'নীলিমা! আমার চোখে'


ব্যাকুল বসে আছি এই নির্জনে তোমারি আশে
এই প্রকৃতির আহ্ববানে মন দোলে, মন ভরে না
কী জানি এক অসীম শূন্যতা ঘাপটি মেরে
তোমার আসন জুড়ে বসে আছে বড়ো পীড়াময়।


নীলিমা! আমার চোখে তুমিই প্রকৃতির অপার মহিমা
তুমি ছাড়া বড়ই মলিন এই সবুজ, এই নদী, এই ঝর্ণা
দূর থেকে ভেসে আসা রাখালের সুরও বড়ো বেসুরো
প্রকৃতির এই অবিচ্ছেদ্য তোমায় ছাড়া প্রকৃতি জমেনা।


'নীলিমা! এই মায়াটুকুর মর্মতা'


তোমার অাসা-যাওয়ার পথে বিদ্যুতের খুঁটির মতো
নিরব-নিথর একপাশে অপলক তাকিয়ে থাকি,
না দেই কোনো শিস্ কিংবা না বাজাই তুড়ি
কোনো উটকো বাক্য কভু দেইনা ছুঁড়ে,
তোমার চলার পথে হইনা কখনো বাঁধার কোনো হেতু,
কেবল একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আমি আরো দীর্ঘজীবী হই
প্রতিদিন সতেজ বেঁচে উঠি মাটি ফুঁড়ে কচিপাতার মতো।


যদি পারতাম, হয়তো আমি লাল মখমলের গালিচা
হতাম তোমার পথে পথে, যেন ধূলোর আঁচড় না পড়ে
প্রখর রৌদ্রে অদৃশ্য ছায়ার মতো হতাম মেঘমালা।
নীলিমা! এই মায়াটুকুর মর্মতা কখনো বোঝনি,
কালো চশমার আড়ালে নিজেকে লুকিয়েছো বারবার।


তবু পথ ছাড়িনি আমি, পথিক হবো বলে আজও
তোমার পথে সেই দাঁড়িয়ে আছি যেমন ছিলাম,
একটিবার মুখ তুলে তাকাও যদি
আর কিইবা থাকে আমার পাওয়ার বাকী!


'নীলিমা! তোমার শিশুসুলভ আচরণে'


নীলিমা! তোমার শিশুসুলভ আচরণে সবাই বিরক্ত
পরিবার, তোমার বন্ধুসমাজ এমন কী পরিচিত কেউ
অথচ আমি ওটুকুর জন্যই বারবার তোমার প্রেমে পড়ি
মাঝে মাঝে এই ন্যাকামিটুকুই পরম শুদ্ধ মনে হয়।


কোনো কিছুই একবারে তোমার হয়ে ওঠেনা
বারবার বহুবার এলেমেলাে করো আবার
আপন মনে খুঁটে খুঁটে করো পৃথিবীর শুদ্ধ কর্ম,
চলতে গিয়ে হাইহিলে হোঁচট খাও, যখন-তখন
কাঁধ থেকে খসে পড়ে ভেনেটি ব্যাগ
বুকের কাপড়টুকুও ঠিক পারো না আগলে রাখতে।


যখন মন চায় ঝাঁপ দাও পুকুরে, ইচ্ছে হলেই
খালি পায়ে হাঁটো দেয়ালে দেয়ালে....
একটি ঘাসফড়িং দেখেও মুগ্ধ হও
হাতে আকাশের চাঁদ পাবার মতো,
আবার পাতা দিয়ে বাঁশি বানিয়ে আপন মনে
তোলো তাতে মায়ার সুর।


অনেক বিরক্তের কারণ তুমি সবার কাছে
আর আমার কাছে তুমি পরম সাধনার মুগ্ধতা।


'নীলিমা! তোমার সৌন্দর্য‌্য'


মন বাতায়নে বুনেছি বাবুয়ের বাসা
দক্ষিণা হাওয়ায় দোলে নিপুণ স্বপ্নেরা
নীলিমা! তোমার সৌন্দর্য‌্য ছড়িয়েছে
জীবনের বাঁকে বাঁকে আমূল আদিগন্ত।


যেখানেই রাখি হাত যেন পুষ্প ফোটে
কেবল তুমি ছুঁয়েছ বলে সব গড়ল
কাঙ্খিত মৃগ বড়ই বাহারি বাসনাময়
এই অন্ধ এক তুমিই তারে করো আলোকময়।


'নীলিমা! তুমি থাকলেই'


এই তোমার কাছে থাকলেই অামার দারুণ সময়
সব সুরই যেন প্রাণের সুর হয়ে বাজে
সব গানই যেন অনেক প্রিয় গান,
এই সকালের রোদটুকুও যেন ভীষণ উপভোগ্য।


নীলিমা! তুমি থাকলেই পাতায় পাতায় শিশির
এই কানন জুড়ে চির সবুজের জয়ধ্বনি
এই আসা-যাওয়ার পথটুকু ভারী মসৃণ
এই বরফ হিমটুকুও বেজায় সহনীয়।


'নীলিমা! এই অসুখ'


নীলিমা! এই অসুখ আর কে সাড়াতে পারে বলো!
চিকিৎসা বিজ্ঞানও যেখানে মেনেছে হার
আলট্রাস্নো, ইসিজি, ইটিটি, রক্ত পরীক্ষা এতো এতো!
চিন্তিত চিকিৎসক-কপালে পড়েছে ভাঁজ
এমন কী এক অসুখে কাতর অামি?


স্বজনের উৎকণ্ঠায় ঘরময় পিনপতন নিরবতা
আপদমস্তক চঞ্চল এই আমি
কেন হঠাৎ নেমে এলো এমন গাঢ় অন্ধকার!


বৃথাই স্বজনের এই আহাজারি, এই উৎকণ্ঠা
এই ছোটাছুটি, হাসপাতাল, ক্লিনিক
হন্তদন্ত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার।


স্বজনদের তো নেই জানা
আমার সুস্থতা কেবল তোমার কাছেই গচ্ছিত,
কেবল একটি বার তুমি এই হাত ছুঁয়ে দিলে
ফের আমি পুনঃজন্ম পেতে পারি
ফের পেতে পারি তাদের তৃপ্তিময় জীবন।