'নীলিমা! কেমন ছিলে এতোটা দিন'


কেমন ছিলে এতোটা দিন, আশার ফুল
আমার বিরহী বকুল
ভোরের সোনালী রোদে খুঁজে তোমায় নীলিমা!
গোধুলী ধোঁয়ায় প্রাণ আকুল।


তোমার নোলক ঝরা স্নিগ্ধ সুখে
কেন ছিল মেঘের উঁকি ঝুঁকি?
কেন বৃষ্টির এতো অয়োজন শেষে
অনন্ত খরার এই নিপুণ ফাঁকি।


নীলিমা! সন্ধ্যার আকাশে
আলোকময় নক্ষত্রের মতো জেগে থাকো,
পৃথিবীর একান্ত উপগ্রহের মতো
তোমার বুকে আগলে রাখো।


'এই চৈত্র সন্ধ্যায়'


এই চৈত্র সন্ধ্যায় নীলিমা তুমি নিয়ে এলে শীতের ভোর
প্রচণ্ড ঘামের মধ্যে আমি হিম হতে থাকি
জমে যেতে থাকি ডিপ ফ্রিজে রাখা জলের মতো....


চারিদিক থমথমে, এক আঁজল হাওয়ার সন্ধান নেই
ফিরবার পথটুকুও ধোঁয়াটে, ধুলোমলিন
কোটি মানুষের এই শহরে ঝুম বারিধারার মতো
সমুখে দাঁড়ালে তুমি.....


'এতো আপত্তি কেন নীলিমা!'


তোমার সবকিছুতেই এতো আপত্তি কেন নীলিমা!
ভালোবাসার মানুষটিকে পুরোটা বিলাও।
যে মানুষটি তোমার জন্য কোটি কোটি মাইল হাঁটল
পাড়ি দিল তপ্ত বালুময় মরুভূমি;
একবার তোমার জন্য জেগেছিল, তারপর
আজ অব্দি নির্ঘুম সত্ত্বা-অক্লান্ত নিবিড়;
তার জন্য কেন এতো সব অজুহাত
কেন এতো তাচ্ছিল্য, কেন গুটিয়ে রাখো হাত?


একজন তোমার জন্য এই মরুভূমিতে
বয়ে আনল শীতল ঝর্ণাধারা, মরা গাঙে
বয়ে আনলো বর্ষার বাণের মতো স্রোতধারা,
তোমার তপ্তময় জীবনে হলো অশোকবৃক্ষের ছায়া।
তার জন্য কিসের এতো হিসেব তোমার?
এতো অহেতুক কৌতুহলে কেন তারে ডুবাও?
তোমার একটি ইচ্ছের কাছে যার উৎসর্গ বাকীটা জীবন
কেন তারে এতোটা পোড়াও? মুহূর্তেই কেন
শিরায় শিরায় বিঁষ ছড়িয়ে দাও?


'মন ভালো নেই'


মন ভালো নেই। কোটি কারণে
মানুষের মনে বাধে বেহায়া অসুখ।
কবির এ কী অসুখ, মসৃণ দুঃখ?
জানালার গ্রীল গলে আসা শূন্য হাওয়া
এক মরুভূমি বার্তা দিয়ে গেল-
নীলিমা ভালো নেই!


কবিতার চরণে চরণে গাঁথা বিরহী বর্ণ
মন ভালো নেই, আজ কিছু ভালো নেই।
কলম কাঁপে কবির, হস্তাক্ষরের করুণ নিনাদ,
তোমার মনের অসুখ থামায় গন্তব্য।
মাকড়সার জালে আটকে পড়া ঘাসফড়িং
ডানা ঝাপটায়, দেয়ালে হাঁটা টিকটিকিটা
মলিন মুখো।
নীলিমা! তুমি ভালো নেই তাই কিছু ভালো নেই।


'নীলিমা! আরো বেশি পুলক চাই'


এই ছোটাছুটি, এই কোলাহল
এই যান্ত্রিকতা, এই মলিনতা
যাপিত জীবনে এই এতোসব অন্তরায়;
কেবল তোমার কাছে এলেই
দুদণ্ড শান্তি পাই।
নীলিমা! আরো বেশি পুলক চাই
খোপা খুলে দাও,
সুখের বারান্দায় মেলে ধরো বেণী
আমি বেয়ে বেয়ে উঠে যাই তোমার তীর্থে।


'পদ্মের মতো ফুটে আছো নীলিমা!'


দিগন্ত ছোঁয়া জলের বুকে
পদ্মের মতো ফুটে আছো নীলিমা!
হাওয়ায় দোলা পাঁপড়ির মতো দুটি ঠোঁট
পথ থামায় পথিকের, গন্তব্য হারায়।
আমিতো জলের বুকেই দিয়েছি ঝাঁপ
ডুব-সাঁতার খেয়ে খেয়ে ক্রমান্বয়ে
পদ্মফুলের দিকেই ছুট...


বাতাসে মৃদ্যু জলের দোলায় দেহ দোলে
দুলে ওঠে তোমার শ্রেষ্ঠ সম্বল,
জলের বুকে আছি তবু পুড়ি অগ্নিতে
কেবল একটিবার ধরা দাও!
তোমার পাঁপড়ি ছুয়ে পুলকিত হবো
বুকের ভাঁজে নেভাবো অগ্নি আমার।


'নীলিমা! রাতে ঝরা শিশিরের মতো'


নীলিমা! রাতে ঝরা শিশিরের মতো সতেজ করো আমায়
দিবসের রোদে পুড়ে কঁচি ডগার মতো নুয়ে পড়েছি,
মাটির দিকে ঝুঁকে পড়া এই কঁচি লতাকে টেনে তোলো
আকাশের দিকে মুখ করে দাও, দিগন্তে বাড়িয়ে ধরো দৃষ্টি।


জাগতিক বিষবাষ্পে শিশিরের বাড়ি তুষার হইয়োনা
কিছুটা বর্ষণ হও, না হয় আমার জন্যই নেমে আসো,
তোমার শিশিরে রয়েছে প্রাণ, ঘুরে দাঁড়ানোর জাদুমন্ত্র।


'নীলিমা! সব ব্যস্ততাকে'


আরো কিছুক্ষণ থাকো, পাশাপাশি হাঁটি
অগোচরে হাত ছুঁয়ে যাক তোমার হাতে।
আরো কিছুক্ষণ এমন ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকি
বাতাসে তোমার চুল এসে পড়ুক এই গায়
একবার ছুঁয়ে দেখি, একবার সুবাস নেই গভীর করে।


নীলিমা! সব ব্যস্ততাকে দাও শীতকালীন ছুটি
এই উদ্যানে মিষ্টি বিকেলে আরো কিছুক্ষণ থাকি,
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, রাতের গহীন এবং তারও পর..
দুজনে যাপন করি নিরঙ্কুশ হিম সময়।
রাতে নেমে আসা শিশিরের চাদর নিচে
আমি খুঁজে নেব তোমার উষ্ণতা।
আজ কোনো কাজ রেখ না,
ভুল করেও টেনে এনো না ব্যস্ততা।


                            =০০০=