আমি কালো মেয়ে
সুদীপ সিনহা
আমি এক কালো মেয়ে
ছোটবেলা থেকে আবর্জনার স্তুপের মতো।
কালো আমি এটাই গভীর বুকের ক্ষত।
বাঁকুড়া জেলার ছোট্ট গেরাম
জনম আমার , শাল পলাশের
লাল মাটিতে ছোট্ট গেরাম।
সেই সেবারে সেদিন যখন বন্যা হলো
ভাইটা আমার হারিয়ে গেলো।
বললো সবাই,মাইয়া মানুষের
জীবনটা তো ,এক্কেবারে কই মাছের মতো
তাই তো বেঁচে,বিটা হলে হারিয়ে যেত।
অমনি ছিল জীবন আমার।
দেখতে কালো ছিলাম বটে
কিন্তু গড়ন ছিল ভালো,
টিকালো নাক ,ঝাঁকড়া চুল,পলাশ করতো আলো।
মায়ে আমায় আদর করতো ,সামলে রাখতো।
বাপে আমার ভালোই ছিল,
কাজ করতো ক্ষেত মজুরের।
বলতো মাইয়ার পড়ে লাভ।
তাড়াতাড়ি বিদায় লিবে
সংসারের কাজ শিখুক কেনে।
মায়ে বলতো কেনে ঐযে
রীনা, কমলি,ওই বাড়ির সব
মাইয়া গুলান ইস্কুলে যায়
যাকনা কেনে।
বিহার কথা পরে হবেক।
সেইটুকু মোর পড়ার পালা টেনে টুনেক।
একদিন দেখি হঠাৎ ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে।
বিয়ের আসর জানতে পারি
বাপে অনেক টাকা নিছে বড়ো লোকের কাছে,অমনি আমায় বেচে।
গর্জে উঠলো বুকের রক্ত আমার।
থানায় গিয়ে সটান আমি বিদ্রোহীনি।
তখন কি আর জানি, কাগজ বাবুরা
কোথা থেকে হাজির হবেক।
তুমিও ছিলে তাদের ভিড়ে।
সবাই আমার ধন্যি দিলেক।
আর তুমি যখন এগিয়ে এলে
সবাই তোমায় দেবতা বলেছিল।
গরিব একটা কালো কুচ্ছিত মেয়ে
দেবতা তুমি গ্রহণ করেছিলে।
কিন্তু আমি কি আর ভেতর থেকে জানি।
আমার জীবন ফেলনা কতখানি।
কত কোমর শিক্ষা দীক্ষা,বিয়ে এমএ পাস।
চারি দিকে কতো যে নাম জশ।
মাস্টার তুমি জনসেবক লোক।
বলেছিলাম তোমার ভালো হোক।
সংসারেতে প্রথম ঠিকই ছিলো।
আমার চোখে নতুন দিনের আলো।
বদলে গেল কদিন পরে দেখি।
ফর্সা হবার কিরিম আনছ একি।
রাতে দিনে বোঝাও ছলে বলে।
এই যুগেতে কালো হলেকি চলে।
একদিন তুমি হটাৎ বললে ডেকে
বেড়াতে যাই চলো ট্যাক্সি ডেকে।
নদীর ধারে থাকবো খানিক থামি।
তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি।
বিয়ের পরে একটি দিনের তরে,
বের হওনি আমায় সঙ্গে করে।
তারপরে সেই নদীর ধারে সে কি তোমার আদর।
আমার তখন আবেশ সপ্ত সাগর।
হঠাৎ একি ঠেলা দিলে আমায়
তলিয়ে গেলাম নদী কানায় কানায়।
তুমি দূরে হাতটি ঝেড়ে ঝুড়ে
পালিয়ে গেলে সাদা ট্যাক্সি চড়ে।
কিন্তু আমার মরণ তো নাই জানি।
কালো মেয়ে কুচ্ছিত মুখখানি।
সাঁতরে এসে বাঁচালো এক মজুর।
তোমার মতো শিক্ষিত নিয়ে প্রচুর।
কলিয়ারীর আনপড় এক জনা।
বিয়ে এমএ দূরের কথা ইস্কুলো দেখলো না।
আজকে আমি ষোলো আনায় দামি।
কালো মেয়ের হীরের মতো স্বামী।
-------সুতাহাটা-----বি এড কলেজ----