কোনো একদিন আমাদের এই মিলন মেলা
হয়ত আর জমে উঠবে না,
জমজমাট আড্ডা ছেড়ে একদিন সবাই
ফিরে যাবে যে যার বাঞ্চিত গন্তব‌্যে।
শুধু পড়ে থাকবে এই সময়গুলো,
পড়ে থাকবে বাংলার সেমিনার, জিরো
পয়েন্টের বেঞ্চ, বাণিজ্য ভবনের পিছনের
সেই হানিফ উদ্যান, বাকসুর সামনে
সারি সারি বেঞ্চ;
পড়ে থাকবে সহস্র স্মৃতি-বিস্মৃতি
আর দুর্বাঘাস বিছানো খোলা মাঠ।


এই ভরা আড্ডা থেকেই একদিন আমি
আমার কবিতা নিয়ে ফিরে যাব,
হয়ত শেষ মুহুর্তটায় একটা বিষন্ন হৃদয়।
তবে মনে রেখো বন্ধু! এই একজন আমি
যে তোমাদের ভালোবেসে উৎসর্গ করেছিলাম নিজেকে,
অনন্তকাল তোমাদের বয়ে বেড়াব বুকে।


একদনি ‌‌‍'মহসিন'ও ভরা আড্ডা থেকে দেবে দৌড়,
হয়ত গোটা আড্ডা জুড়ে নেমে আসবে
পিন পতন নিরবতা।
মহসিন নেই জমছেনা আড্ডা, হচ্ছেনা হাসি,
হয়ত এভাবেই তার পুনঃস্মৃতি
সে উঠে আসবে আড্ডায়।
একদিন সেও বিমর্ষ মন নিয়ে
                          ফিরে যাবে গন্তব্যে।


তারপর 'মিলি' যার অনুভূতি জাগরণের জন্য
আমাদের সবার কত না রঙ্গময় প্রচেষ্টা!
সেও একদিন আঙুলে একটি আংটি দেখিয়ে
বলবে, 'বিয়ে হয়ে গেছে আমার,
বর বলেছে, আমাকে নিয়ে যাবে ঢাকায়'।
ব্যাস, হারাব সেদিন মিলিকে।


'ইশতিয়াক' সেই শান্ত কোমল ছেলেটি
একদিন খুব বুঝিয়ে সুঝিয়ে-
নরম সুরে বলবে, দোস্ত তোদের ছাড়া
এক মুহুর্তও আমার চলবে না জানি,
তারপরও ঐ যে নিয়তি!
নিয়তি আমায় নিয়ে যাচ্ছে দূরে।
তবে তোদের কথা ভুলবনা কোনো কালে।


'লাইজু'র কথা কী আর বলব!
আড্ডার ফাঁকে হঠাৎ কড়া ব্রেকে
যে থামিয়ে দিত আমাকে, মহসিনকে,
ইশতিয়াক ও নিয়াজকে।
একদিন অনুরূপ সবাইকে অবাক করে দিয়ে
বলবে, মেয়েদের বয়স হলে যা হয়
বাবা-মা সে কাজটিই করেছে।
আমি বড় হয়েছি বাবা-মা তা বুঝেছে।
                     সুতরাং বিদায় বন্ধুরা।


'নিয়াজ' আর 'নিতু'
আমাদের জান্তে-অজান্তে একদিন
হয়ত দুজনে জমাবে পাড়ি।
হয়ত ছিটকে দুজন ব্যথার সাগরে
বাইবে দুঃখের তরী।
নিজেদের নিয়েই বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠবে।
যাবার সময় বলবে, "নাড়ার আডা লইয়া
                       বড় ঝামেলায় আছি।"


একদিন প্রাণখোলা হাসি দিয়ে
'সুপ্রিয়া' আমাদের প্রিয় বেয়াইন
যাবার বেলায় হাসতে হাসতে
হয়ত অজান্তে দু'ফোঁটা চোখের জল ফেলে
সুধাবে- 'দূর চোখে জল কেন?
আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা,
তোমরা ভালো থেকো বন্ধুরা, বিদায়।'


আর 'কলি' খুব জ্ঞানীর মতো ভাব করে
যাবার বেলায় হয়ত বলবে-
'তোমাদের সাথে মিশে অনেক অভিজ্ঞতাই হল
তোমরা মনে কিছু করনা
এটাই বাস্তব, আমাকে যেতে হবে।'


এবং শেষ পর্যন্ত 'মুন্নি'
হঠাৎ ঝড়ের মতো এসে সবার সাথে মিশে
শেষ বেলায় বলবে, 'বন্ধুরা! তোমরা রাগ করনা'
উপদেশের সুরে হয়ত বলবে, 'কাউকে বেশি
ভালোবাসতে নেই, তবে দুঃখ পাবে।
আমাকেই দেখো কেমন হুট করে এসে
আবার চলে যাচ্ছি তেমন করে।
বাস্তবটা আসলে এমনই।'


এমনি সবাই একদিন চলে যাবে
একটি জলজ্যান্ত আড্ডার মৃত্যু হবে।
শুধু পড়ে রবে এই ক্যাম্পাস,
এই বাংলা বিভাগ, এই সেমিনার,
পড়ে থাকবে সহস্র অলস সময়।


বরিশাল
(২০০৫, বি.এম. কলেজের বন্ধুদের স্মরণে)