'নীলিমা! কেবল তুমি আসলেই'


অপেক্ষায় ছিলাম অশোক গাছের মতো শতাব্দী পেরিয়ে
একদিন তুমি ঠিকই ডালা ভরা সফেদ ফুল নিয়ে ফিরবে।
অনেকেই তো মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে গেলো
কই! আমার জন্য তো আজও ভালো কিছু হলো না!
আজও তো আমার সেই উসকো-খুশকো চুল
ময়লা পরিচ্ছদে আবৃত আশরীর, এলোমেলো দাড়ি-চুলে
অন্ধকারে পরে আছে প্রিয় বদন, অাজও অনমনে অগোচরে
তোমার নামটি ধরেই ডাকি যখন তখন।


নীলিমা! কেবল তুমি আসলেই হতে পারতাম আমি
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সুপুরুষ,
কেবল তুমি হাসলেই বৃষ্টি ধুয়ে দিতো শতাব্দীর
এই অবহেলিত আচ্ছাদন,
কেবল তুমি এসে সম্মুখে দাঁড়ালেই
হতে পারতাম আমি তাবত রমনীর ঈর্ষার পুরুষ।



'ভালোবাসায় কী এতোটা হিসেব চলে বলো!'


আমার তো ইচ্ছে হয় বেলা-অবেলায়
কড়া নাড়ি তোমার দরজায়,
তুমি কেবল দাওনা সায়।
এতোটা কাছে আসার পর
এতোটা ছুঁয়ে দেয়ার পরও
ছোট্ট করে এক কোণে লিখে যাও 'শর্ত প্রযোজ্য'।
তোমার বাড়ি অবদি পথে পথে তুলে দাও অদৃশ্য দেয়াল।


নীলিমা! ভালোবাসায় কী এতোটা হিসেব চলে বলো!
তোমার বাতায়নে যতই ঝুলাও গারদের পর্দা
আমার চোখ তো পড়ে আছে তোমার কামড়ায়।
কেবল দেহের ভেতর খরস্রোতা নদীতে পড়েছে বাঁধ,
একটিবার ছুঁয়ে ফের কেন এমন অচেনা হয়ে যাও?


'নীলিমা! নিদ্রা ভেঙ্গে'


ফিরে আসুক দখিনা হাওয়ায় পাঙশি নাওয়ের পালে চড়ে
মুঠো মুঠো বিশুদ্ধ বাতাস, কিছুটা সৌখিন আবেগ
এই নদীর বালুচরে ধেয়ে আসুক উম্মাদ ঢেউ;
খড়ম খুলে তপ্ত বালুতে খেয়ালি প্রেমিক এক
ডানা মেলে ঘুড়ি হবো বলে চেয়ে আছি ধু-ধু নদীর বাঁকে।


নীলিমা! নিদ্রা ভেঙ্গে নক্ষত্রের আলোটুকু দিয়ে যাও
তুমি ছাড়া এই বালুচর ছোঁবে না জল
এই বাতাস মাতবেনা মধুময় ভালোবাসায়,
আমি কেবল ডানা ভাঙা পাখির মতো পড়ে রবো
নাটাই ছিন্ন ঘুড়ি ওড়ার আশায় অাজনম।


'নীলিমা! তোমার চোখের সম্মুখে'


এই শীতের রজনী বুঝি নিয়ে যায় হিমালয়ে
কম্বলের ভেতর তার বরফ জল হিম হাওয়া
বিছনায় শুয়ে আছি, চারিদিকে এতো উষ্ণ সরঞ্জাম
তবু কেন এতো কাঁপছি আমি, স্নায়ু কেন এতো শীতল!


বাইরে বৃক্ষের পাতায় থেমে থেমে পড়া শিশির বিন্দুর মতো
নিঃশ্বাস বুঝি ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছে ছন্দ।
আমি কী তবে হিমালয়ের বরফ হতে চলেছি!
আমি কী তবে আজন্মের তরে হয়ে যাবো শীতের ভাস্কর্য!


নীলিমা! তোমার চোখের সম্মুখে এই আমি
ক্রমান্বয়ে নিথর বরফের ভাস্কর্য হয়ে যাচ্ছি,
তোমার আঙুলের একটু ছোঁয়াই পারে সব ভন্ডুল করে দিতে
ফের আমি ফিরে পেতে পারি চঞ্চল জীবন।


এক মুঠো উষ্ণতা দাও আজ এই শীতল জমিনে
কেবল একটিবার বোতাম খুলে উম্ দাও
এই বরফ গলে ভেতরে বহুক সুখের ঝরণা ধারা।


'নীলিমা! যদি বুলবুলি হতেম'


এতোটা কাছে আসার পর
এতোটা আপন হবার পর
যখন দুই তীর মেলে এক সাঁকোতে,
তারপরে কী আর এক পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায় বলো!
স্বপ্নের সাঁকো পেড়িয়ে সেই কবেই তো পৌঁছে গেছি
তোমার তীরে, তোমার যত্নে পোষা কুসুম আঙিনায়।


সরষে ক্ষেতে হলুদ সরষে ফুলের মতো
এই সবুজের বুকে তুমি জেগে থাকো,
বাতাসে খাও দোল, কাকতাড়ুয়ার ডানায় বসে
বুলবুলি এক মুগ্ধ দেখে দেখে তোমার কপোলের টোল।


নীলিমা! যদি বুলবুলি হতেম
নদীর জায়গায় নদী, সাঁকো থাকতো সাঁকোতে
আমি থাকতাম কেবল তোমার বন্দি খাঁচায়,
এই এতো বড়ো আকাশের কী প্রয়োজন বলো
তোমার মনের খাঁচাই তো আমার অসীম আকাশ।


আজন্মের বাসনা
ইব্রাহীম রাসেল


দীর্ঘ দশটি বছর হেঁটেছিলাম
পাশাপাশি, কাছাকাছি, বাহুর সাথে বাহু মিশে
একই ক্লাসরুমে, একই বেঞ্চে, একই অনুষ্ঠানে
একই পথের ধুলোয়, একই ঘাসের বুকে


এই দশ বছর একই শহরে তুমি-আমি
রিক্সায় হুট তুলে ভেজা বরষায়,
কফি হাউজের নীল আলোর নীচে
সকাল-সন্ধ্যা রেস্টুরেন্টের নাস্তার টেবিলে
কলেজ রোডের অপুর দা’র চায়ের দোকানে


কখনো কীর্তনখোলার তীরে
দপদপিয়া ফেরিঘাট ঘেঁষা সফেদ কাঁশবনে
মাইলের পর মাইল পিচঢালা পথে
প্রথম এই শহরে আসা অটো রিক্সায়
হালিম ভাইয়ের ফাস্টফুডের দোকানে


দীর্ঘ এই দশ বছরে
একবার তুমি বলেছিলে পাশাপাশি রিক্সায়-
‘'খুব ইচ্ছে হয় নাকি একটিবার
আমার হাত ছুঁয়ে দেখতে!’
তোমার সেই একটিবারের ইচ্ছে
আমার ছিল সার্থক জন্ম, আজন্মের বাসনা।