অফিসে বসে খুব মন দিয়ে একটা গার্মেন্টস,দেখছিলেন
বিশাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার মাহামুদ সাহেব ।
ঠিক বারোটায় কোন এক  মিস
"স্মৃতি মাহামুদ" আসার কথা
শুনেছি সে নাকি একটি নতুন বেসরকারি কলেজের শিক্ষিকা।
গার্মেন্টস জগতে মাহামুদ সাহেবের বেশ নামডাক।
প্রশাসন বা সাংবাদিক,সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
অনেকেই তার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েছে।
মাহামুদ সাহেবের ভাবনায় ছেদ পড়ল, একটা সুরেলা কন্ঠ বলে উঠল,  
“ভিতরে আসতে পারি?”
“আসুন” বলে আগন্তুক মেয়েটির দিকে একঝলক দেখলেন মাহামুদ সাহেব।
লম্বা,ফর্সা, ছিপছিপে, দারুণ দেখতে
বেয়ারা এক গ্লাস জল নিয়ে ভিতরে
আসলো,
জল টুকু খেয়ে মিস স্মৃতি মাহামুদ
সংকোচ বোধ করতে লাগলো।
মাহামুদ সাহেব অপেক্ষা করে আছেন মেয়েটার কথা শোনার জন্য।
"মেয়েটা বলল
আমার নাম স্মৃতি মাহামুদ"
আমার জন্মদাত্রী মায়ের নাম শ্রাবন্তী আমার পালিতা মা তাহমিনা ইসলাম,
তার কাছে আমি বড় হয়েছি।
বাংলায় ফরিদপুর রাজেন্দ্র ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করে এখন একটা কলেজে পড়াই।
আমার মা শ্রাবন্তী বেগম  অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে মানুষ করেছেন।
তিনি ডাইরি লিখতে খুব পছন্দ করতেন।
একমাস আগে মা মারা যান। আমি কয়েকদিন আগে মায়ের ডায়েরিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা,
ডায়েরির কয়েকটা পাতা পড়ি।
সেই লেখার সঙ্গে কিছু পুরনো ছবি আর চিঠিপত্র ছিল। মায়ের ডায়েরি পড়েই আমি প্রথম জানতে পারি ছোট থেকে যে মাকে আমি মা বলে জেনে এসেছি তিনি আমার জন্মদাত্রী মা নন, পালিতা মা। আর আমার বাবা হলেন আপনি।
“কী আজেবাজে বলছেন। আমি কেন আপনার বাবা হতে যাব। বাড়িতে আমার স্ত্রী আর দুই ছেলে আছে। নিজেকে এইভাবে তুলে ধরতে আপনার লজ্জা করছে না।
“দেখুন মিঃ মাহামুদ সাহেব আপনি যখন কলেজে পড়তেন তখন আপনার সঙ্গে আলাপ হয় মহুয়া ইসলামের।
কিছুদিনের মধ্যে আপনি পাশ করে গেলেন।
একদিন আপনি আর মহুয়া ইসলাম কক্সবাজার ঘুরতে গেলেন।
কক্সবাজার সমুদ্রে হুটোপাটি করে স্নান করে আপনারা দু’জনে ভালবাসার আবেগে ভেসে গেলেন।
মহুয়া ইসলাম আপনাকে বিশ্বাস করেছিলেন।
আপনি মহুয়ার সরল ভালবাসার সুযোগ নিয়েছিলেন।
কক্সবাজার থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পর আপনি ম্যানেজমেন্ট পড়তে বিদেশ চলে যান।
বিদেশে গিয়ে আপনি মহুয়া ইসলামের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি।
এদিকে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসার পর মহুয়া ইসলাম বুঝতে পারে
ও মা হতে চলেছে।
ততদিনে আপনি বিদেশে পাড়ি, দিয়েছেন।
আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে,
মহুয়া ইসলাম মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে।
মহুয়ার মা সব জানতে পেরে মেয়েকে বলেন, “ওয়াশ করিয়ে নাও।“
মহুয়া তার প্রথম ভালবাসার ফসলকে নষ্ট করতে চায়নি।
এদিকে গর্ভের সন্তানটি ধীরে ধীরে,
বড় হতে থাকে।
অন্য কোন উপায় না পেয়ে মহুয়া, একদিন বাড়ী ছাড়েন।
সেই সঙ্কটময় সময়ে আমার মা
তাহমিনা ইসলাম এর সঙ্গে মহুয়ার,
দেখা হয়।
সেই সময় তাহমিনা ইসলাম বাড়ি থেকে দূরে একটা সরকারি স্কুলে পড়াতেন আর স্কুলের কাছেই একটা বাড়িতে থাকতেন। তিনি মহুয়াকে নিজের কাছে রেখে দিলেন। মানসিকভাবে মহুয়া এত ভেঙে পরেছিল যে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে তিনি মারা যান। তাহমিনা ইসলাম সেই সন্তানটিকে মাতৃস্নেহে বড় করে তোলেন। আমিই সেই মেয়ে মিঃ মাহামুদ সাহেব।  
“গল্পটা ভাল ফেঁদেছেন মিস
স্মৃতি মাহামুদ" গল্পটা নিয়ে ভাল সিনেমা হবে।“
“আপনি ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না মিঃ মাহামুদ সাহেব
এটা ভাল হচ্ছে না।“
আপনি আমার অফিসে বসে আমাকেই শাসাচ্ছেন। আপনার সাহস তো কম নয়।“
“আপনার মতো কিছু লোকজনের জন্য সমাজের আজ এই অবস্থা।
“অনেক হয়েছে, আমি আপনার কোন কথাই আর শুনতে চাই না।
এভাবে দু’জনের মধ্যে আরও কিছু উত্তপ্ত কথাবার্তা চলার পর মাহামুদ সাহেব  বললেন, “এবার আপনি আসুন।“
উঠতে উঠতে স্মৃতি মাহামুদ বলল, “আজ যাচ্ছি, তবে আবার দেখা হবে।“
সে রাত্রে বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে ব্যালকনিতে বসে সিগারেট খেতে খেতে দুপুরের কথাগুলো ভাবছিলেন,
মাহামুদ সাহেব।
স্মৃতি মাহামুদ  মেয়েটির কী সাহস,
তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
কম বয়সে ওরকম সবাই একটু আকটু  করে থাকে।
তাই বলে একটা মেয়ের পিতৃত্ব স্বীকার করে নেওয়া সোজা কথা নয়।
আর তাছাড়া একজন এসে দাবী জানালো সে আমার মেয়ে,
তাকে মেনে নিতে হবে মেয়ে বলে। সমাজের কথা ভাবতে হবে,
আমার স্ত্রী ছেলে দের কথা ভাবতে হবে, হঠাৎ করে একজন এসে দাবী জানালো না আর ভাবতে পারছিনা।
কোর্টে নামকরা আইনজীবি নিয়োগ করলেন মাহামুদ সাহেব।
স্মৃতি মাহামুদ সন্তানের স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে কেস করেছে।
আইনি লড়াই চলল দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে। শেষে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হল "স্মৃতি মাহামুদ"
মাহামুদ সাহেবের মেয়ে,
দীর্ঘ লড়াই করার পর হেরে গেলেন মাহামুদ সাহেব।
পরদিন বাংলাদেশের সব খবরের কাগজের প্রথম পাতার ‘বিখ্যাত জেনারেল ম্যানেজার, মাহামুদ সাহেব অবৈধ সন্তানের পিতা।
মান, সম্মান, সামাজিক স্বীকৃতি, পরিবারে অসম্মানের বোঝা মাথায় নিয়ে আজ একেবারে বিধ্বস্ত মাহামুদ সাহেব বিকালে গাড়ি বের করে চললেন
স্মৃতি মাহামুদ সঙ্গে কথা বলতে।
ওখানে গিয়ে শুনলেন আজই সকালের ফ্লাইটে স্মৃতি মাহামুদ যশোর চলে গেছেন।
মাহামুদ সাহেবের জন্য একটা চিরকূট রেখে গেছে স্মৃতি মাহামুদ,
তাতে লেখা আমার মায়ের ভালবাসার স্বীকৃতিটুকু চেয়েছিলাম সেটা পেয়ে গেছি
আপনার কাছ থেকে আর কিছু চাই না। নতুন শহরে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করব...আপনার ভালোবাসার,
"স্মৃতি মাহামুদ"
বাড়ি ফিরে এসে দেখেন স্ত্রী ছেলে দের নিয়ে তাঁর মায়ের কাছে চলে গিয়েছে।
মাহামুদ সাহেব বুঝতে পারলেন
আজ তিনি নিঃস্ব, একটা ছোট ঘটনা তার জীবন থেকে সব আনন্দ কেড় নিয়েছে।
আজ মহুয়ার কথা বারংবার মনে পড়ছে। অকপট ভালবাসত মহুয়া,
স্মৃতি মাহামুদ হয়েছে ঠিক ওর মায়ের মতো সুন্দরী।
ইচ্ছা করছে একবার মেয়ে বলে বুকে জড়িয়ে ধরি।
আজ নিজেকে বড় ক্লান্ত একা লাগছে,
চারিপাশ কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে আমার পৃথিবী.........