ইরা:
বলতো অনুপম! মেঘ কেন হয়?
অনুপম:
ইরা, শুনো!
মেঘ হয়— আমার হৃদয়ের ব্যথা, দুঃখ ও গভীর হতাশার জন্য।
যে জল ঝরে চোখের কোণে,
সে বাষ্প হয়ে বাতাসের সাথে উপরে উঠে যায়—
আর জলের কণা মিলে তৈরি করে মেঘ।
সেই মেঘ হাওয়ায় দুলে ওঠে,
আর আমি নিঃস্ব হয়ে যাই প্রতিটি মুহূর্তে।
ইরা:
অনুপম, বৃষ্টি কেন হয়?
অনুপম:
বৃষ্টি হয় মেঘ থেকে—
যখন হৃদয়ের বেদনা ভারী হয়ে ওঠে,
তখন সেই ভার দূরে ছুঁড়ে ফেলতে চাই।
তখন কান্নাগুলো একত্রে বৃষ্টি হয়ে
অঝোর ধারায় ঝরে পড়ে নিঃশব্দ প্রকৃতির বুকে।
তুমি তার দৃশ্য দেখতে পাও,
কিন্তু কোনোদিন আমার মেঘ ও বৃষ্টির অনুভব করো না, ইরা…
ইরা:
ডুমুর ফুল কেন ফুটে, অনুপম?
অনুপম:
ডুমুর ফুল ফুটে,
কারণ কিছু প্রেম কখনো প্রকাশিত হয় না—
তবুও সে নিজের ভেতরেই পূর্ণতা পায়।
সে হয় না কদমফুলের মতো ঝুমঝুমে,
না হয় গোলাপের মতো খোঁচা দেওয়া।
সে হয় নিঃশব্দ, গোপন, অন্তর্মুখী—
যেমন আমি…
যেমন তুমি জানো না এখনো—
তোমাকে ভালোবেসে
কতবার আমি নিজের ভিতরেই
নিভৃতে ডুমুর ফুল ফুটিয়েছি।
ইরা:
ঝড় কেন ওঠে?
অনুপম:
ঝড় ওঠে,
যখন মনের গভীরের সব অভিমান,
প্রেমের অপূর্ণতা, হারানোর হাহাকার—
একসাথে চিৎকার করে ওঠে।
ঝড় কেবল বাতাস নয়, ইরা—
ঝড় আমার ভিতরের ধ্বংসস্তূপ,
যেখানে তুমি একদিন দাঁড়িয়েছিলে…
কিন্তু থাকোনি।
ইরা:
কুয়াশা কেন নামে?
অনুপম:
কুয়াশা নামে,
যখন স্মৃতিরা চোখের সামনে ধোঁয়ার মতো দুলে ওঠে—
তোমার হাসি,
তোমার ছেড়ে যাওয়া বিকেলের আলো,
শীতে কাঁপা তোমার হাতে আমার স্পর্শের উষ্ণতা…
সব একসাথে ঢেকে দেয় আমার সকালের প্রভাত।
কুয়াশা তখন আর প্রকৃতি নয়—
তোমার চলে যাওয়ার ঘন আত্মঅভিমান।
ইরা:
তাহলে নীরবতা কেন এত দীর্ঘ হয়?
অনুপম:
নীরবতা দীর্ঘ হয়,
কারণ কিছু অনুভব শব্দে ধরা যায় না।
কিছু ভালোবাসা উচ্চারণ করলেই ভেঙে পড়ে ঝড়ের মতো।
তাই আমি চুপ থেকেছি— বহুযুগ
তোমার ছায়ায় দাঁড়িয়ে,
তোমাকেই ছেড়ে দিয়েছি বারংবার
নিজেকেই না জানিয়ে…
নিজ অস্তিত্ব বিলীন করেছি,
এই নীরবতা, ইরা—
তোমার অজানা পাপড়ি, রেণু হয়ে
আমার বুকেই পড়ে আছে চিরকাল।