'মহাজীবন'
নীলিমা! কেবল একটি গোলাপের প্রত্যাশা ছিল,
তোমার কাছে হাত বাড়িয়ে চাইতেই
পৃথিবী অবাক করে দিয়ে এত্ত এত্ত ফুলে ফুলে
ভরিয়ে দিলে আমার দু'হাত, আমার আঙিনা
পা ফেলে আমার হাঁটার পথ, আমার বসত ভিটা
যে দিকেই যতদূর চোখ যায় যেন ফুলের অরণ্য।
এক আঁজল জল চাইতেই দিয়েছ এক মহাসমুদ্র
একমুঠো জোছনার বাসনায় দিয়েছ মধূ পূর্ণিমা।
একটি মুহূর্ত চেয়েছি কেবল ভালোবাসার জন্য
অনন্ত জীবন তুমি নিরঙ্কুশ সপেছ আমায়।
এতোটুকু স্বস্তি নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছি বলে
এ অধমকে দিয়েছ তুমি এক মহাজীবন।
'কী করে বাঁচি!'
একবার হাত ধরে যদি ফের ছেড়ে দাও
এই অন্ধকার গলিতে তবে বলো কী করে হাঁটি!
স্পর্শের সুখটুকু শিখিয়ে যদি দেয়াল তুলে দাও
ভালোবাসার এই কাঙাল বলো কী করে বাঁচি!
নীলিমা! পাথরের বুকে সবুজ বাগান করে
ফের কেন পাথরেই ফিরিয়ে দাও!
এই অবুঝ অনুভূতিকে লাই দিয়ে দিয়ে স্ববুঝ করে
আজ কেন গলা টিপে শ্বাস রুদ্ধ করতে চাও!
চেয়ে দ্যাখো এখনও রয়েছি দাঁড়িয়ে একা নিঃস্ব
অন্ধকার সেই অচেনা গলিতে...
তোমার তোলা দেয়ালের কার্ণিশে কাঙাল এক,
এই স্ববুঝ অনুভূতিরা আজ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
নীলিমা! কেবল ভালোবাসার জন্যই এই আকুতি
এর জন্যই তোমার কাছে হেরেছি বারবার...
'নীলিমা! কোথায় পৌঁছে গ্যাছো তুমি'
স্বপ্নগুলো যত্ন করে রেখেছি সাজিয়ে
যেমন যত্নে সাজাও প্রিয় শাড়ি থরে থরে
লাল-নীল-হলুদ-কালো এবং বাদামী,
নীলিমা! তোমার জন্য আজন্মের স্বপ্নগুলো
জমিয়ে রেখেছি বুকের ভেতর অনেক দামী।
কবিরা এমনই বড়ো বেশী স্বপ্নবাদী হয়
মর্তের প্রেয়সীকে নিয়েই অলৌকিক স্বপ্নের আনাগোনা,
আমি তোমাকে ঘিরেই বুনেছি যতো স্বপ্ন আমার
আর কিছুইতো আসেনা কখনও ভাবনায়।
ভেবে দ্যাখো, কতোটা পৌঁছালে পর অবশিষ্ট থাকেনা কিছু
আমার ভেতর সেই কোথায় পৌঁছে গ্যাছো তুমি!
'রেগে আছো নীলিমা!'
রেগে আছো নীলিমা!
এইটুকু দেরি করে ফিরেছি বলে এতো অভিমান!
অথচ তোমার জন্য অপেক্ষা করতেই আমার যতো আনন্দ,
যখন তুমি এসে শেষে আমার সম্মুখে দাঁড়াও
হাজার বছরের অপেক্ষাও এক মুহুর্তের মনে হয়;
আরো যদি এককোটি বছরও অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়
কোনো খেদ নেই তাতে, নেই কোনো অহেতুক অজুহাত।
আমি তো জানি তুমি ফিরে আসার আনন্দ কতোখানি
অনন্ত খরায় একফোঁটা বৃষ্টি পেলে উচ্ছাস কতোখানি।
'এতো কেন মলিন তবে আজ তুমি নীলিমা!'
এতো কেন মলিন তবে আজ তুমি নীলিমা!
রোজকার ভোরের আলোর মতো মুখখানি
দেখে দেখে জেগে উঠি সতেজ-সবুজ পল্লবের মতো
কেন তবে ওমুখ জুড়ে এতো মেঘের ঘনঘটা!
তুমি তো জানো, তোমার এতোটুকু মলিনতা
চৈত্র দুপুরের রোদের মতো আমাকে পোড়ায়,
শীতের নদীর মতো শুকিয়ে যায় বুকের জমিন
হেমন্তের হলুদ পাতার মতো মুচড়ে যায় মন।
কেন তবে বেদনার নীল মাখো তোমার গায়
কেন একটি নদীকে এমন শুকিয়ে যেতে দাও
কেন এই সবুজ ভূমিতে তপ্ত রোদের উত্তাপ ছড়াও?
তোমার আলোকিত মুখখানি এই গ্রহকে করে জোছনাময়
অন্ধকার জমিনে তোমার আলোতেই পথটুকু দেখতে পাই।
'এই আহ্বান, এই আয়োজন'
এই আহ্বান, ভেতর বাড়ি তোমার এই আয়োজন
রবীন্দ্রনাথের গীতিকবিতার মতো তোমার চলার ধরণ
অবিরাম বর্ষার পরে একটুকরো সোনালী রোদের মতো
নীলিমা! তোমার কাছে ছুটে যায় বেপরোয়া মন।
পলক ফেলোনাকো, তোমার সাজ ঘরের দরজায়
তুলোনা দেয়াল;
তোমার আয়নায় একটিবার দেখতে দাও প্রিয় মুখ
প্রিয় কিছু মুহুর্ত, প্রিয় কিছু প্রাপ্তিময় রঙনি সময়।
'অমন করে তাকিয়োনা নীলিমা!'
অমন করে তাকিয়োনা নীলিমা!
এই বুকের বরফ গলে তবে ধেয়ে আসবে সুনামি;
বেড়িবাঁধ উপচে আসা ভালোবাসার প্লাবনে
ডুবে যাবে তোমার বসত বাড়ি....
তোমার বুকের শীতল পরশ দাও
ভালোবাসায় বিভোর থাকি, জমে থাকি
বুকের বারান্দায়, ছুঁয়ে থাকি এই বুকের মাটি।