মাগো তোমায় দেখিনি কতকাল
তোমার সেই চাঁদ মুখখানি
জোছনা রাতে বসে থাকি জানালার গ্রিল ধরে। তোমায় দেখবো বলে
ওই দূর নীল আকাশে তাকিয়ে থাকি।
তুমি আছো ঐ দূর নীল আকাশ জুড়ে,
তারাদের ভিড়ে। তুমি জানো মা?
এখন আমার কষ্ট হয় না, কান্নাও পায় না,
সকালে ঘুম থেকে উঠি সেই ফজরে,
ঘর ঝাড়ু দেওয়া শেষ না হতে চা বানানো
সকালের নাস্তা আরো কত কি।
জানো মা? এখন না! আর খাবারের কষ্ট হয় না, বাড়ির বড় বাবু বাজার থেকে বড় বড় মাছ কিনে নিয়ে আসে। আমি না! সেই মাছ সুন্দর ভাবে কেটে রান্না করি,জানো মা! অনেক মজা করে রান্না করি ওরা না! খেয়ে অনেক খুশি হয়। জানো মা! আজ বাড়ির বড়বাবু,
অনেক বড় একটা মাছ কিনে এনেছে,
আমি না! সেই মাছ খুব সুন্দর করে রান্না করেছি। সবাই একসাথে খেতে বসেছে-
আমি না! ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আমি কাজের মেয়ে বলে ওদের সাথে বসতে দিল না আমায়। তাতে আমার কোন দুঃখ নেই! আমি তো এখানে অনেক ভালোই আছি।
ওদের খাওয়া দাওয়া শেষে
থালা বাসন গুলো ধুয়ে খেতে বসেছিলাম,
জানো মা আজ না! পেট ভরে খেয়েছি,
মাছ অবশ্য ছিলনা, ঝোল দিয়ে চেটেপুটে খেয়েছি খুব ভালো লেগেছিল।
আমার জন্য না ওরা কোন মাছ রাখেনি।
জানো মা ওদের না! সুন্দর একটা কুকুরের ছানা আছে, এক টুকরো মাছ অবশ্য ছিলো
সেই কুকুর ছানাটিকে দিয়েছে,
তাই হয়তো আমার জন্য মাছটা রাখতে পারেনি। তুমি চলে যাওয়ার পরে আমি বাবার সাথে ঘুমাতাম। বাবা একদিন চলে গেল কোন অজানাতে, আজও তাকে খুঁজে পাইনি।
জানো মা আমাদের এই পাড়ার কাকাবাবু
ঐ বাড়িতে আমাকে কাজে দিয়েছেন।
সেই থেকে আমি এ-ই বাড়িতে কাজ করি।
আমার না! মাঝে মাঝে অনেক জ্বর আসে, ভিষণ জ্বর! পাক ঘরের এক কোণে শুয়ে থাকি - সকালবেলা উঠতে হবে যে!
আজ আমার ভীষণ খারাপ লাগছে,
হাত পা কাপছে, আমি উঠে বসতে পারছি না।
তুমি পাশে থাকলে হয়তো মাথায় পানি দিয়ে দিতে! তুমি তো আর আমার কাছে নেই।
তুমি তো আছ ঐ দূর নীল আকাশে তারাদের ভিড়ে। তোমাকে দেখতে ভিশন ইচ্ছে করছে আজ। তুমি আমাকে নিয়ে যাও মা তোমার কাছে! আর কখনো ক্ষুধার জালা
বুকের যন্ত্রণার কথা বলবো না মা তোমায়।
এই জগত সংসার আমার ভাল লাগেনা,
আমি না হয় তোমার সাথে
ঐ দূর নীল আকাশে তাঁরা হয়ে থাকবো।।