আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি

যেখানে নলবাইদের জলভরানালায়
মাছের ছড়াছড়ি
যে গ্রামে কেবল মাছ ধরাই উপার্জন
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি
যেখানে দেড় দুই টাকার বিনিময়ে কামলারা
ক্ষেতের আড়ে জিরায়
রাখালেরাসারাদিন রদ্দুরে গরু বাছুর চড়িয়ে
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরায়
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

যেথায় বাড়ির পাশে মাচার উপর
শিম, কুমড়া-লাউ ঝিঙাফুলের বাহার
বাজার করতে হতো না সেথায়
কত তরতাজা তরকারি আরও কত আহার
ডাঙা-বিলের চারিধারে
বাঁশ-ঝাড়ে বাঁশ-পাতার শ্রুতিমধুর ছন্দিত স্পন্দন  
ঘুঘু ডাকা দুপুরে গ্রাম্য মানুষগুলোর
ডাঙা-বিলের পানিতে শান্তির অবগাহন
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।


দেখেছি ভাত আর মাড়ের সাথে মিষ্টি আলু সিদ্ধ
কিংবা আটার জাইয়ের হাহাকার
ঘরের চালায় ছনের ছাউনিতে শোলার বেড়ার আবরণে
মাটির ভিটে কি চমৎকার!  
যেথায় সরু মাটির রাস্তায় চলতো
কেবল গরুর গাড়ি,মেম্বারের সাইকেল কিংবা রিক্সা
সেই দুখী দেশের মানুষ আমি
এখনো কানে বাজে দাদীর মুখে শুনা গল্প কিংবা কিচ্ছা
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

আমার ভালবাসার গ্রামের মানুষেরা
বসতি গড়েছে ডাঙা-বিলের ইধারে-ওধারে
কতজন দু’মুঠা ভাতের লাগি
সারাদিন ঘুরে ঘুরে রোঁদ-বৃষ্টির ছোঁয়া লাগায় গতরে  
আবার কতজনে ভিখ মাগে
ভুলে গিয়ে চক্ষুলজ্জা যাদের গতর ও গেছে পড়ে
কাজের অভাবে মুমূর্ষু পোলারে
দেখেছি তিনদিনের অনাহারে শুয়া বাপের গাড়ে
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

কাম কাইজ নাই জোয়ান বেটা-বেটি
সন্তান নিয়ে ভিক্ষাও করতে পারে না
হায় রে মাঝে মাঝে দুটা মাড় ভাতেসবার পেট ফুলে
কিন্তু তাও তো পায় না
দেখেছি দুঃখের কাতরানির মাঝে
মৃদু হাসি দিয়ে সপরিবারের আত্মহনন  
তখন পঞ্চাতের কাজ হয় সহানুভূতি
আর কিছু প্রচলিত নীতিবাক্যের প্রণয়ন
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।


ধরণীতলে ফসলের মাঠ চৌচির
আর গাছের পাতা রোদে পুড়ে ছাই  
ফসলের জমিতে কোন কাজ নাই
কামলাদের মাথায় হাত, পথিক গাছ তলায়
কি করবে উপায়?
জমি-জমা বন্ধক দিয়েও কারো বাঁচার উপায় নাই
পেটে কাপড় বেঁধে
এক বেলা খাওয়া পেটে তো আরেক বেলা নাই
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।


আয়ের জন্য দশ-বারো বছরের ছেলেকে
দিতো বছরব্যাপী কাজে  
লেখা-পড়া তো গিরস্তদের জন্য
ছোটলোকের সন্তানের কি সাজে?
বড়-বড় পাশ দিবো কেবল
মোল্লা মাতাব্বর বা বড়লোকের সন্তান
কামলাদের সন্তান কামলা দিবে মাছ ধরবে
অথবা দিবে বিড়ি কিংবা হুক্কায় টান
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

হঠাৎ করেই চালু হলো
সবার জন্য বাধ্যতামূলক প্রাইমারি শিক্ষা
কৃষক,মজুর, মাঝি সবাই
সন্তানদের স্কুলে দিলো খবর খানা দেইক্ষা
সাক্ষরতা শিখলো সবাই
আর জীবনযাত্রা পরিবর্তনে পণ করিলো মনে
সামাজিক ব্যবস্থা, জীবনযাত্রা আর মানসিকতার আমূল পরিবর্তন
অল্প কিছুদিনে
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

নতুন করে উন্মোচিত হলো
কল-কারখানা, গারমেন্টস আর শিল্পের উন্নয়নের দ্বার
প্রান্তিক স্তরের নারী-পুরুষ
জীবন মানের উন্নয়নে হলো ঘরের বাইর
ছনের বা খড়ের ঘর বিলুপ্ত হয়ে আবির্ভূত হয়
টিন বা ইট-পাথরের দালান
মাটির রাস্তা আজ কংক্রিটের
চলে অটোরিক্সা,সিএনজি পিকআপসহ কত রকম যান
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।


বাস, ট্রাক, কলকারখানাসহ মোটরবাইকের ধোঁয়া
উড়ছে উন্মুক্ত আকাশে-বাতাসে
বন্যায় প্লাবিত হয়ে মানুষ নদী ভাঙনে সর্বহারা
এখন সেই বন্যা কি আর আসে?
রাস্তার চারিপাশে কাষ্ঠল বৃক্ষ বা কড়ই-বটসহ
ছিলো কত বৃক্ষের সমাহার
বন-ভূমি-বৃক্ষ দস্যুর কষাঘাতে
প্রকৃতির বিবর্ণ রূপ হৃদয়ে দাগ কাটে আমার।
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

এখন আর কেউ না খেয়ে মরে না
কিন্তু কেন জানি সেই আগের সুখ নাই
হয়তো ঘরে ঘরে শিক্ষিত হচ্ছে
তবে বৃদ্ধাশ্রমের যুগে আদর্শ সন্তান কোথায় পাই?
দিন কতক বাদে বৃক্ষনিধন-নদী দূষণে
বাবুরা একদিন নিতে পারবে কি নিঃশ্বাস?
মানুষ এখন যান্ত্রিক, অমানবিক
হয়তো তখন মানুষ গরীব ছিলো কিন্তু ছিলো অগাধ বিশ্বাস।
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।


অচিরেই জলবায়ুর  বিরূপ পরিবর্তন
আমাদিকে হয়তো এক পোড় বুঝাই দিবে
গ্রীনহাউস ঘিরে ধরছে আমরা কিছু জানি না
কিন্তু এটা আমাদের অধিকারও বটে  
তখন ক্ষেতে ক্ষেতে গাদা ধান
কিন্তু ধুপসী রোদে হবে ধান কাটার মানুষের অভাব
প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতায় প্রকৃতি বিরূপ
যেমন সলিটেক ধানে  ধেড়া ইঁদুরের বেড়ানো স্বভাব।
আমি তার প্রতিনিধিত্ব করি।

বাবুরা তখন বন সংরক্ষণ
আর দ্রুত সবুজায়নের বাণী ছড়াবেন সর্বত্র
ওহে চল আজ বনের ধারে রাস্তার পাড়ে
করি বৃক্ষ রোপণ এক করে স্বর্গ-মত্ত  
সেই তাল পাতার পাখায় বাতাস করার দিন থেকে
আজিকার দিনেও আমি আছি
শুকনা কথার লেকচার দিয়ে নয়
দাও ফিরিয়ে গ্রাম্য পরিবেশ আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।
আমি সেই সময়েরও  প্রতিনিধিত্ব করি।