এই রাস্তার ফুটপাত ধরে  
এক ব্যক্তি প্রতিদিন হেঁটে যেত অফিসে,
তার গায়ে থাকত একই জামা‌, জুতা আর প্যান্ট;
হাতে পুরনো দিনের কাঁটা হাতঘড়ি!
চোখে মোটা ফ্রেমের ঘোলাটে চশমা।


সেদিন লোকটার সাথে সেলুনে দেখা
সম্ভবত ছয় মাস পর এসেছেন চুল কাটাতে!
চুল কাটার ছেলেটা নাক সিঁটকে বলেছিল
"এই মিয়া কবে থাইকা চুলে শ্যাম্পু করেন না?
চুলে কী কাকে বাসা বানাইছিল?
আপনার মতো এমন খাটাশের লগে ঘর করে কেডা?
চুল কাডাইতে আইছে, কোথাকার নোংরা বেডা!"


তারপর অনেকদিন দেখা হয়নি,
সেদিন বাসার দারোয়ানের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি
লোকটা চাকরি থেকে অবসরে গেছেন,
তার বড় মেয়ে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে
ছোট ছেলেটা ক্লাস নাইনে,
বউটা বাঙালি, ঘর সংসার ছাড়া কিছুই বোঝে না!
রিটায়ার্ডের পর থেকেই মন বিবেককে বুঝাচ্ছে-
"পেনশনের টাকা তুলে বিল্ডিং বানাতে,
ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করাতে আর
ভালো পাত্র দেখে মেয়েটাকে বিয়ে দিতে।"


অতঃপর -
লোকটা পেনশনের টাকা তুলে বিল্ডিং বানালো
ধুমধাম করে মেয়েকে বিয়ে দিলো,
ছেলেকেও ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করালো
কিন্তু লোকটি এখন আর অবসরে নেই,
লোকটি এখনও পায়ে হেঁটে অফিসে যায়
গায়ে পুরনো পোষাক, জুতা, চশমা, হাতঘড়ি।


ইদানিং লোকটাকে দেখলেই
আমার কেন যেন মনে হয় লোকটা মধ্যবিত্ত!
আসলেই মধ্যবিত্তরা কী এমনই হয়?
ওরা সারাজীবন পরিশ্রম করে টাকা জমায়
জমানো টাকা দিয়ে বাড়ি বানায়,
ছেলে-মেয়ের বিয়েতে বেহিসেবি খরচ করে ফতুর হয়
অন্তঃপর আবার চাকরি নেয়,
দিন আনে দিন খায়?


সেদিন মধ্যবিত্তের জীবনী পড়ে বুঝলাম
মধ্যবিত্তরা কখনো ধনী হতে পারবে না,
ওরা অতীতে মধ্যবিত্ত ছিল, বর্তমানে মধ্যবিত্ত আছে
ভবিষ্যতেও মধ্যবিত্তই থাকবে!