মোহন বাবা আমার, তুমি কেমন আছো? তোমার কাছে লেখা আমার শেষ চিঠি
জানিনা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা
বয়স বেড়েছে শরীরে আগের মতো শক্তি পাইনা।
মাজার ব্যথাটা অনেক বেড়েছে,
বেশিক্ষণ সময় শুয়ে থাকি।
বসে থাকতে পারি না।
চলাফেরা ঠিক মতো করতেও পারি না,
অনেক কষ্ট হয় ,
তুমি মন খারাপ করো না আমার কথা ভেবে।
যাই হোক তোমার কথা বলো!
আমার দাদুভাইরা কেমন আছে?
ওরা কি আমার কথা জানে?
আর জানলেই বা ওরা কি করবে,
তোমার তো সময় হয় না আমাকে দেখার  তোমাকে দেখার জন্য কত রাত কত দিন কেটে গেছে আমার পথ চেয়ে চেয়ে।
সেই যে প্রথম যেদিন তুমি আমায় রেখে গেলে, বলে গেলে প্রতিদিন একবার এসে দেখে যাবে।
প্রতিদিন না হোক সপ্তাহে অন্তত একবার সপ্তাহে নাই হোক, মাসের অন্তত এক বার মাস না হয় বছরে একবার আমাকে দেখে যেতে, তাতেও আমার মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।
সেই যে কবে তুমি আমাকে ফেলে গেলে আর খবর নিলেন না,
তাতে আমার কোন দুঃখ নেই,
তুমি ভালো আছো জেনে আমি ভালো থাকবো।
চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে, চশমা টা আগের মত কাজ করে না।
তোমার মা যেদিন আমাদের এই বাড়িতে বউ হয়ে এলো।
যেদিন তোমার জন্ম হলো সেদিন সারা বাড়িতে একটা আনন্দের রোল পড়েছিল সে যে কি আনন্দ।
ধীরে ধীরে তুমি বড় হয়ে উঠল,
স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করলে যখন সে যে কি আনন্দ সেটা তুমি বুঝতে পারবে না সেই দিনটির কথা।
যেদিন তুমি চাকরিতে জয়েন্ট করলে সেদিন বুকের ভিতর আনন্দে ভরে উঠুক।
ভালো বেতনে চাকরি হলো তোমার এই বুঝি সংসারের হাল ধরবে তুমি।
সংসার টা ভালই চলছিল,
এভাবে দিন যায় মাস যায় বছর যায়,
হঠাৎ করে একদিন ধুমধাম করে তোমার বিয়ে দিয়ে নিয়ে আসলাম।
ঘরে নতুন বউ নতুন সংসার হল তোমার।
কি যে আনন্দ লাগছিল সেদিন
একটু ভালোবাসা একটু আদরের কাঙ্গাল ছিলাম আমি,, তোমার কাছে বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না আমার।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন অতিথির আগমন হলো আমাদের সংসারে।
সেদিনও আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা হয়েছিল সারা বাড়ি।
মস্ত বড় বাড়িতে আমরা চার-পাঁচজন আনন্দে উল্লাসে মুখরিত হয়ে থাকতো সারা বাড়ি।
বয়স বাড়তে শুরু করলো বার্ধক্যজনিত কারণে আমি আর চলাফেরা ঠিক মত করতে পারিনা তোমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে গেলাম আমি।
সবই ঠিক চলছিল , হঠাৎ একদিন তোমরা সিদ্ধান্ত নিলে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলে অত বড় বাড়িতে আমার একটু জায়গা হল না তাতে আমার দুঃখ নেই তোমরা ভালো থাকো সেই কামনাই করি সব সময়।
আমি যে জায়গাতে থাকি সেই ঘরে একটি খাট সবসময় খালি পড়ে থাকে আর সারাক্ষণ ভাবি একদিন তোমার ছেলেমেয়েরাও তোমাকেই এই জায়গা রেখে যাবে হয়তো সেদিন আমি থাকবোনা তুমি দুঃখ করো না তোমার জন্য আমার আশীর্বাদ রইল এবং থাকবে সারাজীবন।
আর বেশি কিছু লিখব না ইতি তোমার হতভাগ্য বাবা।।