একটা সুসংবাদ আছে:
আমি সূতি কাপড়ে পেঁচানো সলতে,
কেরোসিনে ভরা টিনের ল্যাম্প—
দুষ্প্রাপ্য হারিকেনের যুগের মানুষ।
গোল স্বচ্ছ ভংগুর সাদা কাচ,
পৃথিবীর মতো লম্বাটে গোল...
অতি সাবধানি মনে জমা আছে ভয়—
"এই বুঝি ভেঙে যায়!"
দিয়াশলাই কাঠি, খুচরো পয়সার মোমবাতি,
ছন-মাটির বেড়া, খড়ের চালা...
আমার রংচটা শার্টে দুটো পকেট ছিল —
উপচে পড়া মমতা, আদর-যত্নের ঠিকানা।
কাদামাটির কলসে ভরা মায়ের ভালোবাসা,
ঘুনে খাওয়া কাঠের বাক্সে
নরম শাসনের গুপ্তধন...
হাত বাড়ালেই শুনতাম মিষ্টি বকাঝকা।
কোনো দুঃখ ছিল না, অভিযোগের ভারি ডায়েরি নেই,
আকাশজোড়া একাকিত্বের তিক্ততা নেই।
আজকের মতো "আমি" আর "সময়"
একে অপরকে তিরস্কার করত না—
অল্প তিরস্কারের মানুষ ছিল বটে,
কিন্তু অমানুষের সমাজ ছিল না।
হিংসা একটু-আধটু, ষড়যন্ত্র কদাচিৎ...
গর্ব করি: আমার সোনালি শৈশব ছিল!
গ্রীষ্মের বিকেলে ঝড়, টুপটাপ পড়ত আম;
বর্ষার বুকে অবাধ্য বৃষ্টি,
শরতে কাশফুলে ভাসে নদীর দুকূল।
হেমন্তে কিষাণের হাসি সোনালি খেতে,
শীতের সকালে পিঠার গন্ধ,
আর ফাগুনে নিয়ম করে কোকিলের ডাক...
সময় তখন বেপরোয়া ছুটত না,
অসময়ে আসত না কখনো।
কিন্তু একটা দুঃসংবাদ আছে:
বড় হতে চাওয়ার অতি আকাঙ্ক্ষা
কাল হয়ে দাঁড়ালো—
কেড়ে নিল সেই সোনালি শৈশব,
অদমনীয় কৈশোরের দিনলিপি,
কেড়ে নিল সব... মানে সব।