(এক)


এক যে ছিলেন রমণী লোক
চুলের যত্নে তার ছিল ঝোঁক
কিন্তু ওনার চুল ঝরা রোগ
ছিল প্রচুর প্রচুর,
তাই তো করে হৃদয়টা ভার
ছুটে গেলেন বদ্যির দ্বার
বদ্যি বলেন, "ভাত বিহনে
ভর্তা খাবে কচুর।


শুধুই কচুর ভর্তা খাবে
লবন চিনি না মেশাবে
কচু ছাড়া অন্য খেলে
চুল হবে দূর দূর।"


ভাবতে থাকেন তিনি
ওমা, এ কী ছিনিমিনি!
আবার ভাবেন টাক পড়ে তার
হতভাগা যিনি।


পুরুষ লোকের টাক পড়াটা
মেনে নেওয়া যায়,
কিন্তু নারীর টেকোমাথা
এ যে মানা দায়!


তাই তো ভাবেন বসে
যাক না দেহ ধ্বসে
তবুও চুল রাখতে হবে
আপন মাথার পোষে।


(দুই)


বাড়ি ফিরেই সেরে স্নান
পরক্ষণেই মন্দিরে যান
সেথায় গিয়ে মানত করে
সে কী কান্নাকাটি।
কেঁদে বলেন, "ও গো প্রভু
করো পরিপাটি।
চুল ছাড়া যে নারী জীবন
একেবারেই মাটি।


পাত্র পক্ষ দেখতে এলে
চুল যখনি ধরে মেলে।
বিশ্রি এ চুল নিয়ে
ভাঙে তখন বিয়ে
দয়াকরে বাঁচাও প্রভু
এর সমাধান দিয়ে।"


এর পরে সে বাড়ি গিয়ে
অনেক কচু এনে
খেলেন নিয়ম মেনে
সাতদিন পার হতেই এটা
সবাই গেলেন জেনে।


সবাই বলে
"তলেতলে
কচুর দলে
কেমন চলে?
হায়রে বেয়াকুব
এসব ছেড়ে গঙ্গা জলে
মরো দিয়ে ডুব।


নিয়ম মেনে ছ'মাস যেতেই
উঠল মাথায় চুল
চুল গজাতেই ফুটে গেলো
নারীর বিয়ের ফুল
তাদের মুখে মধু এখন
ছিল যাদের শূল।


একটি মেয়ে হল বছর যেতে
তাকে নিয়েই থাকতেন সে মেতে
সেই মেয়েটার বয়স যখন নয়
তখন জ্ঞানের রাখল পরিচয়।


মায়ের কাছে ঘুমিয়ে ছিল একদিন সে
স্বপ্নে বলেন শিব শংকর, "ঋণ আছে যে
তোমার কাছে পাবো আমি অঢেল জিনিস
শোধ করে ঋণ তাড়াতাড়ি করো ফিনিস।
বাচ্চা মেয়ে শুধায় তখন, " কী আছে ঋণ?
দয়া করে এর সমাধান আমাকে দিন।"


শিব বললেন, "তোমার মাথার
চুলগুলো দাও
ঋণ পরিশোধ সার্টিফিকেট
এই নিয়ে নাও
দেবে নাকি আমায় এখন
যাও বলে যাও?"


(তিন)


লাফিয়ে সে ঘুমের থেকে উঠে
স্বপ্ন নিয়ে ভাবে খুঁটেখুঁটে
তারপর সে মা'কে তুললো ডেকে
ঋণ বিষয়ে সকল কিছু
শুনলো মায়ের থেকে।


খুকিকে মা বলেন খুলে
"ঋণ আছে এই চুলে।"
খুকি বলে, "ঋণের কথা
কেন গেলে ভুলে?
ঋণ খেলাপি পায় না কভু
ক্লিয়ারেন্স খাতা?
তাদের স্বভাব যা-তা!
তাই বলি মা জমিও না
কখনও ঋণ পাতা।


ঋণটা চলো শোধ করি মা
আজ এখনই গিয়ে
বিলম্ব মা করতে নেই যে
ঋণ মাথাতে নিয়ে


জগতটাকে করো মানা
ঋণ নিয়ে নয় টালবাহানা
ঋণ খেলাপী ক্ষতি,
ঋণ খেলাপী করলে আসে
বিভিন্ন দুর্গতি।"


(চার)


সেই বিকেলেই সংকল্প নিয়ে
মা মেয়েতে পূজা দিলেন গিয়ে
শিব মন্দির গিয়ে মেয়ে
টাক করে তার চুল
জোরে বলে, " হে দয়াময়
মাফ করো সব ভুল।


ঋণ পরিশোধ করে দিলাম তোমার ছিল যেটা
এখন থেকে উঠবে যে চুল আমার নিজের সেটা।
আজ শুধিলাম চুলের এ ঋণ গ্রহণ করো প্রভু
হে ধরাধাম ঋণের তলে থেকো না কেউ কভু
মনে রেখো ঋণ খেলাপী ভীষণ রকম পাপ
ঋণ খেলাপী পায় না কভু প্রভুর থেকে মাফ।


ঋণ খেলাপীর মাফ মেলে না যতই ডাকুক নিধি,
পাওনাদারে মাফ না করলে মাফ করেন না বিধি।"