আমি ’ই স্বাধীনতা
হ্যাঁ; আমি’ই স্বাধীনতা !
বহু রঙে নানা কাগজে লিপিবদ্ধ হয়ে,
বর্ণ প্রসাধনে সজ্জিত আমি।
চায়ের টেবিলে জন সমাগমে
অন্ধকার কুঠরি থেকে মুক্ত অঙ্গনে
এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত সত্তর বর্গ-কিলো তে
মেকি হাসিতে আমি বিরাজমান।
আমার বুকের ভিতর দাউদাউ করে আগুন!
মস্তিষ্কে প্রদাহ, উদ্ভ্রান্ত আমার হৃদয়!
ভয়ঙ্কর শকুনের লাল চোখে আমি বিরাজমান।
আমি বিরাজমান;
ব্যথিত চিত্তে ঝলমল পোষাকে।
নৃত্য মহল থেকে মসজিদ মন্দিরে।
আমি আছি ভাষণে, আছি ত্রাসনে।
আছি সুবিধা ভোগী দের আস্তিনে র তলে।
আছি শাসনে, রক্তে রাঙা পিচ ঢালা পথে।
আছি ধর্ষণে, অস্র যন্ত্র আর শোষণের মন্ত্রে।
আমি আবার এখন;
সন্তান হারা মায়ের চিৎকার
অস্ফুট স্বরে দারুণ ক্ষোভে
অপ্রত্যাশিত ধিক্কার।
হ্যাঁ; ফিরে দ্যাখো আমায়
আমি’ই সেই স্বাধীনতা!
বঙ্গবন্ধু আর লাখো জনতার
স্বপ্নের স্বাধীনতা।
মুক্তি সেনার কর্ষণে
চোখের অশ্রু আর,
রক্তের সেচ দিয়ে আমার জন্ম।
আমি বেরিয়েছি বাংলার মাটি ফুঁড়ে
এসেছি লাল সবুজের পতাকা হাতে।
এসেছি সমগ্র মানুষের প্রানোচ্ছল হাসিতে।
ব্যর্থতার গ্লানি আর কণ্ঠরোধের গল্প
আমি চাইনি।
কেবল দলিল আর
সওদাগর এর দাস হতে আমি চাইনি।
চেয়েছিলাম ;
আকাশে বাতাসে কৃষকের হাসিতে
ছোট্ট মেয়ের ছোট্ট আবদারে,
অভিমানে,
আবদার পূরণের হাসিতে
আমি মিশে থাকবো।
আমি মিশে থাকবো;
ভরা জোছনার প্রণয়ে
ভালোবাসার আলিঙ্গনে।
চেয়েছিলাম ;
কাশফুল মাঝি র জীবন ভাটিয়ালী গান,
সরল বধূর সরল প্রাণ!
কংক্রিট পথ আলোকিত রাত,
সর্বত্র দামামা বাজিয়ে করবো বাজিমাত।
কোন সাধুর; বীজমন্ত্র হতে আমি চাইনি।
তবুও আজ আমি লজ্জিত, আমি ধর্ষিত।
প্রতিনিয়ত ক্ষয় হয় আমার শরীর
কুকুর চাটে কলজে ও হৃদয়।
খুবলে খায় আমার মগজ।
তালের বিচির মতো;
উপড়ে খায় আমার চোখ।
আমার বুকের উপর দাপিয়ে বেড়ায় অসংখ্য দানব।
তবুও আমি স্বপ্ন দেখি।
কেননা স্বপ্ন দেখার জন্যই আমার জন্ম।
ভূ-গর্ভ থেকে আকাশ পর্যন্ত
সর্বত্র ছড়ানোর জন্যই আমার জন্ম।
সর্বত্র ভোগের জন্যই আমার জন্ম।
কারন; আমি’ই স্বাধীনতা।
প্রত্যাশিত জীবন যৌবন ফিরে পাবার
প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা।