ট্রেন চলছে...


চৈতির সাথে ভাব হয়ে গেলো, মাকে ছেড়ে আমার-
কোলে এসে বসলো সে, এখনো স্কুলে যেতে শুরু করেনি, অথচ
বাংলা-ইংরেজী মিলে অনেকগুলো ছড়া আবৃত্তি করে
অবাক করলো আমাকে!
স্পীকারে ঘোষণা হলো-
সম্মানীত যাত্রী সাধরণ........আমরা ময়মনসিংহ জংশনে......কিছুক্ষণের জন্য যাত্রা-বিরতি করবো... আপনারা যারা...
আমার কাঁধে মাথা রাখা যাত্রীর ঘুম ভেংগে গেলো, সে..  এবং ওপাশের ষাটোর্ধ
নামার জন্য ব্যধিব্যাস্ত! তারা উঠে দাঁড়াতেই যায়গা অন্য-দখল।
এই ফাঁকে চৈতি কোল থেকে আমার পাশেই জানালায় বসে গেলো।
ট্রেন থামলো ময়মনসিংহ ষ্টেশনে।
যাত্রি-কুলিদের ওঠামানা...হুড়োহুড়ি...
হকারের চিৎকার...বাদাম_বাদাম! এই...আইস-ক্রিম!
আমড়া_আমড়া_এই বরিশালের আমড়া! ছিল্যা-কাইট্টা লবন লাগাইয়া দেই!
এই আমড়া_আমড়া
-আঙ্কেল! আমি আমড়া খাবো!
মা ধমকালেন-“চৈ-তি! ভারি অসভ্য হয়েছিস! দাঁড়া, তোকে আমড়া খাওয়াচ্ছি! আয়... এদিকে আয়”
চৈতি আমাকে আকড়ে ধরলো তার কোমল হতে...
মেয়ের দিকে হেলে পড়লেন যুবতী মা কিন্তু মেয়েকে ছোঁয়ার আগেই...বুকের বসন স্থানান্তর হলো তার, মুর্হূতে কয়েক জোড়া চোখ...নিজেকে দ্রুত সামলালেন!
-আয়! আমড়া কিনে দিচ্ছি আমি...
-না না, আপনি দেবেন কেন? ও তো আমার কাছে চেয়েছে! আমি দিচ্ছি!
আমড়াওয়ালার সে...কী আগ্রহ! জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো সে কাটা আমড়ায় লবন ছিটিয়ে চৈতির হাতে দিলো। বললাম-
-আরো দুটো দাও!
-না না, আমি আমড়া খাই না! প্লিজ....
চৈতি বললো-
-আর একটা লবন ছাড়া দাও! আঙ্কেল এটা তুমি খাও! আমি লবন দিয়ে খেতে পারি না।
অগ্যতা লবন আমার...
স্পীকারে আবারও নারীকন্ঠ-...সম্মানীত যাত্রীবৃন্দ ঈদ মোবারক! আমরা এখন জামালপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবো...


ট্রেন চলছে...


শহরের কোলাহল ছেড়ে শান্ত-নিবিড় শ্যামল প্রান্তর ছুঁয়ে
আঁকাবাঁকা সমান্তরাল! মাথাটা ঝি ঝি করছে...চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে...
আর কিছু মনে নেই...
যখন জ্ঞান ফিরলো, মনে হলো-
আমি একটি হাসপাতালে...একজন নার্স আমার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে ছিলো।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“আমি কোথায়”!
-এটা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
-আমি তো তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলাম! এখানে এলাম কী..করে..?
-তা তো আমি জানিনা!
-আমার লাগেজপত্তর! টাকা-পয়সা...মোবাইল?
কিচ্ছু নেই!
পড়নের প্যান্ট-ছেড়া এবং নোংড়া, শার্ট নেই! গায়ের নীল গেঞ্জিটা কার জানিনা!  
-আজ কতো তারিখ?
-এগারো জুলাই!
-ঈদ কবে?
-সে তো সাত তারিখে গেছে।
তার মানে... চারদিন আগে!
-একটা ফোন করা যাবে?
না জানি বাড়ির অবস্থা কি! উত্তরায় একটা খবর দেয়া দরকার।