কবি জিয়াউল হায়দার


অভিশাপ দিচ্ছি


আমাদের যেভাবে মেরেছ,
তোমাদের মৃত্যু ঠিক এভাবেই হোক,
এইটুকুই কেবল চাই।


আমি চাই,  আমাদের বিধবা মায়ের সাদা শাড়ী
তোমাদের মায়ের অঙ্গে জড়াক;
তোমাদের ঘর শোভা বর্ধন করুক।
আমি চাই, ধর্ষিতা স্ত্রীর অসংলগ্ন আচরণ দেখে,
যুদ্ধ ফেরা আমাদের বিপর্যস্ত পিতা যেভাবে আর্তনাদ করে,
তোমাদের বাবা বুক চাপরে বিলাপ করুক সেভাবে।


আমি চাই, আমাদের সন্তান হারানো পিতা-মাতা,
যেরকমভাবে উদ্ভ্রান্তদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সব হারা আকাশের দিকে,
তোমাদের পিতা-মাতা শোকের মাতাম করে করে
নিদারুন যন্ত্রনার সাগরে নিমজ্জিত হোক ঠিক সে ভাবে।


আমি চাই, অনাথাশ্রমে আশ্রয় কাল থেকে আজ অব্দি
শত শত  যুদ্ধশিশু, পথকলি, অনাথ যেভাবে দহনে দগ্ধ।
তোমাদের শিশুগুলি কাঁদতে কাঁদতে
চোখ দিয়ে রক্ত ঝরুক।
তোমরাও সেই রক্ত বানে  ভেসে যাও অতুল দরিয়ায়।


আমাদের স্নেহশীলা বোনের হাতে স্বামীর রক্ত দিয়ে
যে ভাবে  দিয়েছ লিখে, “তুই আজ থেকে বিধবা।”
তোমাদের মমতাসিক্ত বোনের নাক থেকে নাক ফুল
সেভাবেই ঝরে পরুক দুঃখের সায়রে।


ভাবীসাবের নিথর দেহ দেখে ভাইজানের অশ্রুপাংশু চোখ হতে,
পাণ্ডুর প্রাণ হতে বেড় হয়ে আসা হাসি ছড়িয়ে পড়ে দিকেদিকে।
তোমাদের ভাইজান বাক প্রতিবন্ধি হয়ে ফোটাক কথার ফুল,
তার প্রতি মানুষ অতিষ্ট হয়ে তোমার সামনে মৃত্যু কামনা করুক।


ভাই-বোনের পবিত্র স্মৃতি মনে হলে, বোনের পাঁজরে
ক্ষত তৈরী করে শোক-সাল যে ধারায়।
তোমার বোনের কলিজায় ব্যথা-কীট বাসা বাঁধুক,
কুটকুট করে কামঁড়াক নিরবধি।


ধর্ষিতা বোনের গোঙানি সহ্য করতে না পেরে
আমার ভাই পাগল হয়ে ঘুড়ে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায়।
আমি চাই তোমার ভাইকে ঢিল ছুড়ে মারুক গলির দুষ্ট বালক।
আমি ধিক্কার দিচ্ছি, অভিশাপ দিচ্ছি,
এ হেন নিকৃষ্ট চরিত্রের দর্পের জন্যে।
তোমাদের আচার-ব্যবহার তোমাদের পরিচয়,
তোমরা পাপিষ্ট নরাধম, মুসলিম জাতির কলঙ্ক,
ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে তোমাদের হাতে,
বারে বারে বাংলার পূত মাটি নাপাক করেছ
নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে।
সেদিন মুক্তি-পাগল বাঙালির করোটি দিয়ে বানিয়েছো খুলি খেলনা;
সে খলনা দিয়ে খেলে বিশ্ব বিজয়ী হতে চেয়েছ।
জনতার সংগ্রামী হাড় দিয়ে ডাংগুলি খেলা খেলে
নারকীয় উল্লাশ করেছ বাংলার জমিনে।
মুক্তিকামী শরীরের ছাল দিয়ে ডুগডুগি বানিয়ে
বাজাতে চেয়েছ সাপুড়ের মজমায়।
মুক্তি-জাগরণের উত্তপ্ত রক্ত দিয়ে সেদিন
লিখে দিতে চেয়েছ  বাংলা ধ্বংসের দলিল।


জেনে রেখো জগতের  নিপীড়ক নেতৃত্ব,
মনে রেখো ধ্বংসগামী সিপাহসালার,
বুঝে নাও হিংস্র প্রকৃতির সমর্থক গোষ্ঠী,
শিক্ষা নাও আস্ফালনকারী মানবজাতি,
“কালে কালে সবদেশে পামরের নষ্ট হাড়ে
তার শরীরের বিষাক্ত রক্ত লাগিয়ে
তার চামে লিখা হয়, তারই পরাজয়ের করুন কাহিনী।”