আমরা মানুষ হতে পারি নি
    পান্না আকন্দ


নারী : আমাকে তোমরা মহিলা নাম দিলে কেন?
পুরুষ : আমরা তোমাকে মহলে মহলে দাসী করে রাখি বলে।


নারী : আচ্ছা! তাহলে নারী বলে কেন পরিচয় দাও?
পুরুষ : হা হা হা। আমাদের মস্তিষ্কে তোমার কোনো আকার নেই, তাই।


নারী : ওহ্! রমণী নামটা  নিশ্চই ভালোবেসে দিয়েছো ?
পুরুষ : নাহ্! তোমার নাচে রংমহলে পুরুষ কিছুটা সুখ পায়। এ-জন্য।


নারী : তাহলে, পত্নী শব্দটা  আমাকে কে দিয়েছে ?
পুরুষ : কেন! তুমি পতিত ছিলে।আর আমি দেনমোহরের বিনিময়ে নামটি দিয়েছি। সেই থেকে তুমি পত্নী।


নারী : এই যে, তোমরা আমাকে সুন্দরী বলো, নিশ্চই আমি সুন্দর!
পুরুষ : বে-আকুব নারী ! আমরা আত্মসুখ আদায় করতে এমনটা বলে থাকি।


নারী : তবে ঐ দিন তুমি চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে বললে- খুব সুন্দর লাগছে! কিন্তু কেন?  
পুরুষ : টের-পাওনি। আমিতো সুন্দর এর দোহায়ে শাসনের বেড়ী পড়িয়েছি কেবল।


নারী : তবে কেন, কোমড়ের বিছাটা এতো চড়া দামে কিনলে ?
পুরুষ : এটা দিয়ে তো তোমার জীবনের পরিমাপ টেনেছি। এর বাইরে তুমি যেতে পারবে না।


নারী : ঐ যে, নূপুর জোড়া। কত আদরে পা দু'টি বুকের কাছে নিয়ে পড়িয়ে দিলে। এটা নিশ্চই ভালোবেসে ?
পুরুষ : না রে। এইতো তোমার পরাধীনতার শৃঙ্খল। নূপুর নামে শিকলে বেঁধেছি তোমায়।


নারী : তুমিই তো কতোবার আমার কপালে টিপ পড়িয়ে বলো যে আহা! সৌন্দর্য্যের ঝর্ণা এ-কপালে।
পুরুষ : এ সব কিছু না প্রিয়া। তোমার কলঙ্ক এঁকে দিই এটাতে। যেন কেউ ফিরে না তাকায়।


নারী : এ সব শুনে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। পুরুষ তুমি কি বুঝ?
পুরুষ : কষ্ট হলেও লাভ নেই নারী। এটাই তোমার জীবন।


নারী : তবে আমাকে কেন, "মা" বলে সম্মান করো ?
পুরুষ : তোমার সকল ভালো কাজের এই একটাই প্রতিদান। এ জন্য।


নারী : আমার একটা আবদার আছে। তুমি রাখবে?
পুরুষ : এ-পুরুষ শাসিত সমাজে কোনো আবদার চলে না। তবুও তুমি বলতে পারো।


নারী : আমাকে কোনো উপমা দিতে হবে না। শুধু মানুষ বলে ডাকো ? মানতে পারবে আমার একটা নিজস্ব জীবন আছে।
পুরুষ : আমি তো পুরুষ। নিজেই এখনো আপাদমস্তক
মানুষ হতে পারিনি। কি করে মানবো তুমিও মানুষ!


নারী : হা হা হা। এ পৃথিবীতে কেউ নারী - কেউ পুরুষ।
মানুষ এখনো আসেনি। তাই কেউ  মানুষ হতে পারেনি।

১২ এপ্রিল, ২০২০
পান্না আকন্দ