অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝেও অবাধ্য স্মৃতি'টা
খুব বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
বার কয়েক চেপে রাখার চেষ্টা করেও
              ক্ষান্ত করা যাচ্ছেনা পাজিটাকে।
আমায় নিয়ে যাচ্ছে অতীত জীবনের সীমারেখায়।
পুরোণোকে যজ্ঞকুন্ডে আহুতিদিয়ে---
আমি বর্তমানকে শিরস্ত্রাণ করতে চাই।
অপ্রতিরোধ্য স্মৃতি, আমাকে নস্টালজিক
করেই ছাড়বে। নচ্ছার স্মৃতিটা---
আমার চোখের উপর লেজার রশ্মি দিয়ে
                   তুলে ধরছে বিবর্ণ তৈলচিত্র'টিকে।
সেই যে শিমুল গাছের তলে কলাপাতার ঘর,
বকুল ফুলের মালা বদল করে বৌ বৌ খেলা,
মাটির হাড়িতে মিথ্যে আগুন দিয়ে রান্না করা,
কাছুটা ভুল হলে পলাশের হাতে চড় খাওয়া;
আমি কাঁদলে বাদর নাচ নেচে হাসানোর চেষ্টা,
সব লাল-নীল অতীত আমি ভুলে ছিলাম।
ভুলতে বাধ্য হয়ে ছিলাম হৃদয়ের সাথে যুদ্ধ করে।
অবাধ্য স্মৃতি'টা রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে আমাকে
                          পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
আপ্রাণ চেষ্টা করেও স্মৃতির কবল থেকে
নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না।
এত বছর পর আবার সেই পলাশ লাঠিয়াল!
সেই বকুল, সেই কলাপাতার ঘর;
আমাকে  হায়েনার মত টানছে। বিষবাষ্পরুগ্ধ বুকটা
আবার হাইড্রোজেন বোমায় রূপ নিচ্ছে।
ভালই চলছিল রুগ্ন মানুষের পাশে থেকে।
মধ্যযামিনীতে অসুস্থ্য মানুষের আত্নচিৎকার,
অহরহ বুক ফাটা আর্তনাদ, রক্তচোখের জল মাড়িয়ে
ওপর তলায় ওঠা, ক্লান্ত দেহটা না'চাইলেও
কর্তব্যের অঙ্কুশ মেরে নিয়ে যাই পিড়িতের পাশে।
প্রেম নেই-বিচ্ছেদ নেই, রিক্ততা ভরা তিক্ততা নিয়ে
ভালই চলছিল শুষ্কমরুময় জীবন'টা।
হঠাৎ আদবহীন স্মৃতি'টা বিচ্ছুরিত করে
একাগ্রতা থেকে। ওর আর দোষ কি!
ঐ'যে বার নম্বর বেডে শুয়ে থাকা পলাশ--
আর পাশে বসা বকুল'কে দেখেই
               অবাধ্য স্মৃতি'টার চরম বিদ্রোহ।
আরব রমণী 'গুল' যেমন ভাবতেও পারেনি যে-
মানুষের হৃদয় থাকে প্রেম শূণ্য!
আমার স্নেহময়ী স্মৃতিটা গুলের মতই কাঁচা অভিজ্ঞ।
আমার এ হার না মানা দেহ'টাকে পিয়ারী বাইজীর মত
জোর করে নিয়ে যাই বার নম্বর বেডে।
অনিচ্ছার সুদীর্ঘ কাঁটা ভরা পথ মাড়িয়ে,
নিজেকে বার কয়েক হত্যা করে,
ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের দীক্ষায়, শ্রূশ্রুষার পসরা নিয়ে
আসতে হয় বার নম্বর বেডে পলাশের কাছে।
সুযোগ পেয়ে দুর্দমনীয়-বেহায়া স্মৃতি
দংশনে-দংশনে পাগল করে আমাকে।
স্বার্থললুপতার স্হিরচিত্র'টি  মেলে ধরে সম্মূখে ।
ওকি জানেনা, সাশ্রুর বদলে গন্ডে বইছে উত্তপ্তরুধির?
জানেন, এক সময় আমার হৃদয়জমিন ছিল--
                            উর্বর ফসলী মাঠ।
ইচ্ছে করলে বপন করা যেত উন্নত বীজ।
কিন্তু সে মাঠ আমার অজান্তে জবরদখল হয়ে যায়।
মনের অজান্তে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টারকে ---
আক্রমণ করে দুধর্ষ ডোপামিন।
এর পর কর্ষণ, বর্ষণ, সিঞ্চণ কত কী!
কাঁচাযুগ, টক স্বাদ পার হয়ে আজ আমি মরুভূমি।
চন্দ্রালোক ব্যতিত আর কোনো শোভা রইল'না।
শেয়াল শেয়ালীর কাড়া-কাড়ির মধ্যদিয়ে একদিন
                      সাঙ্গহবে ক্ষত-বিক্ষত মাংসপিন্ডটি।
সে দিন শ্মশানের কালো ধোঁয়ার সাথে
উকি দিবে ব্লাকবক্স পৌঢ়া স্মৃতিটাও।