একদিন এক কাট মোল্লা করিয়া ঋষিরে ধিক
বলিয়া উঠিলো নামাজ পড়িস? ব্যাটা নাস্তিক!
খোদার কলমা জানিস কিছু, রোজা রাখিস নাকি?
সারাজীবন খেটে মরলি, ধর্মে যে তোর ফাঁকি,
নরকে যাওয়ার ভয় কী নাই? স্বর্গে যাওয়ার লোভ?
এবার ঋষি খুলিল মুখ, কন্ঠে তেজী ক্ষোভ!


মোল্লা তোমার নেই কোনো কাজ, খাও বাড়ি-বাড়ি
আমার কথা ভাবো কি তুমি? আমি যে অনাহারী!
ধর্মের কথা কিতাবে থাকুক, ধার্মিক হও কর্মে -
তুমি ধার্মিক, আমি নাস্তিক, আছে কি লেখা চর্মে?


মোল্লা হাসিয়া বলিয়া উঠিলো- গায়ের জোব্বা ঝেড়ে
ধর্মের ব্যাপারে জানিস কিছু? বলেই এলো তেড়ে,
তারপর দুজনের মারপিট শুরু, মাটিতে গড়াগড়ি
কে যেন আসিয়া টানিয়া তুলিলো দুজনের কান ধরি।


প্রাণ ভয়ে মোল্লা আল্লাহ জপে, ঋষির মুখে রাম
সকলের স্রষ্টা ঐ একজন, সৃজিলেন যিনি ধরাধাম!
বহুজন তাকে বহু নামে ডাকে, গায় তার গান
সকলের মাঝে ধর্মের প্রাচীর, শোন মুক্ত আসমান।


যে নামেই ডাকুক যে যতবার, তার ডাকে দেয় সাড়া
বলো হে মোল্লা আস্তিক কে? এবং নাস্তিক কারা?
খোদার কালাম দু'চরণ পড়িয়া সাজো মস্ত আলেম
নিজের বিরুদ্ধে যে যায় তারে বলে ওঠো জালেম।


লেবাসধারী মোনাফেক সদা ফায়দা লুটে খায়
বল দেখি এমন জঘৃন্য কাজ ধর্মে কী শোভা পায়?
মোল্লা তুমি কিংবা ঋষি, হও যে ধর্মের অনুসারী -
স্রষ্টার দরবারে আমরা সবাই অসহায় ভিখারি।


মনে প্রাণে সদা ডাকি তারে, তার প্রেমে হই বিলীন
তার গুন-গান গেয়ে যাই আমি রোজ নিশিদিন,
তবুও আমি নাস্তিক রই, তোমার ফতোয়ায় মোল্লা!
সকল পূন্য তুমি একাই কর? আমরা বুঝি গোল্লা?


শোন হে মোল্লা খোদার খাসি, কান খুলে আজ শোন
ধর্মের তরে নাহি হোক ভবে, মানুষ মানুষের দুশমন
তুমি আস্তিক, আমি নাস্তিক, কীসব ফতোয়া চষো?
ওসব ছেড়ে দিয়ে নির্জনে গিয়ে স্রষ্টার ধ্যানে বসো।


মোল্লা জিতলে, ঋষি হারলে কিংবা হলে বিপরীত
একে অপরের ধর্মের প্রতি বাড়ায় নিন্দা জিদ!
নিজ নিজ ধর্মে হয়ে ওঠে সবাই ষোলআনা আস্তিক
বিপরীত ধর্মের হলেই তাকে বলে ওঠে নাস্তিক।