"নীলিমা! এমন আলসে বরিষণে"


এই ফাগুনে এমন শ্রাবণের বৃষ্টি!
মৃদু উষ্ণতা ভেঙে আবার জেঁকে বসেছে শীত,
আবার খুঁজি সোয়েটার, তুলে রাখা কম্বল
রোদে শুকিয়ে রাখা কড়কড়ে লেপের খুলি ভাঁজ;
স্নান শেষে কাঁপি, খুঁজি এক চিলতে রোদ ঝুল বারান্দায়।


নীলিমা! এমন আলসে বরিষণে রোদ কোথায় পাই!
তোমার বারান্দায় ফুলের টবে জমেছে পানি
তবু পানি দেবার অজুহাতে আসো বারবার,
ভেজা কাপড় শুকানো দেখার ভানে
ক্ষনে ক্ষনে বারান্দায় দাও উঁকি।


আমার বারান্দায় আমি রোদ খুঁজি এই বরষায়।



"নীলিমা! তোমার হাতের জাদু"


নীলিমা! তোমার কাননের ফুল জানে
তোমার হাতের জাদু, তোমার স্পর্শের গভীরতা;
ওফুলের দিকে তাকিয়েই বলে দিতে পারি
একবার তুমি ছুঁলে পরে কী হয়, কী উর্বরতা
ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায়, মুকুলে-মুকুলে।


যেখানেই তুমি রেখেছ হাত, ফুটেছে গোলাপ
ফুটেছে জুঁই, চামেলি, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ;
মরতে বসা গাঁদা গাছেও তোমার স্পর্শের পরে
গাছময় ফুটেছে হলুদ গাঁদা, একটি দুটি ফুল ধরা
অপরাজিতা গাছও ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে।


নীলিমা! একটিবার যদি ওহাতে আমায় ছুঁয়ে দিতে
পৃথিবীতে আমিও হতে পারতাম সুন্দর কোনো ফুল।



"নীলিমা! কেবল স্বস্তিটুকুই"


জাগতিক যাতনা মহা আয়োজনে ঘিরে থাকে
আমার আঙিনা, আমার চৌহদ্দি
যেথায় যেথায় আমার পদচিহ্ন পায়
কেবল কাঁটা বিছায় নিপুণ কারুকার্যময়,
এই কাঁটা ভেঙ্গেই রোজ হাঁটি, কাজে যাই।
পৃথিবী বড়ই কণ্টকময়, খুব সামান্যেই পায় মধু
অতি অল্প লোকের কাননে ফোটে বাসনার ফুল,
যশ-খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি আরো নগন্য ভারি।


নীলিমা! কেবল স্বস্তিটুকুই আমার ভীষণ লোভনীয়;
ওসব চাইনা কিছুই, যশ-খ্যাতি কিংবা প্রতিপত্তি
আমি তো হাঁটতেই পারি মাইলের পর মাইল,
তোমার পূর্ণতাটুকুর জন্য ছুটতে পারি ঝড়ের বেগে।
আমার জন্য স্বস্তিটুকু রেখো, বাকী সব তোমার জন্য রেখ দাও।



"নীলিমা! একটিবার কাছে দৃষ্টি দাও"


এইদিকে দ্যাখো, একটিবার কাছে দৃষ্টি দাও;
অতদূরে উঁচু ঘাড়ে কী এমন দেখছ নীলিমা!
পায়ের কাছেই তোমার পড়ে আছে রাজ্যের সুখ
এতো আনন্দ, কোলাহাল, এতো স্নিগ্ধতা,
এতো এতো পুলক, প্রত্যাশিত না পাওয়া।


অদূরে মরীচীকার হাতছানিতে ডুবো না
কাছের শুকনো পাতাটুকুও কুড়িয়ে নাও,
ছন্দ পাবে তাতে, পাবে অস্তিত্বের ছায়া।


হাত বাড়ালেই পেতে পারো ভোরের শিশির
রাশি রাশি গাঁদা, গন্ধরাজ, কঁচি ঘাসের ছোঁয়া.
পেতে পারো মসৃণ দুপুর, স্নিগ্ধ বিকেল
তাপদাহে পেতে পারো দক্ষিণা হিমেল হাওয়া।


তোমার হাতের কাছেই রয়েছে অসীম স্বর্গ
একবার এইদিকে দ্যাখো, একবার হাতদুটাে বাড়াও।



"নীলিমা! একটি বার্তা"


তোমার জন্য হই চিন্তিত
বৃষ্টিপূর্ব আকাশের মতো রই থমথমে
ভাটা শেষে ফের জোয়ার আসা গুমোট নদীর মতো স্তব্ধ
বানের জলে ভেসে যাওয়া সর্বস্ব হারার মতো
অগ্নিকাণ্ডে শেষ সম্বল ছাই হয়ে যাওয়া দৃশ্য
অসহায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা মানুষের মতো।


নীলিমা! একটি বার্তা তো দেয়া যেত অনন্ত।
বাতাসে পেতে আছি কান, পৃথিবীর সব শব্দ
কানের কাছে হাতুড়ির মতো লাগে
কেবল তোমার একটি বার্তা পাবো বলে
মহাশূন‌্যে বাড়িয়ে আছি শ্রবণ ইন্দ্রীয়,
পিনপতনের আওয়াজ বিকট লাগে কানে
কেবল তোমার কোনো বার্তা আসেনি আজও।