ছোট্ট বেলায় পূজোর কলা
খাচ্ছি যখন ঠাকুর ঘরে
পেছন থেকে দাদা এসে
বললো তখন উচ্চস্বরে।


"পূজোর আগে পূজোর কলা
কেন খেলি
                 বল হারামি?"
আমি বললাম, "পুচকে আমি।


পুচকে কি আর এতো বোঝে
আইনকানুন
                   নিয়ম শাসন?"


পরক্ষনেই আবার বলি,
"হাট্টিমাটিম,
                   কেন খেলে,
আমার লাটিম?"


দাদা তখন রেগে বলে
"মিথ্যে কথা। লাটিম কভু
খায় কি লোকে?"
                         আমি বললাম,
"নিশ্চয়ই খায়। না হলে কি
খেলো পোকে?"


দাদা বললো, "লাটিম হলো
চমকপ্রদ খেলার জিনিস
নিজে ঘুরে মনকে ঘুরায়
খেলতে তো বেশ ভালোই লাগে
খেললে কি আর
কমে এটা?
                  কিন্তু সেটা!"


আমি বললাম, "এটা, সেটা
কোনো কিছুই আলাদা নয়।"


দাদা বললো, "খেলনা, খাবার
এক কখনো?
ভালো করে বলতো ভেবে
মনের থেকে।"
লাটিম কভু যায় কি খাওয়া?"


আমি বললাম, "তা না হলে
কেমন করে হলো হাওয়া?"


লাটিম নিয়ে কেঁদে কেঁদে
ভেজায় যখন বুকের পাটা,
হঠাৎ তখন কাছে বসে
দাদা বলে,
"হারাতে হয় এই জীবনে
প্রতি পদে ক্ষণে ক্ষণে,
ভুলিস না ভাই এ কথাটি
সকল সময় রাখিস মনে।
এই তুলে নে নিজের লাটিম
এটা আমার কাছেই ছিলো
জানিস কেন
                  দেইনি এটা?
শুনবি সেটা? বল না কথা
শুনবি সেটা?


জীবন নদীর বাঁকেবাঁকে
হারানোর এ ব্যথাগুলো
যাতে করে সইতে পারিস
তারই জন্য আজকে তোকে
শিক্ষা দিলাম,
সারাজীবন মনে রাখিস
কভু যোনো হয় না নিলাম।"


শিশু থেকে কিশোর হলাম
জীবন বোঝা হলো শুরু
বুদ্ধিটাও হলো পুরু
বুঝেই ফেলি


সুখের থেকে ব্যথাই বেশি
মানুষ নামের এই জীবনে
তখন থেকেই চেষ্টা করি
দাদার মতো হতেই হবে
কিন্তু চোখের বাঁধ মানে না
পানের থেকে
                     চুন খসাতে
বিনা মেঘে বৃষ্টি নামে।


দিন গড়িয়ে
কিশোর থেকে যুবক হলাম
বুঝে গেলাম এই জীবনের
এটাই নাকি শ্রেষ্ঠ সময়
কিন্তু দেখি পদেপদে
নানান জ্বালায় জর্জরিত
পুকুর কেটে সাগর গড়ে
যখন আমি মরু পেলাম
তখন দেখি মরুতে তাপ
আরো বেশি।


তখন আমি কষ্ট পেলে
দাদার কথা আরো বেশি
মনে করি,
                 হৃদয় থেকে।
কিন্তু তখন মনের ভুলে
জল আসে না
                     দুটি চোখে
আগের মতো।


এরই মাঝে অনেক বছর
অনেক জ্বালা, অনেক ব্যথা
অকথিত
               অনেক স্মৃতি
ঘটে গেছে।


তখন শুধু হৃদয় কাঁদে
                            চোখ কাঁদে না।


বাবা যেদিন মারা গেলো
শোকে সেদিন পাথর হলাম
তবু চোখে
                 জল এলো না।


বাবার দাহ করে এলাম
তখনও চোখ মরুভূমি
বন্ধু সুরেশ বললো এসে
"বৃষ্টি নামা
                মেঘ কেটে যাক।"
তবু চোখে জল এলো না।


দাদা এসে জড়িয়ে ধরে
খোদাই করা লেখার পরে
মুষলধারে বৃষ্টি দিলো
তখন দুচোখ জলে ভরে
এক নিমিষে সকল লেখা
তেপান্তরে হারিয়ে নিলো।


আবার সাগর দেখতে পেলাম।


এরপরেও অবিরত  
শত ব্যথা
              ভর করেছে
নানান সময় এই জীবনে
সংগোপনে
ব্যথায় ডুবে না গিয়ে আর
শান্তি এখন রাখি মনে


কষ্ট হলেও কাঁদি না আর
সন্তুষ্টির
           চেষ্টা করি।
বিধির কাছে সদাই বলি
দু'হাত তুলে,
ও গো বিধি যতোখুশি
কষ্ট দিও
কিন্তু মুখের হাসি রেখো
সদাই যেনো হাসতে পারি
হৃদয় খুলে।