একদা এক বনে-
এক ছিলো সিংহ বন-অধিপতি!
বার্ধক্যে প্রবৃদ্ধ অবিচল-
জীর্ণ-শীর্ণ তনু বলহীন - হতবল।
ভোজনে যার নিত্য-নব্য শিকার -
আজি সে অবেলায় অনাহার।
এবে কাটিবে কত কাল! ভাবিছে বসে,
আহার জোগাতে অনাহার ঘুচাতে শৃগালের তল্লাশে-
পাঠালো বার্তা।
খবর পেয়ে শৃগাল পুচ্ছ তুলে পিঠে,
ঝড়ের বেগে ছুটে,
দীর্ঘশ্বাস ফেলে! পৌছালো এসে।
বললো -"হে পশুরাজ জরুরী তলব কিসে?"
পশুরাজ ক্ষীণ কন্ঠে শুধায় - " হে ধূর্ত
দিব্যি আছো খোশ হালে পশুরাজ অভুক্ত।
আজি ভুখারী অধিরাজ!
বলিতে পারে না পেটে খিদে মুখে লাজ,
অনুনয় করি রাজ ভুখারিরে দিতে আহার
ধরি আন মৃগ-শিকার।"


ধূর্ত শৃগাল মহারাজের আজ্ঞা পালনে,
হরিণের খুঁজে ছুটিলো অরণ্যে।
দিকে দিকে খুঁজে সহসা দেখিতে পায় দূরে,
একগোট হরিণী নৃত্যে আনন্দে খেলা করে।
দেখিয়া চতুর শৃগাল ধরিল ভান!
গাহিয়া আনন্দের গান।
গোট-এক হরিণী জিজ্ঞাসে-
"আজ কি হলো ভাই এতো খুশি কিসে? "
ধী-শৃগাল বলে-"বলিসনে ভাই কি বলিবো আর
পশুরাজ দিলেন আমায় বনের শাসন-ভার  
আমি হীনবল নগন্য অতি দূর্বল তবে-
কেমনে নিব রাজ্য-ভার অকুল ভেবে!
চিন্তাগম্য রূপে শৃগালের শঠ বাণী শুনে,-
"আমি যদি বন-অধিপতি হতাম"জাগে হরিণীর মনে।
মৃগ-লোভাতুর!
যবে প্রবল স্পৃহায় বিভোর-
"এতো ভাবনা কিসে-
গত্যন্তর হবে এসেছো যবে বন্ধু বেশে"
-হরিণ কহে।
শৃগাল খানিকক্ষণ চুপ রহে!
সুযোগ বুঝে নব ফন্দি আঁটে
ছোঁচালো মুখে উঠলো বলে-
"ওহে হরিণী-বন-সুন্দরী এসেছি তুমারে খুঁজে,
বন অধিপতি রূপে গো তুমাকেই সাজে।
জ্ঞানে বুদ্ধিতে তুমি সুমতি
বাহুতে তুমার মহাশক্তি"
শুনে শৃগালের শঠ-বাণী বুদ্ধ হরিণী হৃদ-হর্ষে  
উঠলো নেচে নিমিষে।


শৃগাল-মৃগ যুগল চলে রাজসদনে-
যেতে যেতে সহসা মৃগ বলে,- "মোর প্রাণ-ভয় জাগে মনে?"
ধূর্ত শিয়াল কৌশলে ভুলাতে বচন-গতি
বললো" প্রকাণ্ড অরণ্যে তুমি ভাবি-নৃপতি,
এসব মিছে ভাবনায় কেন হারাবে মনোরথগতি?
মিছে শঙ্কায় কেন ন্যাতপেতে?
(ভয় নেই পশুরাজের সম্মুখে রেখো ইন্দ্রদ্বয় পেতে)
এসেছে রাজদ্বারে ধীর-বেগে,
হরিণীরে হেরে পশুরাজের ক্ষিপ্র হিংস্রতা উঠলো জেগে।
ধৈর্য হারালো হিংস্র মন!
মারলো থাবা ঘাড়ে করলো'না কাল-ক্ষেপণ।
ভাগ্যিস! হিংস্র থাবা ফসকে বুদ্ধ হরিণী বাঁচে
বাঁচাতে নিজ-প্রাণ তিড়-বিড়ে,
জোর কদম উল্লম্ফনে দৌড়ে।


পশুরাজের ভয়ংকর ক্ষুধাতুর রূপ দেখে-
হরিণীর অন্বেষণে-
পুনর্বার শৃগাল চলে দিকে দিকে বনের গহীনে।
অকস্মাৎ হরিণীর সম্মুখে!
রোষকষায়িত হরিণীর ক্রোধের প্রখর তেজ বুকে -
জোর হাঁকে বলে-" আমারে করিতে ভক্ষণ
এই বুঝি ছিল তোর মিথ্যা আয়োজন "
শৃগাল হকচকিয়ে বলে-
"ওরে বদ্ধু! এতো বড় বন যে করিবে শাসন,
সাহস পরখে তারে মহারাজের এইটুকু প্রহসন।"
ভুল বুঝলে বন্ধু! এমন কথার ছলে,
ফের বুদ্ধু হরিণীর সব ভুলে-
আসলো পুনর্বার -
এমনি এক হিংস্র থাবায় ভাঙলো হরিণীর ঘাড়।
লুটিয়ে পড়লো মৃগ-তাজা-প্রাণ-
রক্ত- মাংস ভোজনে ব্যগ্র পশুরাজ,
চুপিসারে মগজ ভোজে শিয়াল ফন্দিবাজ।
মগজের খুঁজে জিজ্ঞাসে শৃগালের কাছে?
শৃগাল বলে প্রত্যুত্তরে-
"মগজ থাকেলে কি দ্বিবার আসতো মরিবার তরে"।
শৃগাল চলে নিজ গৃহে- মৃদু হেসে চেয়ে পশ্চাতে
বলে-,"রাজা হও বাহুশক্ততে নয় ধীশক্তিতে -
ধীশক্তিরা ভোজে মগজ-বাছা,
আর বুদ্ধুরা খায় সব হাঁড়ি-চাঁচা।"