বাবারা কখনো দরিদ্র হয় না


কোমল দাস


রনির বাবা খুব দরিদ্র ছিলেন
ওরা দু'ভাই বড়ো হবার পরে।
তিনি ওদের বিদ্যালয়ে দিলেন
তখন ওদের ভীষণ অভাব ঘরে।


বিদ্যালয়ের বেতন তখন ছয়
সেটাও আবার একটি মাসের শেষে।
তাতেই ওদের জমতো মনে ভয়
তাই তো বদন রাখতো ভীরুর বেশে।


রনির বাবা রাত্রি জেগে থেকে
স্যারের কাছে আরোজ লিখে যেতেন,
স্যারে সেটা পড়েই যেতেন হেঁকে
যখন তিনি হাতে সেটা পেতেন।


বিনামূল্যে পড়ালেখা নিয়ে
থাকতো তাতে নানান আলোচনা।
মনীষীদের কিছু উক্তি দিয়ে
ভরা থকতো চিঠির নিচের কোনা।


যেমন ধরুন,"শিক্ষিত মা হলে
তবেই পাবে শিক্ষিত এক জাতি।
তানা হলে পড়বে জাতি গোলে
শিক্ষা হলো দৃঢ়নিষ্ঠ হাতি।"


আবার ধরুন,"শিক্ষা সুযোগ নয়
এটা হলো সবার অধিকার।
জাগ্রত হোক মানব বোধদয়"
থাকতো এরূপ অঢ়েল সমাহার।


চিঠির ভাষা এতোই প্রবল হতো
মন্ত্রমুগ্ধ হতেন স্যাররা যাতে।
যেটা হতো মকরন্দের মতো
ওদের বেতন ফ্রী হতো তাতে।


কিন্তু ভাবতো রনির ছোট ভাই
এটা হচ্ছে ওদের বদৌলতে।
ভাবতো এতে চিঠির মূল্য নাই
ওদের শিক্ষা মলম হতো ক্ষতে।


ওরা দু'জন ভালো ছাত্র ছিলো
ভাবতো বেতন ফ্রী তাতেই হয়।
কিন্তু যেদিন স্যারে বলে দিলো
"তোমার পিতার চিঠির মাঝে জয়।"


রনি সেদিন বাড়ি ফিরে গিয়ে
বাবার পায়ে করলো প্রণিপাত।
আলাপ সেদিন তুললো চিঠি নিয়ে
সেই আলাপে হলো গভীর রাত।


বিদ্যালয়ের সকল ছেলে মেয়ে
টিফিন খেতো টিফিন ঘন্টা হলে,
ওরা দু'জন দেখতো এটা চেয়ে
যাতে ওদের হৃদয় যেতো জ্বলে।


রনির বাবা জমি কেনার জন্য
অফিস থেকে পেয়েছিলেন টাকা।
কিন্তু সেটা হয়ে গেলো অন্য
কিছু দিনেই হলো সেটা ফাঁকা।


তখন বাবা অফিস ফাঁকি দিয়ে
টিফিন বেলায় বিদ্যালয়ের গেঁটে।
প্রতিদিনই আসতো টিফিন নিয়ে
তিন কিলো পথ রোদের মাঝে হেঁটে।


সেই টাকাটা টিফিন খেয়েই শেষ
জমি কেনা হলো না আর তাতে।
বাবা বলেন,"হয়েছে খুব বেশ
আরো টাকা থাকতো যদি হাতে...


সেই টাকারও টিফিন কিনে নিতাম
মনে তাতে পেতাম অসীম সুখ।
নিজের হাতে তোদের মুখে দিতাম
ঘুচে যেতো মনের সকল দুখ।


বাবার কাছে বললো রনির ভাই
"তোমার কাছে একটি চাওয়া আছে।
ঐ আকাশের চাঁদটা হতে চাই
আমায় ওটা দাওনা এনে পাছে।


রনি তখন হেসে কুটিকুটি
বলতে থাকে,"হয় কি কভু এটা?
চাঁদটা কী আর ঘরের কোন খুঁটি
ইচ্ছে হলেই যায় কি আনা সেটা?"


বাবা তবু আশা দিয়ে তাকে
নিয়ে গেলো পাশের বাড়ির ছাঁদে।
রনি তখন ছিলো একটু ফাঁকে
ভাই তখনো চাঁদের জন্য কাঁদে।


চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে বাবা
বিকট ভাবে দিলেন তিনটি লাফ!
এটা দেখে রনি হলো হাঁদা
ভায়ের কান্না পেলো অন্য ধাপ।


ভাইটি দিলো হো হো করে হাসি
চাঁদ না পাবার কষ্ট গেলো চলে।
পাশের থেকে রনি দিলো কাশি
কাশি দিয়ে যাচ্ছে রনি বলে।


"মানুষের দরিদ্র হয় জানি
ও গো বাবা দাও না তোমার পা।
বাবা হলো সবার চেয়ে মানি
বাবারা কেউ দরিদ্র হয় না।"