারই অবাধ্য সন্তান
যাকে তিনি ভালোবেসে বড়ো করতে করতে শিখিয়েছিলেন আগুন থেকে উদ্ধার করার কৌশল


মুখাগ্নি
১৭/০৭/২১