সেদিন যখন গভীর রাতে হাসপাতালের পাশটি দিয়ে
যাচ্ছি হেঁটে,
হঠাৎ তখন দেখি গেটে,
একটি লোকের তালুর উপর গর্ভপাতের একটি শিশু
নয়ন দু'টি সিক্ত করে আবেগ নিয়ে বলি তখন,
"ও ভগবান ও গো যিশু
গর্ভপাতের করুন ধারা বন্ধ করো
মানুষ নামের জন্তুগুলো মানুষ করো।


পরক্ষণেই,
গর্ভপাতের শিশুটাকে হাতে নিয়ে
কল্পলোকের আবেগ দিয়ে শুধাই তাকে,
"ও বাবু তুই, অকালে ক্যান ঝরে গেলি?
বলবি আমায় কানে কানে?"
বাবু বলে,"এ কথা ক্যান শুধাও তুমি আমার পানে?"
ক্ষণিক কেঁদে বললো আবার
"আমার মাকে গিয়ে শুধাও নষ্ট কেন করেছে সে,
শুধাও তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে কে?


জানো তাকে কতো ভালো বাসতাম আমি?
আমার কাছে সেই তো ছিলো সবচে দামি,
যখন আমি একমাস তার পেটে ছিলাম
তখন তাকে মৃদুস্বরে বলেছিলাম
" মা গো তুমি কেমন আছো আমায় বলো?
আমায় নিয়ে রমনা কালী বাড়ি চলো।
তোমার সাথে আমারও যে একই নাড়ি
তাই তো তোমার সকল কথাই বুঝতে পারি।
তোমার কথা শোনার আশা সদাই জাগে
তোমার কথা শুনতে ভীষণ ভালো লাগে,
যদিও আমি ইঞ্চি তিনেক হয়েছি মা
তবুও আমার হয়ে গেছে হাত আর পা।


যখন আমি দুই মাস মার পেটে ছিলাম
তখন আমি আমার মা'কে বলেছিলাম,
ও মা আমি আঙুল চুষা গেছি শিখে
তোমার মতোই হবো আমি রাখো লিখে।


নব্বই দিন যখন আমার গেছে কেটে
তখন মাতা কাঁদতো দু-হাত রেখে পেটে,
তখন আমি বলতাম মা'কে,"কেঁদো না মা
কেমন করে সইবো মাগো তোমার কান্না?
তুমি কাঁদলে আমারও যে কান্না আসে
সারাজীবন রইবো মা গো তোমার পাশে।


যখন আমি চতুর্থ মাস পেটে ছিলাম
তখন আমি মা'কে ডেকে বলেছিলাম,
"ও মা আমি হাত পা এখন নাড়তে পারি
আমার মাথায় ছোট ছোট চুল হয়েছে
জানো আমি মাথাটাও নাড়তে পারি।"
এরপর সে শুধাই আমায় বারেবারে
"এসব শুনে কেউ কি শিশু মারতে পারে?


পঞ্চম মাস মায়ের পেটে আমি যখন
ডাক্তার বাড়ি গিয়েছিল মাতা তখন,
মাকে সেদিন শুনেছিলাম ডাক্তার বললেন কী?
কেন আমায় মেরে ফেলবে?বলো না মা, ছিঃ!
শুধু তোমার কথাই আমি বুঝতে পারি মা
অন্য কারো কথা আমি বুঝতে পারি না,
তাই তো শুনছি বলো না মা ডাক্তার বললেন কী?
নিরবতায় সেদিন সবই বুঝতে পেরেছি।


সুই ঢুকিয়ে আজকে আমায় পাঠালো ওপারে,
বলতে পারো, মা শিশুকে কেমন করে মারে?
তোমার কাছে এখন আমার এটাই জানার আশা
কেমন করে হারে বলো মায়ের ভালোবাসা?


তুমি কী ভাই বলতে পারো আমার দোষটা কী?
কীসের পাপে এরূপ ধারা
আমার জীবন করলো সাড়া?
আসলে কী আমি কোনো ত্রুটি করেছি?"