যোগ্যতা
======
বড়াই ছিল একদা
টাকার চেয়ে বড় সততা
লে-লে-লে! সব মিছা!  
হেরে গেছি! হেরে গেছি!
হেরে গেছে সততা।
বড় প্রয়োজন টাকা।


নত মস্তিষ্কে কুর্নিশ বন্ধু-
ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মোটা করেছি বেশ
তোর টাকার থলি টা ।
বেশ-বেশ-বেশ! বন্ধু ওটা তোর যোগ্যতা!


আমি পরাজিত, তুই জয়ী
বন্ধুর বিরুদ্ধে অনৈতিকতা র অভিযোগ আনবো
অতটা অকৃতজ্ঞ নই
বরং অভিবাদন!
সফলতার সবদ্বারা বজায় রেখে  
এগিয়ে যা দ্রুত পায়
আরো দ্রুত পা বাড়া -
আরো ফুলিয়ে মোটা কর তোর টাকার থলি টা।  
খেয়াল রাখিস বন্ধু- থলি ফেটে টাকা যেন না উড়ে ধূলায়।


থামিস নে--
যত পারিস করে যা চোরা কারবারি
ঘরে ঘরে পৌঁছে দে- ইয়াবা বড়ি
ভাবছিস দুর্নাম রটাচ্ছি
ছি দুর্নাম বন্ধুর নামে
হয়েছি কি অতটা ই হাঁদা!
শোন; ওসব থেকে টাকা বড়
অনেক বড় টাকা!
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওসব তোর যোগ্যতা!


আমি আর পারছি না বন্ধু-  
দৈন্যতার দায়ে নিষ্পেষিত জীবন  
দালালি করেছি পেশা।
তুই বন্ধু শহরে থাকিস- আমি থাকি গঞ্জে
মার্সিডিসি চেপে আসিস, এসে উঠিস মঞ্চে
মসজিদ পাকা দালান হয়
তোর টাকায়
ইমাম সাব দাড়িতে মেহেদি লাগায়
হেফজে খানায় মাতমের সুর
নুরানি রেওয়াজ
তোর টাকা তো জোটে ওদের ডালে বাগাড়
হ্যাঁ বন্ধু, জানি তো সব!


আহা, কি চমৎকার লাগছে-
চারপাশে হৈ রৈ রেশ, দেখতে লাগে বেশ!
হাট বাজারে আড্ডা জমছে, রব উঠছে
মুখে মুখে রটছে, মিছিলে ফুল ফুটছে
তুই এবার ভোটে দাঁড়াবি, বাহ! বেশ! বেশ!


গলির মোড়ে চা দোকানে, লোকেরা বসে প্রহর গুণে
তুই কবে আসবি---
কেউ খায় সিঙ্গার, কেউ খায় খাস্তা
তোরে নিয়ে তর্ক চলে, হজম করে নাস্তা।
পাড়া গাঁয়ে সংঘ গড়ে যুবক রা সব একজোট
ধন্না দিচ্ছে সমাজপতি রা
সন্ধি হয় সন্ধ্যার পর-এবার তোরে দিবে ভোট।
মিছিলের পর মিছিল হবে-স্লোগানে দিশেহারা
তুই যদি ভোটে জিতিস পাল্টে দিবি চেহারা
শহর থেকে ট্রাক আনবি- ফটফটিয়ে বাজবে
মুখে মুখে হিসফিস, ফিসফিস
খাল ভরিয়ে রাস্তা করবি
রাখবি না আর বাঁশের স্যাকো, চ্যাঁর চারাঙ্কা দূর হ!
গর্বে সব দিশেহারা
হেঁটে যায় বুক উঁচিয়ে, গা দুলিয়ে হনহনিয়ে রে
গোঁ পে মেখে তা!  
এমন কাণ্ড দেখছে কে? কোন কালে কোন বেটা?
খাল ভরিয়ে রাস্তা!
বাহ! বাহ! সাবাস জননেতা!


বাতাসে উড়ে সব, গাঁ-গেরামের আজব খবর
শুনতাছি ধান ক্ষেতে ইট পোড়াবি
জোয়ান বুড়ো কাজে জড়াবে
নুরানিতে বাচ্চা পড়াবে
বেহেস্তের পথ সুগম হবে
লা-লা-লা-লে-লে-লে
গ্রামবাসী মজেছে
কী দারুণ লাগছে!


বন্ধু রে তুই আছিস বেশ-
মনে কী পড়ে বন্ধু? পরীক্ষার সেই রেশ
আগের রাতে বাড়ি এসে বুকের সাথে বুক মিশিয়ে
কানের কাছে মুখ লুকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতিস
পরীক্ষায় পাস করবার না পারলি কেমন করে হবে!
হে রে বন্ধু; তোর তো আজ হয়েছে সব
মনে কী পড়ে সেসব?
পরীক্ষা, আহা!
লিখে যেতাম একসাথে
দু-খাতাতে
বন্ধুত্বের দায় মেটাতে। স্যারেরা সবে ভর্ৎসনা দিত
দেখ কেমন কাণ্ড,  ক্লাসের প্রথম ছাত্র নেই মাথামুণ্ড!
ক্ষমা চেয়ে স্যারদের কাছে  
বিনয়ের সাথে বলতাম হেসে
আমি তো স্যার ফাস্ট হবো, বন্ধু যদি পাস না করে হবে বেশ মন্দ!


মনে কী আছে বন্ধু?
হেডস্যারের পায়ে পরে আমার পাশে সিট করে
এসএসসি টা মারলি!
তোর খাতায় লিখতে গিয়ে কবির স্যারের লাথি
হলসুপার হেডস্যার- রক্তচক্ষু গালাগাল
খাতা আটক সময় সাসপেন্ড- ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি
আরো যে কত কী, খুঁট ঝাড় তেলেসমাতি  
পরীক্ষাটা হল পার।
আর কখনো হয়তো তোর, লিখতে হয়নি পরীক্ষার খাতা
হয়নি দরকার বন্ধু রে আর রাখিস নি মনে বন্ধুর কথা
জয় বন্ধু তোরই, তুই এখন আছিস বেশ!

আমি বন্ধু মরেছি, স্টার মার্কসে এসএসসি
জানিস কি'না ঘোর আছি!  
অনার্স-মাস্টার্স করছি, পথে পথে ঘুরছি
মেধা শূন্য, বৃথাই মেধা
টাকা ছাড়া চাকরি না, ভাইভা বোর্ডে মামার দোহাই
আমার যে, মামা-টাকা কিছুই নাই।
কপাল থেকে চাকরি শেষ।
এই মতে আছি বেশ!


তুই এখন বড় মানুষ, বিশাল বড় লোক!
স্যুট কোট গায় জড়িয়ে ফিটফাট ছোট
তোর এখন চাঙ্গা দর, আগে পিছে চামচা বহর
জনদরদী সমাজপতি, দেশের জননেতা
অজগাঁয়ে হীরের সন্তান গর্বে সব আত্মহারা
বাহ! বন্ধু বেশ! ও সবই তোর যোগ্যতা!
আমি বন্ধু দালাল হলেম
জীর্ণ শার্ট, ছিন্ন ছাতা
লোকে বলে দালাল বেটা
তোর দোয়ায় আছি বেশ।।


(কবি-‘ওনিনেচি’ -ছন্মনাম, ১৫/৫/১৩, টেকনাফ)